ছয়ের সঙ্গে এবার আরও চার অফিসারের যোগ, সিবিআই-এর কড়া জেরার সামনে রাজীব কুমার
সারদা চিটফাণ্ডের তদন্তে রাজীব কুমারকে জেরার বাণে বিদ্ধ করে চলেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে এমনই খবর।
সারদা চিটফাণ্ডের তদন্তে রাজীব কুমারকে জেরার বাণে বিদ্ধ করে চলেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে এমনই খবর। সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারির এমন কোনও দিক এখন পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়নি যার হাত থেকে রেহাই পারেন রাজীব কুমার। একই প্রশ্ন-কে নানাভাবে ঘুরিয়ে একাধিক অফিসার রাজীব কুমারের সামনে পেশ করছেন। প্রত্যেক জন অফিসার এই প্রশ্নগুলিকে এমনভাবে আত্মস্থ করেছেন যে কোনো কারোর পক্ষে উত্তরের চালাকি করা প্রায় অসম্ভব। ২২টি মুখ্য প্রশ্নকে চারটি সেটে ভাগ করে রাজীব কুমারের জন্য তৈরি করেছে সিবিআই। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে আরও কিছু শাখা প্রশ্ন। যা নিজেদের মতো করে উত্তরের প্রেক্ষিতে তৎক্ষণাৎ সাজিয়ে নিচ্ছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে রাজীব কুমারকে একটানা প্রশ্ন করার পর প্রশ্নের গতি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ এই গতি কমানোর পর ফের আচমকাই প্রশ্ন জিজ্ঞাসার গতি বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, সিবিআই-এর ৬ অফিসার শনিবার সকাল থেকেই রাজীব কুমারকে জেরা করছেন। বিকেলে আরও ৪ অফিসার এতে অংশ নিয়েছেন। এই চার অফিসার এদিন বিকেলেই শিলঙে পৌঁছেছেন। রবিবার আরও ২ অফিসার আসছেন। এরপর আসার কথা আরও তিন অফিসারের। এদের মধ্যে রয়েছেন জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তব।
প্রত্যেক অফিসার শিলঙে পা রাখার আগে কলকাতায় সিবিআই দফতরে বসে জেরার প্রতিটি জিনিস পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে সাজিয়ে নিচ্ছেন বলে খবর। এদিন বেলা ১১টা বাজার দশ মিনিট আগে শিলঙের অকল্যান্ড মোড়ের সিবিআই দফতরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন রাজীব কুমার। এরপর ১১.১৫টা থেকে তাঁকে জেরা করা শুরু হয়েছে।
সারদাকাণ্ড থেকে রোজভ্যালি সমস্ত চিটফান্ডে সিট-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়েছে রাজীব কুমারের সামনে। দুর্গাপুরে রোজভ্যালির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলেও সিট তা কেন গোপন করেছিল এমন প্রশ্নও নাকি রাজীব কুমারকে করেছেন সিবিআই অফিসাররা। অধিকাংশ প্রশ্নই হয় হিন্দিতে না হলে ইংরাজিতে করা হচ্ছে।
এদিন প্রথম ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চিটফান্ডকাণ্ডে রাজীব কুমারের তদন্তকর্তা হিসাবে ভূমিকা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। লাঞ্চ ব্রেকের আগে সিবিআই অফিসাররা আস্তে আস্তে চেপে ধরতে শুরু করেন। জানা গিয়েছে রাজীব কুমার উত্তরের গতি ধীরে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কথার মারপ্যাঁচের গোলকধাঁধায় বারাবার ঘোরাচ্ছেন সিবিআই অফিসারদের।
লাঞ্চ ব্রেকের সময়ই রাজীব কুমার নাকি বুঝতে পেরেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে জেরার তীব্রতা আরও বাড়বে। তাই গেস্ট হাউসে ফিরে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও রাজীব কুমার তা করেননি। বরং সিবিআই দফতরে থেকেই লাঞ্চ ব্রেক নেন। এই লাঞ্চ বিরতিতে তাঁকে সঙ্গ দিতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন দুই সহকারী পুলিশ অফিসার জাভেদ শামিম ও মুরলিধর শর্মা এবং ব্যক্তিগত আইনজীবী বিশ্বরূপ দে। সিবিআই দফতরের রিসেপশনে বসেই একটা হালকা আলোচনা সেরে নিতেও নাকি দেখা যায় রাজীব কুমারকে। তবে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার নাকি বেশি কথা বলেননি। বরং তাঁকে একটু চুপচাপ থেকে কিছু ভেবে নেওয়াতেই নাকি বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে।
রাজীব কুমার একজন দুঁদে আইপিএস শুধু নন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ক্যাডারে তাঁর মতো বুদ্ধিমত্তার অফিসার নাকি অনেক কম আছেন। কলকাতা পুলিশের প্রথম এসটিএফ হেড তিনি ছিলেন। তাঁর ক্ষুরধার নেতৃত্বে এসটিএফ বহু সাফল্যের মুখ দেখেছে। সুতরাং, রাজীব কুমারকে জেরার সামনে ভাঙাটা যে সহজ নয় তা ভালো করেই জানে সিবিআই।
সূত্রের খবর রবিবারও সকাল ১০টা থেকে রাজীব কুমারকে জেরা করা হবে। সম্ভবত কুণাল ঘোষকে রবিবারই রাজীব কুমারের মুখোমুখি বসানো হতে পারে। এছাড়াও আরও কিছু ব্যক্তিকে আনা হচ্ছে যারা সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত। এদের মুখোমুখি বসানো হবে রাজীব কুমারকে।