পুলিশের গুলিতে নিহত ওয়াকিল রেশন আনতে বেরিয়েছিল, দাবি পরিবারের
সিএএ নিয়ে লখনউয়ের আমিনাবাদ এলাকায় বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ চলছিল। সেই বিক্ষোভ প্রতিহত করতে পুলিসকে গুলি চালাতে হয়। কিন্তু সেই গুলিতে গুরুতরভাবে আহত হন মহম্মদ ওয়াকিল (৩২)। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী শাবিনা বলেন, 'আমি বলেছিলাম রেশন নিয়ে আসার জন্য রেশন প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং এখানে কারফিউয়ের মতো পরিস্থিতি ছিল’। গত বছরের ৪ নভেম্বরই বিয়ে হয় ওয়াকিল ও শাবিনার।
ঠাকুরগঞ্জের দৌলতগঞ্জ এলাকায় ওয়াকিলের বাড়ির সামনে স্থানীয় মানুষ ভিড় করে রয়েছেন। ওয়াকিলের প্রতিবেশী আসলাম জানান, ওয়াকিল একজনের থেকে অটো ভাড়া করে চালাতেন। তাঁর বাবা সফরুদ্দিন রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন এবং তাঁদের পরিবার বহু বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করেন। ওয়াকিলের মা নাগমা জানান, তাঁর ছেলে প্রতিবাদে সামিল হতে যায়নি, বাইরে বেড়িয়েছিল রেশনের জিনিস ও ওষুধ কিনতে। কারফিউ জারি হয়েছে এরকম গুজব ওঠে তখন। চার ভাইবোনের মধ্যে ওয়াকিল বড় সন্তান ও তাঁর দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
ওয়াকিলের ১৮ বছরের ভাই শামিম বলেন, 'আমরা বিকেল পাঁচটার সময় জানতে পারি যে দাদাকে গুলি করা হয়েছে। আমরা জানিওনা কে গুলি করেছে। আমরা যখন হাসপাতালে গেলাম, আমাদের বলা হল দাদা মারা গিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখনও জানি না পুলিশ ও প্রশাসন কবর দেওয়ার আগে আদৌও দাদার দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে কিনা।’ মর্গের বাইরে ওয়াকিলের দেহ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁর বন্ধু সমীর খান। তিনি বলেন, 'কেউ আমাকে ফোন করেছিল এবং আমায় জিজ্ঞাসা করে যে আমি ওয়াকিল নামের কাউকে চিনি কিনা। তারপর সে আমায় জানায় যে ওয়াকিলকে কেজিএমইউ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই, কিন্তু চিকিৎসকরা জানান যে ওয়াকিল মারা গিয়েছে।’
ওয়াকিলের বাড়ি থেকে ৪ কিমি দূরেই কেজিএমইউ ট্রমা সেন্টার। সেখানে এক কিশোর সহ তিনজন নিজেরদের জীবনের সঙ্গে লড়ছেন। অচৈতন্য শামিমের কাছে বসে তার মা শাদিয়া কেঁদেই চলেছেন। তিনি ক্রমাগত বলছেন তাঁর ছেলে নিরীহ এবং ভুল সময়ে ভুল জায়গায় গিয়ে পড়েছিল। ১৮ বছরের শামিমের পেটে গুলি লেগেছে। যদিও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে পেট থেকে গুলি বের করার পরও তার বিপদ কাটেনি। শামিমের বাবা বলেন, 'বৃহস্পতিবার আমার ছেলে নির্মান সাইটে ছিল এবং বিকেল সাড়ে চারটের সময় শামিমের বস তাকে দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে বলে। সে বাড়িতেই ফিরছিল। বাড়ির আধ কিমি আগে শামিম দেখে যে পুলিশের একটা দল আসছে। অন্যদিক দিয়ে একটা বড় মিছিল আসছিল, শামিম দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু গুলি এসে তার পেটে লাগে। কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।’ ৪১ বছরের রাণি খাতুনও এই ঝামেলার মধ্যে পড়ে যান এবং পায়ে গুলি লাগে তাঁর। তিনিও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁরও অবস্থা ভালো নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।