সংঘের হিন্দু রাষ্ট্র নীতিকে বাস্তবায়িত করতেই আনা হয়েছে সিএএ, অভিযোগ বিজয়নের
ফের সিএএ নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। পিনারাই বিজয়ন রবিবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'এই নতুন আইন কেবলমাত্র ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার সংঘ পরিবারের উদ্দেশ্যকেই পরিপূর্ণ করে।'
ব্রিটিশদের পথে হেঁটে দেশকে ভাঙা হচ্ছে
তিনি বলেন, 'অতীতে ব্রিটিশরা ঔপনিবেশক ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে বিভিক্ত করার কাজ করত। এখনও সেই ভাবেই কাজ করছে দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি। ব্রিটিশদের মতোই কৌশল অবলম্বন করে তারা দেশকে ভাঙার কাজ করছে।'
মুম্বইতে চলা সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের প্রশংসা
মুম্বইতে চলা এনআরসি ও সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে মুম্বাইয়ের নাগরিকরা আমাদের সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে রক্ষার জন্যে যেভাবে পথে নেমেছে তা প্রশংসনীয়। ভারতে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য হিন্দুত্ববাদী উপাদানেরা যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল তার বিরোধিতা থেকে স্পষ্ট ভারত সিএএ গ্রহণ করবে না। আমি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ভারতীয় সংবিধান রক্ষায় মুম্বই শহর জুড়ে এই সংগ্রামের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি।'
সংবিধান অনুযায়ী কাজ করছে কেরল সরকার
এরপর তিনি বলেন, 'কেরল সরকার সংবিধান অনুযায়ী কাজ করছে। কেরলের মতো অন্যান্য রাজ্যও সংবিধানের মৌলিক ধারনার বিপরীত এই সিএএ-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। সিএএ মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং এটি বিভাজক। তাছাড়া এই আইনটি গভীরভাবে বৈষম্যমূলক।'
নতুন নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের শর্ত
নতুন নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের শর্ত, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের যেই লোকেরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। বিলটি লোকসভায় ৩১১-৮০ ব্যবধানে পাশ হয়। এরপর রাজ্যসভায় এটি পাশ হয় ১২৫-৮২ ব্যবধানে।
সিএএ বিরোধী প্রস্তাবনা পাশ কেরলে
দেশ জুড়ে বিতর্কের মধ্যেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের প্রস্তাব পাশ হয় কেরল বিধানসভায়। প্রস্তাবনার পক্ষে ভোট দিয়েছে শাসক এলডিএফ ও বিরোধী ইউডিএফ। কেরালা বিধানসভায় রয়েছেন মাত্র ১ জন বিজেপি বিধায়ক। একমাত্র তিনি প্রস্তাবনার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। এরপর কংগ্রেস শাসিত অমরিন্দর সিংয়ের পাঞ্জাব সরকারও বিধানসভায় নাগরিকত্ব আইন বিরোধী প্রস্তাবনা পাশ করায়। এরপর সিএএ বিরোধী প্রস্তাবনা পাশ হয় রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গেও।
সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ কেরল ও ছত্তিসগড় সরকার
সিএএ বিরোধী রেজোলইউশন পাশ করেই রাজ্যগুলি থেমে থাকছে না। সিএএকে বিভেদ সৃষ্টিকারী আইন আখ্যা দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেরল ও ছত্তিসগড় সরকার। নাগরিকত্ব আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে মামলা দায়ের করে কেরল সরকার। কেরল প্রথম রাজ্য যারা এই পদক্ষেপ নেয়। সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পরেই এই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে জমা পড়েছিল ৬০টি পৃথক আবেদন। তবে এই আইনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে শীর্ষ আদালত।