ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে মোদীর স্বপ্নপূরণ প্রসঙ্গে কী বললেন প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর?
ভারতের পক্ষে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া এখন একপ্রকার অসম্ভব। এমনই মত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর সি রঙ্গরাজনের। এই আশঙ্কার পিছনে যুক্তি খাড়া করতে রঙ্গরাজন ভারতে প্রবৃদ্ধি হারের ক্রমাগত নিম্নগামী গ্রাফের তথ্য তুলে ধরেন। ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ। সেই হার চলতি আর্থিক বর্ষের শুরুতে কমে দাঁড়ায় ৬.৮ শতাংশে।

চলতি আর্থিক বর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি কমে ৫ শাতংশে দাঁড়ায়। গত ৬ বছরে যা সব থেকে কম। দ্বিতীয় ত্রৌমাসিকে সেই প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে ৪.৩ শতাংশে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রঙ্গরাজন বলেন, "বর্তমানে আমাদের দেশের অর্থনীতি ২.৭ ট্রিলিয়নের কাছাকাছি। পরবর্তী পাঁচ বছরে সেই সংখ্যাটা আমরা প্রায় দ্বিদুণ করার কথা বলছি। যা করতে গেলে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার থাকা উচিত অন্তত পক্ষে ৯ শতাংশ। তবে এই পরিস্থিতিতে আমার মনে হয় না আমরা কোনও ভআবে সেই সংখ্যা ছুঁতে পারব।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের দেশের অর্থনীতি এই বছর একটু খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। পরবর্তী বছরে সেই প্রবৃদ্ধির হার হয়ত আবার ৭ শতাংশ ছোঁবে। যদি আমাদের দেশ ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে পরিণতও হয়, তা হলেও দেশবাসীর মাথআপিছু আয় ১৮০০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬০০ ডলারে। সেই ক্ষেত্রেও আমাদের দেশ নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের ব্র্যাকেটেই পড়বে। উন্নত দেশের সংজ্ঞা হল যেখানে লোকের মাথা পিছু আয় ১২০০০ ডলার হয়। বর্তমান গতিতে সেখানে পৌঁছাতে আমাদের ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হারে ২২ বছর লাগবে।"
কয়েক দিন আগেই আইএমএফ ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে ৯০ বেসিক পয়েন্ট কমিয়ে ৬.১ শতাংশ করেছে। এটি সাত মাসে দ্বিতীয় বার হল, যখন দেসের অর্থনীতির বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাসের গ্রাফ নিম্নগামী। এর জেরে ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে মোট ১২০ বেস পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে গত সাত মাসে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বলে, ভারত তাদের দেশের অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রে ভালো কাজ করেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদের বৃদ্ধির হার বজায় রাখা সহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে দেশের অর্থনীতিতে, সেগুলির সমাধান করা দরকার।
এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে গত দুই বছরে দেশের প্রায় সব ব্যাঙ্কের আর্থিক বৃদ্ধি কমেছে। ব্যাঙ্কের উপর ঋণের বোঝা চেপেছে প্রায় ৮.৮ শতাংশ। যা ভয়ঙ্কর রকমের বেশি বলে দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি ঘাটতি ধেখা দিয়েছে মূলধনের ক্ষেত্রে। এদিকে অনাদায়ী ঋণ ফেরানো তো দূরের কথা এখনও একাধিক ব্যাঙ্কে প্রায় ৩৭,০০০ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ জমে গিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির হাল ফেরাতে প্রায় ৫ বার রেপোরেট কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তারপরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ছে না।