১.৮২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাস পরিষেবা, অসহায় কাশ্মীরিদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসলেন দুই ভাই
১.৮২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাস পরিষেবা, অসহায় কাশ্মীরিদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসলেন দুই ভাই
দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে বহু পরিযায়ী শ্রমিক দেশের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন। ঠিকঠাক মতো সরকারি বন্দোবস্ত না মেলার কারণে অনেকেই তাঁরা হেঁটেই বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছেন। ঠিক সেই সময়ই ত্রাতা হয়ে কাশ্মীরি শ্রমিকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের পুট্টাপার্থির দুই ভাই 'রাম ও লক্ষ্মণ’। তাঁরা দু’জনে মিলে কাশ্মীরের ৮০ জন শ্রমিকের একটি দলকে লকডাউনের সময় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যখন ওই শ্রমিকদের কাছে সব আশা ফুরিয়ে গিয়েছিল।
লক্ষাধিক টাকা দিলে তবেই বাস পরিষেবা মিলবে
খাবার ও অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে গত দু'সপ্তাহ এই শ্রমিকদের কাছে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল, যাঁরা বাড়ি থেকে কাজের জন্য এসে এখানে আটকে পড়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকদের কিছুদিন আগে জানিয়েছিল যে তারা হায়দরাবাদ থেকে ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে কিন্তু তাঁদের ৪৩৬ কিমি যেতে হবে নিজেদের ব্যবস্থা করে। হায়দরাবাদ থেকে পুট্টাপার্থির দুরত্ব ৪৩৬ কিমি। শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বাসের বন্দোবস্ত করলেও তাঁদের জানানো হয় যে ১.৮২ লক্ষ টাকা দিলে তবে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে।
স্থানীয় প্রশাসন–বিধায়ক সহায়তা করেনি
তাঁদের দুর্দশায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী ও যমজ ভাই রাম ও লক্ষ্মণ রাও স্থানীয় প্রশাসন ও বিধায়কদের কাছে তাঁদের মামলাটি জানান। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য না পেয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে নিজেরাই শ্রমিকদের সহায়তা করবেন এবং কাশ্মিরী পরিবারগুলি যাতে বাড়িতে যেতে পারেন তার জন্য তাঁদের অর্থ ঋণ হিসাবে দেন ওই দুই ব্যবসায়ী।
১.৮২ লক্ষ টাকা ঋণ কাশ্মীরিদের
ওই দুই ব্যবসায়ী ভাইয়ের বেশ কিছু সোনার দোকান, রিয়্যাল এস্টেট এবং পেট্রোল পাম্প রয়েছে অন্ধ্র প্রদেশে। লক্ষ্মণ বলেন, ‘আমরা ওইসব কাশ্মিরী পরিবারদের চিনি যাঁরা ২০ বছর ধরে আমাদের এলাকায় রয়েছেন। তাঁরা আমাদের ভাই।' তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর মেলে না। আমরা তাই ওই পরিবারদের ১.৮২ লক্ষ টাকা ঋণ দিই যাতে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেন।'
কাশ্মিরী পরিবারগুলি এই সাহায্য পেয়ে আপ্লুত। কাশ্মিরী শাল ও পোশাক বিক্রেতা শেখ তারিক বলেন, ‘রাও ভাইয়েরা আমাদের সহায়তা না করা পর্যন্ত আমরা অভাগা হয়ে ছিলাম। এবার আমরা বাড়ি যেতে পারব বলে আশা করছি।' তারিক বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করে বলা হয়েছিল যে শ্রমিকরা বিনামূল্যে বাড়ি যেতে পারবে। আমাদের তিনটে বাসের জন্য প্রত্যেককে ৬৫ হাজার করে দিতে বলা হয়, আমাদের স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এবং ফাঁকা বাস নিয়ে আসার জন্য।'
কাশ্মীরিরা আশ্বাস দিয়েছেন ঋণ শোধ করার
সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য তিনটে বাসে করে কাশ্মীরিদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও বাস ভাড়া অতিরিক্ত বেশি ছিল। রাও ভাইরা কর্তৃপক্ষকে ৩০ হাজার টাকা কম করে নিতে বলেন কাশ্মীরিদের কাছ থেকে। তারিক বলেন, ‘শঞরমিকরা এই অর্থ ঋণ হিসাবে নিয়েছেন এবং রাও ভাইয়ের এই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁরা বাড়ির সবকিছু বিক্রি করে দিতেও পারেন।' লক্ষ্মণ এই অর্থ তাঁরই পেট্রোল পাম্প থেকে ঋণ নেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এই অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু যদি তাঁরা এটা শোধ করতে নাও পারেন আমরা ভেবেছি এটা সামাজিক পরিষেবায় খরচ করেছি। ২০১৪ সাল থেকে আমি মোট চারবার জম্মু-কাশ্মীরে গিয়েছি এবং আমি সেখানে দারুণ আতিথ্য পেয়েছি।'
১২ ঘণ্টার কার্ফুর ঝক্কি উড়িয়ে মমতা দিলেন নতুন গাইডলাইন! লকডাউনে এবার যে নিয়মে