রাজস্থানে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নামলেন মায়াবতী! পাইলট-গেহলট লড়াইয়ে সাংবিধানিক মারপ্যাঁচের বিশদ জানুন
সচিনের বিদ্রোহ কি দলবিরোধী? এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে, বল গড়িয়েছে হাইকোর্টের গণ্ডি পেরিয়ে সুপ্রিমকোর্টে। এরই মধ্যে পাইলটের আইনজীবীর বক্তব্য, কোনও মুখ্যমন্ত্রীর অপসারণের দাবি জানানোর অর্থ কখনই এটা হতে পারে না যে অপরজন দল ছাড়তে চাইছেন বা দল বিরোধী। সচিন নিজেই বলেছেন যে তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন না। তবে তিনি তাঁর মতামত জানাতে পিছপা হবেন না। সচিন কংগ্রেসেই থাকতে চান। তবে তিনি চান যে অশোক গেহলটকে সরানো হোক। এটা কোন দিক দিয়ে দলবিরোধী?
রাজস্থানের ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন বিএসপি নেত্রী
এদিকে এরই মাঝে রাজস্থানের ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। পাইলট-গেহলট রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাঝেই বিএসপি হুইপ জারি করে বিধায়কদের কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিতে বলেছে। যদিও রাজস্থানে বিএসপির ৬ জন বিধায়কই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। আর এই বিষয় নিয়েই কংগ্রেসের উপরে খাপ্পা মায়াবতী। এই বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে গিয়েছে বিএসপি।
গেহলটকে চিন্তায় ফেলেছেন মায়াবতী
এতদিন সচিন পাইলট এবং তাঁর অনুগামীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট৷ এবার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়ে আচমকাই দল বদল করে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া ছয় বিধায়কের উপর অধিকার দাবি করে হাইকোর্টে মামলা করলেন বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী৷ যা রাজস্থানের রাজনৈতিক নাটকে নতুন মোড় এনে দিয়েছে৷
বিএসপি-র ছয় বিধয়কের কংগ্রেসে যোগ
রাজস্থানে বিধানসভা ভোটের পর বিএসপি-র ছয় বিধায়ককে দলে টেনেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট৷ গত বছর সেপ্টেম্বরে দল বদল করার আবেদন জমা করতেই তা সাদরে গ্রহণ করেছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ সি পি জোশী৷ যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন মায়াবতী৷ বিধায়করা দলবদল করার পরই গেহলটের বিরুদ্ধে ছুরি মারার অভিযোগ করেছিলেন তিনি৷ এবার সুযোগ পেয়েই পাল্টা গেহলটকে চাপে ফেলে দিলেন মায়াবতী৷ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বিএসপি বিধায়কদের দল ভাঙিয়ে কংগ্রেসে নিয়ে এসেছিলেন গেহলট৷ এর আগের বার মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ও একই কাজ করেছিলেন তিনি৷
গেহলটের কপালে ভাঁজ
বিএসপি-র এই বিধায়কদের সদস্য পদ খারিজ করার দাবি জানিয়ে প্রথমে বিজেপি হাইকোর্টে মামলা করেছিলে৷ তাদের অভিযোগ ছিল, সচিন পাইলট এবং তাঁর অনুগামী ১৮ বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ করার বিষয়টি নিয়ে রাজস্থান বিধানসভার অধ্যক্ষ যে তৎপরতা দেখিয়েছেন, তা তিনি বিএসপি বিধায়কদের ক্ষেত্রে দেখাননি৷ অথচ ওই ৬ বিধায়ক কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে স্পিকারের কাছে একই দাবি জানিয়েছিল বিএসপি-ও৷
সংবিধানের প্যাঁচ
আসলে অ্যান্টি ডিফেকশন আইনের অধীনে দলত্যাগ করলে একজন বিধায়কের পদ খারিজ হয়। আবার দলবিরোধী কাজেও পদ বাতিল হয়। এক্ষেত্রে বিএসপি বিধায়করা যদি কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দেয় তবে বিএসপি এই বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজের জন্য আরও জোরালো দাবি জানাতে পারবে। তবে আবার দলেক এক তৃতীয়াংশ সদস্য যদি দল ছাড়ে তবে অ্যান্টি ডিফেকশন আইন লাগু হয় না। সংবিধানের এই ঘোর প্যআঁচের মধ্যেই এখন চূড়ান্ত উত্তাপ রাজস্থানে।
পাইলট-কংগ্রেস দ্বন্দ্ব
সচিন পাইলট ও ১৮ জন কংগ্রেস বিধায়কের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে নোটিস পাঠিয়েছিলেন রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার। স্পিকারের সেই নোটিসের বিরোধিতা করে রাজস্থান হাইকোর্টে যান প্রাক্তন সচিন পাইলট ও ১৮ জন বিধায়ক। এরপরই সুপ্রিম কোর্টে যান অধ্যক্ষ। তাঁর বক্তব্য, বিধানসভার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না হাইকোর্ট। তবে তাঁর আর্জি খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে রাজস্থান হাইকোর্ট। সেই মতো শুক্রবার সকালে শুনানি শুরু হয়। আর তাতে জয় হয় সচিনের।
সচিনকে সরাতে গেহলটের চাল
এরপরই সচিনকে দল থেকে সরানোর লক্ষ্যে বিধানসভা অধিবেশন ডাকার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন অশোক গেহলট। কারণ সেখানে আস্থা ভোট হলে হুইপের নির্দেশে পাইলট পন্থীদের অশোক গেহলটকেই ভোট দিতে হবে। আর তা না করলে বা ভাটোভুটি থেকে অনুপস্থিত থাকলে দলবিরোধী কাজের দায়ে তাঁদের বহিষ্কার করার ক্ষমতা থাকবে স্পিকারের হাতে। আর সেই শেষ চালটি নিখুঁত ভাবে দিতে গিয়ে একাধিক বেগ পেতে হচ্ছে গেহলটকে।