দিল্লিতে হিংসার শিকার বিএসএফ জওয়ানও, পাকিস্তানি আখ্যা দিয়ে জ্বালানো হল বাড়ি!
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বসবাসকারী বহু মুসলিম পরিবারের মধ্যে অন্যতম পরিবার বিএসএফ জওয়ান মহম্মদ আনিসের। বাকিদের মতো আনিসের পরিবারও ২৫ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যা থেকে প্রার্থনা করছে যারা তাদের কোনও ক্ষতি না হয়। তাঁরা যেন কোনও ভাবে বেঁচে যায়। তাঁদের উপর যেন দুষ্কৃতীরা চড়াও না হয়।
দিল্লিতে বিএসএফ জওয়ানের বাড়িও শিকার হয় হিংসার
তবে আনিসের পরিবারের সেই প্রার্থনা পুরোপুরি কাজে দেয়নি। আনিসের পরিবার মনে করেছিল যে বাড়ির বাইরে বিএসএফ-এর ইনসিগনিয়া দেখলে দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাড়ির উপর কোনও হামলা চালাবে না। হয়ত 'দেশভক্তির পাঠ' পড়া হামলাকারীরা বিএসএফ জওয়ানের বাড়িটিকে নিস্তার দেবে।
প্রাণে বাঁচলেও সর্বস্ব খোয়াতে হয় বিএসএফ জওয়ান আনিসকে
প্রাণে তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে তাঁদের দোতলা বাড়িটি তাঁরা আর বাঁচাতে পারেননি। সঙ্গে তাঁদের সারা জীবনের গচ্ছিত সঞ্চয়ও হিংসার আগুনে পুড়ে যায়। পরের তিন মাসে তাদের পরিবারে দুটি বিয়ে হওয়ার কথা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো পরিবারেরই মাথায় হাত।
আনিসকে পাকিস্তানে পাঠানোর হুঁশিয়ারি
দুষ্কৃতীরা শুধু যে তাঁদের বাড়ি পুড়িয়েছে তা নয়। বিএসএফ জওয়ান মহম্মদ আনিসকে পাকিস্তানি বলেও কটাক্ষ করে তারা। আনিসের পরিবার জানায়, দুষ্কৃতীদের তাঁরা বলতে শোনে, 'এখানে আয় পাকিস্তানি। তোকে নাগরিকতা দিচ্ছি আমরা।'
২০১৩ সালে বিএসএফ-এ যোগ দেয় আনিস
২০১৩ সালে বিএসএফ-এ যোগ দেওয়ার পর তিন বছর জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তে দেশকে রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তবে এই সব বিষয় হামলাকারীরা জানত না। জানলেও হয়তবা তাদের কিছু যায় আসত না। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আনিস তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখান থেকে পালায়। পরে আধাসেনা তাঁদেরকে বাঁচায়।
আনিসের মতো আরও ৩৫টি বাড়িতে আগুন, মারা গিয়েছেন ৪২
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া দিল্লির হিংসায় এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪২। জখম ৩০০-রও বেশি। আনিসেরই মতো সেই এলাকায় ৩৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। শনিবার রাতে শুরু হওয়া এই অশান্তি ছড়ায় মূলত উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুর, বাবরপুর, কবিরনগর, পশ্চিম জ্যোতি নগর, গোকুলপুরীর গলিতে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এই এলাকাগুলিতে। তবে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাস্তায় বন্দুক, লোহার রড, লাঠি হাতে নেমে আসে দুষ্কৃতীরা। তারপর থেকে ক্রমশ খারাপ হয়েছে পরিস্থিতি। পুলিশ সূত্র জানা গিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ তৈরি করে তার মাধ্যমে সম্ভবত দুষ্কৃতীরা সংগঠিত হয়ে এই ভাঙচুর, মারধরের ঘটনাগুলি ঘটিয়েছে।