হাল্কা শীতের স্পর্শে সাদা ব্রহ্মকমলে সেজে উঠেছে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত রুদ্রপ্রয়াগ ও উত্তরাখণ্ড
করোনা ভাইরাস প্রকোপের ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় প্রচুর বদল যেমন এসেছে তেমনি পরিবেশের আচরণেও অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই বছর প্রত্যেকটি মরশুমের আগমন ভারতে ঘটেছে সঠিক সময়ে এবং তাদের বিদায়ও হয়েছে নির্ধারিত সময় মেনে। তেমনি শীতকালের প্রবেশ শুরু হয়ে গিয়েছে হিমালয়ের কোলে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে অলকানন্দা ও মন্দাকিনী নদীর পবিত্র সঙ্গমে অবস্থিত রুদ্রপ্রয়াগে ফুটতে শুরু করে দিয়েছে ব্রহ্মকমল ফুল।
হিন্দু ধর্মে ব্রহ্মকমল ফুলের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বজগতের স্রষ্টার (ব্রহ্মা) দেবতার সঙ্গে হিন্দু ধর্মে জড়িত। পাহাড়ি শহর রুদ্রপ্রয়াগেরও দারুণ গুরুত্ব রয়েছে কারণ এই পথ দিয়েই একদিকে বদ্রীনাথ ও অন্যদিকে কেদারনাথ ধামে যাওয়া যায়। রুদ্রপ্রয়াগের সমগ্র অঞ্চল অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ধর্মীয় গুরুত্বের স্থান, হ্রদ এবং হিমবাহ দ্বারা পরিপূর্ণ, পর্যটকদের কাছে তাই এই স্থানের গুরুত্ব সর্বদাই আলাদা পর্যায়ে রয়েছে।
ব্রহ্মকমল, কোন, কাপফু ও ভানসেমব্রু এই সবই স্থানীয় নাম এই ফুলের। এটি পদ্মফুলের একটি জাত। হিন্দু মতে, হিন্দুদের দেবতা তথা গোটা বিশ্বজগতের স্রষ্টা ব্রহ্মা, যিনি স্বয়ম্ভু নামেও পরিচিত এবং চার বেদের স্রষ্টা, এক–একটি বেদ যাঁর মুখ থেকে নির্গত হয়েছে, তাঁকে গোলাপি রঙের এক ফুলের ওপর বসে থাকতে দেখা যায়, যে ফুলের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দ কমল বা পদ্মের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দেশের জাতীয় ফুল হিসাবে পদ্মকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে এই ফুল বেশ দুষ্প্রাপ্য।
বর্তমানে এই ফুল বিপন্ন তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তাও আবার মানুষের হাতে। উত্তর মায়ানমার, দক্ষিণ–পশ্চিম চিন ও ভারতের উত্তরাখণ্ড, মূলত এই তিন অঞ্চলেই দেখা পাওয়া যায় ব্রহ্মকমলের। ৩০০০ থেকে ৪৮০০ মিটার উচ্চতায়, পাথরের ফাঁকে ফোকোরে সবুজ ঘাসের মাঝে মাঝে দেখা যায় এই ফুল। ভারতের উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায় ব্রহ্মকমল। মূলত রূপকুণ্ডের পথেই দর্শন পাওয়া যায় এই ফুলের। কিন্তু, এই অঞ্চলে এই ফুলের রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ব্যবস্থাই নেই। পাশাপাশি, আঞ্চলিক মন্দিরগুলোয় পুজোর জন্য প্রভূত পরিমাণে ব্যবহৃত হয় এই ফুল। তা ছাড়াও, ব্রহ্মকমলের ঔষধি গুণাগুণের ফলে, প্রচুর পরিমাণে তা বিক্রি হয় কালো বাজারে। তৃতীয় কারণ, অবশ্যই আবহাওয়া। প্রতি নিয়ত বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া। যার ফলে কমে যাচ্ছে ফুলের সংখ্যাও।