রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না : সিন্ধু চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
নয়াদিল্লি, ২৬ সেপ্টেম্বর : বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে সিন্ধু নদের জল ছাড়া হবে কিনা তা নিয়ে বৈঠকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন 'রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না'।
বৈঠকে সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের অধিকারে যে তিন নদী রয়েছে অর্থাৎ সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলম নদীর জলের বেশিরভাগটাই ব্যবহার করার কথায় জোর দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানানো না হলেও উরি পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত অন্তত পাকিস্তানকে সিন্ধুর বেশির ভাগ জল ব্যবহার করতে না দিয়ে শায়েস্তা করতে চাইছে। ['সিন্ধু জল চুক্তি' দিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে চাইলে তা ব্যুমেরাং হতে পারে ভারতের কাছে!]
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী প্রধান সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্র, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশসচিব এস জয়সঙ্কর, জলসম্পদ সচিব সব অন্যান্য উচ্চপদাধিকারি আমলারা।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল সিন্ধু চুক্তি আসলে কী?
ঘটনা হল, ১৯৬০ সালে জল বণ্টন সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয় ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে। এটি 'সিন্ধু জল চুক্তি' নামে পরিচিত। সেইসময়ে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় দুই প্রতিবেশী দেশ জল নিয়ে মধ্যস্থতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেছিল। যদিও তাতে বিশেষ সুফল মেলেনি। ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর করাচিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পূর্বের তিনটি নদী বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রুর অধিকার থাকবে ভারতের কাছে। অন্যদিকে পশ্চিমের তিনটি নদী সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলমের অধিকার থাকবে পাকিস্তানের।
যেহেতু সবকটি নদী ভারতের মধ্য দিয়ে বয়ে পাকিস্তানে যাচ্ছে, তাই চুক্তি অনুযায়ী ভারত সেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সহ সমস্ত কাজে এই জল ব্যবহার করতে পারবে বলে স্থির হয়। মোট জলের ২০ শতাংশ ভারত ব্যবহার করতে পারবে বলে ঠিক হয়েছিল।
এতবছর ধরে কখনও এই চুক্তি নিয়ে কোনও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে, উরি হামলার পর পাকিস্তান প্রসঙ্গে কড়া পদক্ষেপ নিতে চাইছে ভারত। একাধিকবার বাকযুদ্ধে আক্রমণ করার পাশাপাশি এবার কাজেও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পথে এগোচ্ছে কেন্দ্র। সিন্ধু চুক্তি বজায় রেখেও পাকিস্তানের অধিকারে থাকা তিন নদীর জলের সর্বোচ্চ পরিমাণ ব্যবহার করে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে মোদী সরকার। তবে তা কতটা কার্যকর করা সম্ভব হবে তা নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন তো রয়েইছে।