মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ‘গৃহযুদ্ধে’ ২ বছরেই টলমল ত্রিপুরা বিজেপির ‘পরিবর্তনে’র সরকার
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ‘গৃহযুদ্ধে’ ২ বছরেই টলমল বিজেপির ‘পরিবর্তনে’র সরকার
২৫ বছরের বাম সরকারের অবসান ঘটিয়ে ত্রিপুরায় শুরু হয়েছিল বিজেপি রাজ। বিজেপির সেই রাজত্ব ত্রিপুরায় অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ বছর চলবে বলে দাবি করেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। সেই বিজেপি সরকারেরই টালমাটাল অবস্থা দু'বছরের মধ্যে। এখন বিজেপি আদৌ সরকার টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
বিজেপি সরকারের থরহরি কম্প গৃহযুদ্ধে
কোনও বিরোধী শক্তির দাপট নয়, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের থরহরি কম্প গৃহযুদ্ধের কারণেই। বিপ্লব বিরোধী বিধায়কের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে বিপ্লব দেবকে অপসারণের জন্য এখন বিজেপির প্রায় এক ডজন বিধায়ক দিল্লিতে শিবির করছেন। বিদ্রোহী শিবিরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রাক্তন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন।
কংগ্রেস থেকে তৃণমূল ঘুরে বিজেপিতে গিয়ে বিদ্রোহী
সুদীপ রায় বর্মন ছিলেন মানিক সরকারের আমলের বিরোধী দলনেতা। তিনি কংগ্রেস থেকে তৃণমূল ঘুরে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। মূলত তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ফলে বিজেপি বামফ্রন্টতে হটাতে সম্ভবপর হয়ে উঠেছিল। এখন এই সুদীপই বিদ্রোহী। তাঁর শিবিরে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সুশান্ত চৌধুরী, আশিস সাহা, রামপ্রসাদ পাল, দিবাচন্দ্র হরণখওয়াল, পরিমল দেব বর্মা, ডিসি রণখওয়াল, অতুল দেব বার্মা এবং বার্ব মোহন ত্রিপুরা প্রমুখ।
বিদ্রোহী বিধায়করা দিল্লিতে সভাপতির অপেক্ষায়
বিদ্রোহী বিধায়করা ইতিমধ্যেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে ব্যস্ত, তাই বৈঠক সংঘটিত হয়নি। বিজেপির বিদ্রোহী বিধায়কদের দলটি বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের কথা জানিয়েছেন।
বামফ্রন্টের প্রত্যাবর্তন ও কংগ্রেসের সমর্থনের ভিত্তি
বিজেপির বিদ্রোহীরা অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব দলের ত্রিপুরা ইউনিটে স্বৈরাচারী শাসকের মতো আচরণ করছেন এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০১৮ সালে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণ করছে না। তাঁদের দাবি, বিপ্লব দেবের শাসন জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলছে এবং এভাবে বামফ্রন্টের প্রত্যাবর্তন এবং কংগ্রেসের সমর্থনের জন্য ভিত্তি তৈরি করছে।
বিজেপি কোনও ইন-চার্জ নেই, কোনও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই
ত্রিপুরার বিজেপি-তে বিদ্রোহ দুটি মূল পদ নিয়ে তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে ত্রিপুরার বিজেপির কোনও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বে নেই এবং রাজ্য সরকারের একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও নেই। রাম মাধব উত্তর-পূর্বে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জেপি নাড্ডা বিজেপির রদবদলের সময়ে রাম মাধবকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন।
বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা কংগ্রেস-তৃণমূল ফেরত
এর আগে ত্রিপুরার দায়িত্বে ছিলেন বিজেপি কেন্দ্রীয় সম্পাদক সুনীল দেওধর। বিজেপির বিদ্রোহীরা ত্রিপুরার ওই ইনচার্জের ঘনিষ্ঠ। বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে এই সংগঠিত পদক্ষেপের নেপথ্যে রয়েছে সুনীল দেওধরের পরোক্ষ সমর্থন। ঘটনাচক্রে বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী বেশিরভাগ বিধায়কই কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেসে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন।
কংগ্রেস ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন ২০১৮-য়
২০১৮ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ওই বিধায়করা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীররঞ্জন বর্মনের ছেলে সুদীপ রায় বর্মন। তাঁর বাবা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়া শেষ কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেস ত্রিপুরায় ১৯৯৩ সালে বামফ্রন্টের কাছে ক্ষমতা হারিয়েছিল। তারপর ২০১৮ অবধি ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্টই। এবার তাদের সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি।
রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় চার বছরে একাধিক দল পরিবর্তন
সুদীপ রায় বর্মন ২০১৯ সালে বরখাস্ত হওয়ার আগে বিপ্লব দেব সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ ছিল। সুদীপ রায় বর্মনকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ত্রিপুরার কোনও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। তারপর সুদীপের নিজের একটি রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। যার ফলে তাঁকে গত চার বছরে একাধিকবার দল পরিবর্তন করতে দেখা গিয়েছিল।
বিপ্লব দেবের স্বৈরাচারী মনোভাবে সন্তুষ্ট নন বিদ্রোহীরা
সুদীপ রায় বর্মন সদলবদলে ২০১৪ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়ছিলেন। তারপর ২০১৮-তে বিজেপিতে। বিজেপির বিদ্রোহীদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে ২৫ জন বিধায়কদের সমর্থন রয়েছে, যাঁরা বিপ্লব দেবের স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে আদৌ সন্তুষ্ট নন। বিদ্রোহীরা আরও বলেছেন, বিপ্লব দেবের প্রতিটি মন্তব্যে বিতর্কিত হয়ে উঠার ফলে ত্রিপুরায় বিজেপির অসম্মান ঘটছে।
বিজেপির গৃহযুদ্ধে ত্রিপুরায় নতুন সমীকরণের গন্ধ
৬০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরা বিধানসভায় বিজেপির ৩৬ জন বিধায়ক রয়েছে। বিজেপির মিত্রশক্তি আইপিএফটি-র আট জন বিধায়ক রয়েছে। বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে ২৫ জন বিধায়ক থাকার দাবি যদি সত্য হয়, তবে এটি বিপ্লব দেবের সরকারকে সমস্যায় ফেলতে পারে। ফের আলাদা সমীকরণ তৈরি হতে পারে ত্রিপুরায়
এবার আর মণ্ডপে নয় পুজো উদ্বোধন করবেন ভার্চুয়ালি, ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী, জেনে নিন উদ্বোধনের দিন