সুদীপ কি তৃণমূলের আশা দেখছেন না! বিদ্রোহী বিজেপি বিধায়কের কংগ্রেস যোগের জল্পনা
সুদীপ কি তৃণমূলের আশা দেখছেন না! বিদ্রোহী বিজেপি বিধায়কের কংগ্রেস যোগের জল্পনা
তৃণমূল ত্রিপুরায় পা রাখার পর থেকেই তাঁর বিজেপি-ত্যাগ নিয়ে জল্পনা চলছিল। সুদীপ রায় বর্মনের ঘরওয়াপসি নিয়ে পর্যালোচনা এবার মোড় নিল অন্য দিকে। সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে তিনি কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকেছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ত্রিপুরার রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ তৈরি হতে পারে সুদীপ রায় বর্মন ও তাঁর অনুগামীরা কংগ্রেসে ফিরে গেলে।
আবার কোনও ধাক্কা এসে ভেঙে দেবে না তো তৃণমূলের স্বপ্ন?
২০১৭ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুদীপ রায় বর্মন-রা দল বেঁধে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তিনি তাঁর দলবদল নিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় মাঠে মারা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ত্রিপুরায় প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা। এবারও কি ২০২৩-এর নির্বাচনের আগে তেমনই কোনও ধাক্কা এসে ভেঙে দেবে তৃণমূলের স্বপ্নকে?
বিজেপির চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠতে পারেনি তৃণমূল
তৃণমূল মনে করেছিল বঙ্গ বিজয়ের পর ত্রিপুরায় তাদের দলের সংগঠন গড়ে তোলা অনেক সহজ হবে। বিজেপি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে। কিন্তু বিজেপি ভাঙেনি। তৃণমূল সেই আগের পরিকল্পনামাফিক কংগ্রেসকে ভেঙে বিস্তার লাভের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে তৃণমূল। বিজেপির চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠতে পারেনি তারা।
সুদীপ রায় বর্মনরা কি তৃণমূলে ভরসা হারাচ্ছেন?
এই অবস্থায় সুদীপ রায় বর্মনরা কি তৃণমূলের উপর ভরসা রাখবেন? নাকি অন্য কোনও সমীকরণ তৈরি হবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে। সুদীপ রায় বর্মনরা কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। তিনি ছিলেন কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ সুদীপ রায় বর্মন কংগ্রেস চেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৬ সালের পর। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসের বাকি বিধায়করাও। রাতারাতি তৃণমূল প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়েছিল।
তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ ২০২৩-এও!
কিন্তু ২০১৭ সালের বিধানসভার আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া বিধায়করাই ফের দল বেঁধে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। এবং বিজেপি সেই ভোটে সিপিএমের ২৫ বছরের মিথ ভেঙে সরকার গড়েছিল। আবারও ২০২৩-এর আগে তৃণমূল ত্রিপুরায় সংগঠন বিস্তারে মন দেয়। আবারও কংগ্রেস ভাঙে। বিজেপিতে বিদ্রোহী সুদীপ রায় বর্মনরা তৃণমূলে ফিরে আসতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়। এখনও সেই সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ত্রিপুরা পুরসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান সুদীপ রায় বর্মনরা অন্য সম্ভাবনাও জাগিয়ে রেখেছেন।
প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বৈঠকে সুদীপ রায় বর্মনের, জল্পনা
সুদীপ রায় বর্মন সম্প্রতি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে প্রচার রাজনৈতিক মহলে। এরপর সুদীপ রায় বর্মনের কংগ্রেসে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। আবার উল্টে দিক থেকেও প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেস কি সুদীপ রায় বর্মনকে সামনে এনে আবার পুরনো গুরুত্ব ফিরে পেতে চাইছে?
এবার পুরনো সমীকরণে ভোট হবে না ত্রিপুরায়
মোট কথা ত্রিপুরায় রাজনৈতিক সমীকরণ ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করছে। ২০২৩-এর নির্বাচনের আগে নিত্য নতুন সমীকরণ তৈরি হবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এখনই বোঝা সম্ভব নয় ত্রিপুরার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে হাঁটতে চলেছে অদূর ভবিষ্যতে। তবে ত্রিপুরায় যে এবার পুরনো সমীকরণে ভোট হবে না, তা নিশ্চিত।
বিজেপিতে বিদ্রোহী বিধায়কদের অবস্থান স্পষ্ট নয়
গতবারের মতো সুদীপ রায় বর্মনরাই ফের ফারাক গড়ে দিতে পারেন ২০২৩-এ। যেভাবে রাতারাতি ২০১৭-য় অঙ্ক বদলে গিয়েছিল, এবারও তার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এখনও সুদীপ রায় বর্মন-সহ বিজেপিতে বিদ্রোহী বিধায়কদের অবস্থান স্পষ্ট নয়। যত ভোট এগিয়ে আসবে, ততই স্পষ্ট হতে শুরু করবে সবটা। স্পষ্ট হবে সমীকরণ, স্পষ্ট হবে অঙ্ক। ছোট রাজ্য ত্রিপুরা। একটু এদিক-ওদিক হলে বদলে যেতে পারে হিসেবও।
সুদীপ রায় বর্মন বিজেপিতে বিদ্রোহী রূপে অবতীর্ণ
সুদীপ রায় বর্মন-রা বিজেপিতে যাওয়ার পর বিজেপি শক্তিশালী হয়েছিল। সেই শক্তিতে ভর করে বিজেপি ক্ষমতাতেও এসেছে। কিন্তু ত্রিপুরা সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই সুদীপ রায় বর্মনকে বিদ্রোহী রূপে অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। তিনি বিজেপির সমালোচনা করতে কসুর করেননি। তার ফলে তিনি বর্তমানে মন্ত্রিসভা থেকেও বিচ্যুত। তাঁর অনুগামীরা অনেকে রয়েছেন মন্ত্রিসভায়।
পুরভোটের আগে কটোর সমালোচনা সুদীপ রায় বর্মনের
সুদীপ রায় বর্মন প্রকাশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সমালোচনা করে এসেছেন বরাবর। এখনও তা অব্যাহত। মুখে বিজেপিকে সমর্থনের কথা বললেও বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে তিনি খড়্গহস্ত। পুরভোটের প্রাক্কালেও তিনি বিজেপির সমালোচনায় মুখর হন। তিনি বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বিজেপি সরকারের মদতে সন্ত্রাস-হিংসার পরিবেশ ত্রিপুরায়, মুখ্যমন্ত্রীকে শিশুসুলভ বলে ব্যাখ্যা সুদীপের।
কংগ্রেসে ফেরার রাস্তাও খোলা রাখছেন সুদীপ
তারপর সুদীপ রায় বর্মনকে বরখাস্ত করা হতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠে। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছিল- বিজেপির হিম্মত থাকলে সুদীপ রায় বর্মনকে বরখাস্ত করুক। তবে বিজেপি এখনও বরখাস্ত করেনি তাঁকে। তবে বিজেপি যে সুদীপ রায় বর্মনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ, তা বুঝিয়ে দিয়েছে গেরুয়া নেতৃত্ব। বিজেপিতে তাঁর সম্পর্ক নতুন করে জোড়া লাগার নয়, তাই তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেসে ফেরার রাস্তাও তিনি খোলা রাখতে শুরু করেছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।