আবারও উত্তরপ্রদেশে উপনির্বাচনে হার বিজেপির, কৈরান লোকসভায় ব্যবধান ৫৫ হাজারেরও বেশি
উত্তর প্রদেশের কৈরান লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী মৃগাঙ্কা সিংয়ের বিরুদ্ধে ৫৫ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হলেন রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) প্রার্থী তবস্সুম হাসান।
শেষ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশের কৈরান লোকসভা কেন্দ্রে হেরেই গেল ভারতীয় জনতা পার্টি। বিজেপি প্রার্থী মৃগাঙ্কা সিংয়ের বিরুদ্ধে ৫৫ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হলেন রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) প্রার্থী তবস্সুম হাসান। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি , আপ, সিপিআইএম আরএলডি প্রার্থীকে সমর্থন করেছিল।
গণনার শুরু থেকেই এগিয়ে গিয়েছিলেন আরএলডির তবস্সুম হাসান। প্রথমে রাউন্ডেই ৩০০০ ভোটের লিড পেয়েছিলেন তবস্সুম। তারপর থেকে ক্রমে লিড বাড়তে থাকে। ১৫ রাউন্ডের গণনার শেষে তিনি বিজেপি প্রার্থীর থেকে ৪২ হাজার ৭৩৪ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। জোট যে বড় ব্যবধানে জিততে চলেছে তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গননার শেষে জানা গিয়েছে এই ব্যবধান ৫৫ হাজারেরও বেশি দাঁড়িয়েছে। জয়ী ঘোষিত হন তবস্সুম হাসান। তবে কোন প্রার্থীর ঝুলিতে মোট কত করে ভোট গিয়েছে তা এখনও বিস্তারিত জানানো হয়নি।
বিজেপিকে রুখতে এই কেন্দ্রে একজোট হয়েছিল বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলি। রাষ্ট্রীয় লোক দল-এর প্রার্থীকে সমর্থন করেছিল উত্তরপ্রদেশের দুই শক্তিশালী দল সপা ও বসপা। সমর্থন করেছিল কংগ্রেস, সিপিআইএম, আপও। বলা যেতে পারে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে যে ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের কথা বলা হচ্ছে সেই ফ্রন্টেই একটা ট্রেলার দেখা গিয়েছে এই কেন্দ্রে। ফ্রন্ট তথা আরএলডি প্রার্থী তবস্সুম হাসান বলেন, 'এটা সত্যের জয়।' তবে এদিনের জয়ের পরেও তিনি ভোটে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে সরে আসেননি। তিনি বলেন, 'আমরা ভবিষ্যত ইভিএম মেশিনে কোনও নির্বাচন হোক তা চাই না।' সেইসঙ্গে তাঁর দাবি, '(এই জয়ে) ২০১৯ সালে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোটের পথ পরিষ্কার হয়ে গেল।' প্রসঙ্গত গত সোমবার ভোটের দিন এই কেন্দ্রের বহু বুথেই ইভিএম কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন বিরোধীরা। তার জন্য বুধবার আবার ৭৩টি বুথে পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
This is the victory of truth. I still stand by what I said, there has been a conspiracy & we do not want any future elections to be conducted on EVM machines. The path for united opposition is clear in 2019: RLD's Tabassum Hasan on her lead in trends of Kairana Lok Sabha by-poll pic.twitter.com/S8FWQBJJbL
— ANI UP (@ANINewsUP) May 31, 2018
তাঁদের প্রার্থীকে সমর্থনের জন্য অখিলেশ যাদব থেকে মায়াবতী, রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, সিপিআইএম নেতৃত্ব, আপ নেতৃত্ব সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরী-ও। জোটের প্রার্থীকে বৈতরণী পার করানোর দায়িত্ব ছিল তাঁরই কাঁধে। তবস্সুমের আরও দাবি বিজেপি কৈরান লোকসভা উপনির্বাচনের প্রচারপর্বে অপ্রয়োজনীয়ভাবে মহম্মদ আলী জিন্নাহর প্রসঙ্গ তুলেছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তার জন্যই কৈরানের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিজেপি সাংসদ হুকুম সিংয়ের মৃত্যুর কারণে এখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিজেপি প্রার্থী করেছিল হুকুম সিং-এর কন্যা মৃঙ্গাঙ্কা সিং-কে। এদিনের হারের পর মৃগাঙ্কা জানিয়েছেন, 'অনেক ভোটারই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কয়েক হাজার ভোটে জোট জিতেছে। আমি তাদের প্রার্থীকে অভিনন্দন জানাই। জোট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতের জন্য এখন আমাদের ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।'
Many voters did vote for BJP but with a lead of some thousand votes alliance has won. I would like to congratulate the candidate. The alliance has emerged strong and now we have to prepare better for future: Mriganka Singh, BJP Kairana candidate pic.twitter.com/yRbPc2g72Y
— ANI UP (@ANINewsUP) May 31, 2018
২০১৪ লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে ৮০ টি লোকসভা কেন্দ্রের ৭১টিতেই জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটেও তা অটুট ছিল। ৩২৫টি বিধানসভা আসনে জয় পায় বিজেপি। কিন্তু তারপর থেকে এই নিয়ে রাজ্যের তিনটি লোকসভা উপনির্বাচনেই হারতে হল বিজেপিকে। মাত্র কয়েকমাস আগে বিরোধী জোটের কাছে হারতে হয়েছিল গোরক্ষপুর ও ফুলপুর লোকসভা উপনির্বাচনে। মুখ পুড়েছিল মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। তবে কী এই রাজ্যে ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বিজেপি? লোকসভায় সবচেয়ে বেশি আসন উত্তরপ্রদেশ রাজ্যেরই। কাজেই ২০১৯-এর আগে একে বিজেপির পক্ষে একটা অশনি সংকেত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিনের এই বিশাল হারের পর উত্তরপ্রদেশ বিজেপি কী পদক্ষেপ নেয় সেদিকে চোখ থাকবে সকলের। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তীতে কিন্তু ফেডেরাল ফ্রন্টকে যথেষ্ট শক্তিশালী লাগছে।