পাঞ্জাবে বিচ্ছেদ, হাথরাসের বিতর্ক! এরই মাঝে কেন নীতীশেই ভরসা রাখছে মরিয়া বিজেপি?
বিহারের মসনদে দলের কোনও নেতার বদলে নীতীশকে কেন বসাতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি? এই প্রশ্ন অনেককেই অবাক করেছে। তবে এই প্রশ্নের জবাবে অনেক বিশেষজ্ঞই বলছে যে বিজেপি যে এখনও জোটধর্মে বিশ্বাসী এবং দলিতদের যে দল 'নিচু' চোখে দেখে না, এই দুটি বিষয় প্রমাণ করতেই নীতীশকে মসনদে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি।
নীতীশকে জোটের কাণ্ডারি হিসাবে তুলে ধরছে বিজেপি
বিহার নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। এই আবহে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সহ রাজ্য নেতৃত্বও নীতীশকে জোটের কাণ্ডারি হিসাবে তুলে ধরছেন। জেপি নাড্ডা হোক, বা অমিত শাহ; এমনকী উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদীও নীতীশের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন। প্রসঙ্গত, নীতীশের সঙ্গে সুশীল মোদীর সম্পর্ক খুব একটা যে ভালো নয়, তা সবার জানা। তবে প্রকাশ্যে নীতীশকে সমর্থন জানিয়েছে তিনিও।
নীতীশে ভরসা মরিয়া বিজেপির
এনডিএ জোটের তরফে নীতীশকে আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেই ভোটের ময়দানে নামা হয়েছিল বিজেপির তরফে। মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে জোট ভাঙার পর বিহারে কোনও বিভ্রান্তি চায়নি বিজেপি। এর জন্যেই নীতীশকে সামনে রেখেই নির্বাচী ময়দানে নেমেছে তাঁরা। এমনকী আগেভাগে এও ঘোষণা করে দেওয়া হয় যে, যে দল যত ভোটই পাক, মুখ্যমন্ত্রী হবেন নীতীশই।
'দলিত বিদ্বেষী' তকমা ঝাড়তে চাইছে বিজেপি
মূলত হাথরাস কাণ্ডের পর বিজেপির 'দলিত বিদ্বেষী' মনোভাব নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। এদিকে কৃষি আইন ইস্যুতে পাঞ্জাবের দীর্ঘ কয়েক দশকের জোট শরিক অকালি দলের সঙ্গ হারিয়েছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে জেডিইউ বিজেপির বিশ্বাস যোগ্যতার একটি স্তম্ভ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিহারে নীতীশের ছত্রছায়ায় বিজেপি
মূলত উচ্চবর্ণের দল হিসাবে পরিচিত বিজেপি। এমনকী বিহারে যেখানে উচ্চবর্ণ ভোটারের সংখ্যা মাত্র ১৬ শতাংশ, সেখানেও ৫১ জন উচ্চবর্ণের প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। তবে দলিতদের মন জয় করতে নীতীশের সঙ্গ বিজেপিকে সাহায্য করবে বলে আশা গেরুয়া শিবিরের। এবং এই কারণেই হাথরাসের ঘটনার প্রেক্ষিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতীশের ছত্রছায়ায় বিজেপির বিহার ভোটের যুদ্ধ।
বিজেপি-জেডিইউর মাঝে চিড় ধরানোর আপ্রাণ চেষ্টা
এদিকে এলজেপি বিজেপি-জেডিইউর মাঝে চিড় ধরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ান নিজেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভক্ত 'হনুমান' বলে আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, ১০ নভেম্বর নাকি শেষ পর্যন্ত বিজেপি-এলজেপি জোটের সরকার হবে। অন্যদিকে পরপর নীতীশকে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। কিন্তু মহারাষ্ট্রের পুনরাবৃত্তি চায় না বিজেপি। একে একে জোট সঙ্গীদের ছাড়া বিজেপি একা হয়ে গেলে পরবর্তী বিভিন্ন রাজ্যের রাজনীতিতে তাঁরা জমি হারানোর ভয়ে থাকবে।
চিরাগকে বিজেপির সতর্কবার্তা
তবে এরপরই এলজেপি এবং চিরাগ পাসোয়ানকে বিজেপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের সঙ্গে বিজেপির কোনও জোট নেই। বিহারে এনডিএ জোটে রয়েছে বিজেপি এবং জেডিইউ। সেখানে চিরাগ স্থান পাবেন না। এর আগে আসন নিয়ে টানাটানির মধ্যেও নীতীশের ইচ্ছাকে দাম দিয়ে এলজেপিকে বাদ দিয়েই এগিয়েছিল বিজেপি। এবং তখনও এলজেপিকে কড়া ভাষায় বিজেপি জানিয়ে দিয়েছিল যে এলজেপি যেন বিজেপির নামে ভোট না চায়।
নীতীশের মন জয় করতে ময়দানে মোদী
এদিকে এই আবহেই রাজ্যে বিজেপি-জেডিইউ জোটের হয়ে ১২টি ব়্যালি করতে দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। সূত্রের খবর, সেই প্রতিটি জনসভাতেই নীতীশকে দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে ময়দান গরম করতে নেমে পড়েছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তবে বর্তমান প্রেক্ষিতে মোদীর রাজ্যে এসে নীতীশকে সমর্থন জানানো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এতে জেডিইউ তাদের জোট সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস ফিরে পাবেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এবং নীতীশের বিশ্বাস জিততে কোনও চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না বিজেপিও।
'তুরুপের তাস' দলাই লামা, লাদাখ সীমান্ত সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি লুকিয়ে তিব্বতে