শূন্য থেকে পাহাড় চূড়ায় বিজেপি, কোন ম্যাজিকে লাল-দুর্গ ত্রিপুরায় উঠল গেরুয়া ঝড়
গেরুয়া ঝড় তুলে ২৫ বছরের লাল দুর্গের অবসান ঘটিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী-ম্যাজিকে ত্রিপুরায় পতন ঘটল মানিক সরকারের। ‘মানিক’কে সরিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এল ‘হিরে’র সরকার।
এভাবেও রাজ্যের ক্ষমতা দখল করা যায়! মাত্র আট মাস আগেও কেউ ভাবেননি ত্রিপুরার মতো রাজ্যে পদ্ম ফুটতে পারে। কিন্তু এই ক'দিনেই শুধু ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি প্রয়োগ করে ত্রিপুরার ক্ষমতা দখল করে নিল বিজেপি। গেরুয়া ঝড় তুলে ২৫ বছরের লাল দুর্গের অবসান ঘটিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী-ম্যাজিকে ত্রিপুরায় পতন ঘটল মানিক সরকারের। 'মানিক'কে সরিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এল 'হিরে'র সরকার।
[আরও পড়ুন:ত্রিপুরায় 'চলো পাল্টাই'! বামদুর্গ গুড়িয়ে জয়ের পথে বিজেপি]
গত আড়াই বছর ধরে বিজেপি টার্গেট করেছিল উত্তর-পূর্ব ভারতকে। আসাম থেকে শুরু করে অরুণাচল, মণিপুরে শাসন ক্ষমতা দখল করলেও, ত্রিপুরায় পদ্ম ফোটানোর জন্য কোনও জমি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আট মাস আগে সেই রাস্তা প্রশস্ত হতেই সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল করে দিল এতদিনের লাল দুর্গকে। অবসান হল আরও একটি বাম রাজত্বের। দেশে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের অস্তিত্ব একেবারে তলানিতে পৌঁছে গেল।
২০১৩ সালে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। বেশিরভাগ আসনেই তাঁদের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এর আগের ভোটগুলিতেও এই বামদুর্গে দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। সবথেকে ভালো রেজাল্ট বলতে ছিল ১৯৯৮ সালে। সেবার ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তারপরই ২০০৩ সালে একেবারে তলানিতে পৌঁছে ১ শতাংশ ভোট পায় পদ্মশিবির। আর তারপরের দুই নির্বাচনে ২ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি। সেই দলটাই এবার ক্ষমতা দখল করল ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে।
একেবারে মিরাকল ঘটিয়ে দিল বিজেপি। আট মাস আগেও এই দলের পতাকা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যে দুরবীন দিয়েও দেখা যেত না। দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙন ধরিয়ে ৬ জন বিধায়ক বিজেপিতে পা রাখলেন। সেই যে ভাঙন শুরু হল, আর তা রোধ করতে পারেনি বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস কেউই। শেষপর্যন্ত শূন্য বিধানসভায় ৭ জন বিধায়ক দাঁড়ায় বিজেপির। সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়েই লাল দুর্গকে তছনছ করে দিল।
কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হল? নরেন্দ্র মোদীর নজর পড়েছিল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে। নরেন্দ্র মোদীর হয়ে ভোট স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন সুনীল দেওধর। এই একটা মানুষই বদলে দিলেন ত্রিপুরার রাজনৈতিক অঙ্ককে। ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমবার বামফ্রন্টের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেই পতন ঘটিয়ে দিল ত্রিপুরার 'মানিক' সরকারের।
রাজ্যে উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ ছিল মানুষের। ছিল দীর্ঘদিনের ক্ষমতায় থাকার প্রতিকূলতা। আর তারপর ছিল দলবদল। দুটি পার্টিকে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে বিজেপির উত্থান হয়েছিল রাজ্যে। কংগ্রেস ও তৃণমূল শেষ হয়ে গিয়েছিল এক ধাক্কায়। তার উপর মোদীর পাঠানো বাণে ছত্রখান সিপিএম তথা বাম।
মোদীর সেই বাণে লক্ষ্যভেদ হল শুধু অঙ্ক কষে। ভোট শতাংশের বিচারেই মাত করে দিয়ে গেল বিজেপি। সহযোগী দলগুলিতে নিয়ে বিজেপি এখানে ৫০ শতাংশ ভোট পেল। আর ৪৫ শতাংশ ভোটে থেমে গেল শাসক সিপিএম। মাত্র ৫ শতাংশ ভোট গিয়েছে এতদিনের বিরোধী দল কংগ্রেস ও তৃণমূলের দিকে। যে দল গত নির্বাচনে মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, এবার সেই দলটাই ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায়।