মোদীর জয়-রথে ‘শিখণ্ডি’ মমতা! রাজ্যে রাজ্যে ‘রেকর্ড’ জয়ে এখন ‘হাসছে’ গণতন্ত্র
তৃণমূল কংগ্রেস বাংলায় ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে ‘রেকর্ড’ গড়েছিল। কিন্তু সেই ‘রেকর্ড’ যে ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে বিজেপি, সেই খবর কি রাখেন।
তৃণমূল কংগ্রেস বাংলায় ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে 'রেকর্ড' গড়েছিল। কিন্তু সেই 'রেকর্ড' যে ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে বিজেপি, সেই খবর কি রাখেন। অনেকেই বোধহয় রাখেন না। কই কোনও বিরোধীরা তো আইনি যুদ্ধে নামছেন না। ত্রিপুরার পর জম্মু-কাশ্মীরে বিপুল আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে বিজেপি। তারপরেও গণতন্ত্রপ্রেমীরা নীরব।
তৃণমূল ৩৪ শতাংশ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী
এ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে ৬৬ শতাংশ আসনের লড়াইয়ে বিপুল জয় পেয়েছিল তৃণমূল। বাকি ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিল তারা। এই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিয়েই গর্জে উঠেছিল রাজ্যের তিন প্রধান বিরোধী শক্তি-সহ অন্যান্যরা।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে সুপ্রিম স্বীকৃতি
শেষপর্যন্ত ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিয়ে আইনি লড়াইয়েও তৃণমূলের জয় জয়কার হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেও জয়ের স্বীকৃতি পান তৃণমূল প্রার্থীরা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০,১৫৯ আসনে বিজয়ীর স্বীকৃতি লাভ করেন তৃণমূলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী প্রার্থীরা।
ত্রিপুরায় ৯৬ শতাংশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিজেপি
বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভবিষ্যৎকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল বিজেপি-সহ বিরোধীরা। এবার ত্রিপুরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেল বিজেপি, তারপরও বিস্ময়করভাবে নীরব গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী নেতারা। ত্রিপুরায় বিজেপির বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিয়ে অন্য বিরোধীদের মাথাব্যথা নেই।
পালাবদলে গেরুয়া ঝড়, ভোটই হল না
এবার ত্রিপুরায় ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার পর লাল দুর্গে ফের আঘাত হেনে গেরুয়া ঝড় বইয়ে দিল বিজেপি। সেই ঝড়ে বাংলার রেকর্ডও ভেঙে দিল ত্রিপুরা বিজেপি। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের উপনির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেল গেরুয়া শিবির, যা গণতন্ত্রের লজ্জা বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ সেভাবেই ব্যাখ্যা করছে।
জম্মু-কাশ্মীরেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুল জয় বিজেপির
জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনে ‘ইতিহাস' তৈরি করে কাশ্মীর উপত্যকায় প্রথমবারের জন্য অন্তত সাতটি পুরসভার শাসন ভার যাচ্ছে বিজেপির হাতে। সাতটি পুরসভাতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির প্রার্থীরা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করে ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি স্থানীয় নির্বাচন বয়কট করে। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় বিজেপি।
বিজেপি জয়ে কী বলছে তৃণমূল
বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস সরব হয়েছে বিজেপির এই জয় নিয়ে। তবে আদালতের দরজায় যায়নি। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলায় ৩৪ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি-সহ বিরোধীদেক কেউ। তাতেই এমন ভান করেছিল বিরোধীরা যে, গণতন্ত্রের যায় যায় অবস্থা। তাহলে ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার পর কী বলবেন বিজেপির নেতারা। এবার কীই-বা বলবে সিপিএম-কংগ্রেস। নেতারা। তাঁরা কেন এখন নিশ্চুপ, প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পার্থবাবু বলেন, বিজেপি কিছু না জেনেই আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্যস্ত থাকে। আর নিজেদের বেলায় সব বুঝতে পারে।
ত্রিপুরায় কেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়, কী ব্যাখ্যা বিজেপির
গত মার্চে ত্রিপুরায় বিজেপি ও আইপিএফটি ক্ষমতায় আসার পরে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সব স্তরে দল বদলের হিড়িক পড়ে যায়। দলে দলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা দল ছাড়েন এবং পদত্যাগ করেন। ফলে মোট ৩ হাজার আসনে ভোট করার পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ তিন জায়গা থেকেই পদত্যাগ করেন পদাধিকারীরা। বিজেপির মুখপাত্র মৃণালকান্তি দেব বলেছেন, বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। মানুষ তাদের পরিত্যাগ করেছে। বিরোধীদের সংগঠন ভেঙে পড়েছে।
বিরোধীদের কী অভিযোগ ত্রিপুরায়
বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি জোর খাটিয়ে সকলকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করিয়েছে। শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করে মনোনয়নপত্র জমা করতেও দেয়নি বিরোধীদের। যার ফলে বিজেপির সকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরের অভিযোগ, প্রথমে জোর করে আমাদের প্রার্থীদের পদত্যাগ করানো হয়েছে। পরে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন জমা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকী বিজেপির সঙ্গী আইপিএফটি-ও সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলে নির্বাচন স্থগিত করার আবেদন জানায়।
একনজরে ত্রিপুরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়
৩০ সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে ৩৩৮৬টি আসনের মধ্যে ৩২০৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৬১টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ১৮টি জেলা পরিষদের আসন রয়েছে। তার মধ্যে সবমিলিয়ে ৩২৪৭টি আসন বিজেপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যে জিতে গিয়েছে। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বর মাত্র ১৩২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন, সাতটি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে ভোট হয়।
প্রশ্নের মুখে রাজনাথ সিং
ত্রিপুরার পর জম্মু-কাশ্মীরেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। রবিবার তাঁকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল এই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিয়ে। তিনি বলেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এরকম জিনিস আগেও ঘটেছে। এই তো এবারই পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
কী বলছে বিজেপির বঙ্গ নেতৃত্ব
বঙ্গ বিজেপির ব্যাখ্যা, দুই রাজ্যের পরিস্থিতি এক করে দেখাটা ভুল। জম্মু-কাশ্মীরে প্রধান দুটি দল ভোচ বয়কট করেছে। ফলে বিজেপি বিনা লড়াইয়ে জিতেছে বহু আসনে। আর পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে আটকানো হয়েছে, তা গোটা দেশ দেখেছে। বোমা-গুলি, সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ মারা গিয়েছে।
ত্রিপুরা নিয়ে কী বলছেন দিলীপ ঘোষ
ত্রিপুরায় আমরা ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছি ছিকই। কিন্তু কাউকে একটা থাপ্পড় মারার অভিযোগও নেই। এমন অভিযোগ কি শুনেছেন কেউ, শোনেননি। তাই পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির সঙ্গে ত্রিপুরারও তুলনা চলে না।
বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বঙ্গ সিপিএমের বক্তব্য
রাজনাথ সিংযের বক্তব্যকেই হাতিয়ার করেছে বঙ্গ সিপিএম। তৃণমূল ও বিজেপি আঁতাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে সিপিএমের পক্ষ থেকে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ক্ষেত্রে যুক্তি সাজাতে গিয়ে বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের তুলনা টেনেছে। বাংলার পঞ্চায়েতের লুঠপাটকে অনুমোদন দিয়েছে। আরও একবার প্রমাণ হয়েছে বিজেপি-তৃণমূলের স্রেফ ছায়াযুদ্ধ চলে। তৃণমূল ও বিজেপি একই পথের পথিক।
বিজেপির বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ে কং-প্রতিক্রিয়া
কাশ্মীর-ত্রিপুরার ভোটের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ভোটের তুলনা চলছে এখন। এই তুলনাই প্রমাণ করছে, দাদা ও দিদির মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। সেই কারণে আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। আমরা কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছি, আর রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দুই দলই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।