নৈশভোজে মোদী-মমতার আধ মিনিটের সাক্ষাৎ ইঙ্গিত দিচ্ছে অন্য অঙ্কের
নয়াদিল্লি, ২০ ডিসেম্বর : আব্দুল হামিদের সম্মানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া নৈশভোজের মূল আকর্ষণ ছিল দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবার একাধারে প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বও বটে। এতজন তৃণমূলের দলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তো অন্যজন বিজেপির মুখ তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী। লোকসভা ভোট থেকে সারদা মামলায় দুজনের তথা দুই দলের পারস্পরিক সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়েছে। প্রায় সাত মাস পরে দেখা হতে চলেছিল এই দুজনের আর তা নিয়ে কত জল্পনা, কতই না ভবিষ্যৎবানী শোনা গিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ভবনে অবশেষে মুখোমুখি হলেন নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
কী হল সেই সাক্ষাতে? সুষমা স্বরাজের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন মমতা। মমতাকে দেখে এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জিজ্ঞাসা করলেন, "দিদি ক্যায়সে হো?" জলদগম্ভীর স্বরটায় কিছুটা চমকে গেলেন মমতা, অস্বস্তিসূচক হাসি নিয়েই হাত তুলে নমস্কার করলেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। নমস্কারের জবাবে নমস্কার জানালেন প্রধানমন্ত্রীও। সব মিলিয়ে আধ মিনিট হবে। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে এই আধ মিনিটের মুহূর্তওই স্মরণীয় হয়ে রইল।
লোকসভা প্রচারে নেমে নরেন্দ্র মোদীকে কী না কী বলেছিলেন মমতা। গাধা, হরিদাশ, কসাই আরও কত কী। সারদা কাণ্ড নিয়েও নরেন্দ্র মোদীকে তুলোধনা করেছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সৌজন্য দেখিয়ে ধন্যবাদটুকু নরেন্দ্র মোদীকে জানাননি মমতা। দীর্ঘ সাত মাস নানা অছিলায় মোদীকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা চালিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। অথচ দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গিয়ে দেখা না করলেও রাষ্ট্রপতির দেওয়া নিমন্ত্রণে যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ থাকছে তা জেনেও নিজের দিল্লি সফরসীমার মেয়াদ বাড়ান মমতা। এমনকী কলকাতায় থাকাকালীন সারদাকাণ্ডে বিজেপিকে আক্রমণ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্না দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দিল্লি আসার পর তা নিয়ে টু শব্দটিও করেননি মমতা। আর তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে তবে কী এবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, যতই বিরোধিতা করুক তৃণমূল, মমতা কিন্তু হাড় হাড়ে বুঝেছেন সারদা কাণ্ডে ক্রমশ পিঠ দেওয়ালে ঠেকছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়াবাড়ি করলে তা আরও সমস্যা তৈকরি করবে। তাই সরকার ধীরে ধীরে সুর নরম করতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্র সিবিআই-কে চালনা করছে বলে যে অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে, মমতা তা সত্যিই বিশ্বাস করেন। আর তাই কেন্দ্রের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে কেন্দ্রের সহায়তায় সিবিআই তদন্ত থেকে রেহাই পেতে চাইছেন।