For Quick Alerts
ALLOW NOTIFICATIONS  
For Daily Alerts
Oneindia App Download

আদিবাসীদের অধিকারের লড়াই, বিরসার বিদ্রোহ চাপে ফেলেছিল ব্রিটিশদের

Google Oneindia Bengali News

উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশের অন‍্যতম কৃষক বিদ্রোহ, যে বিদ্রোহ দেশীয় জমিদার, জোতদারদের সাথে ইংরেজ শাসকের কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল, সেই 'মুন্ডা বিদ্রোহ'-এর অন‍্যতম নেতা বিরসা মুন্ডার শহিদ দিবস ৯ জুন।

১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর পূর্বতন বিহারের রাঁচির উলিহাতু গ্রামে বিরসা মুন্ডার জন্ম হয়।

১৮৯৯-১৯০০ সময়কালে তিনি রাঁচির দক্ষিণাঞ্চলে এই বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। অনেক ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহকে 'উপজাতীয় বিদ্রোহ'-এর শ্রেণীভুক্ত করেছেন। এটা ঠিক, একটি নির্দিষ্ট উপজাতির মানুষের দ্বারাই এই বিদ্রোহ সংগঠিত ও সংঘটিত হয়। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হল এই 'উলগুলান' অর্থাৎ 'প্রবল বিক্ষোভ'-এর লক্ষ‍্য ছিল জায়গীরদার ও ঠিকাদারদের হাতে ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জল-জঙ্গল-জমিনকে রক্ষা করা। শোষকশ্রেণীর বিরুদ্ধে নিপীড়িত কৃষকশ্রেণীর এই অসম সংগ্রামকে তাই কেবল 'উপজাতি বিদ্রোহ' বলে দাগিয়ে দেওয়া যেন 'উলগুলান'-এর গৌরবময় গাথাকে লঘু করে দেখার সামিল।

যে সমস্ত আদিবাসী বিদ্রোহ ইংরেজদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিল, ইংরেজদের কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রকৃত চিন্তার বিষয় তাদের মধ্যে অন্যতম মুন্ডা বিদ্রোহ। এই মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা ছিলেন বিরসা মুন্ডা, যাঁর হাত ধরে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে আদিবাসী জাগরণ সূচিত হয়েছিল। বিরসা মুন্ডা তাঁর অনুগামীদের কাছে ছিলেন 'ধরতি আবা' অর্থাৎ ভগবান।

১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর পূর্বতন বিহারের রাঁচির উলিহাতু গ্রামে বিরসা মুন্ডার জন্ম হয়।

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার অনেক আগে থেকেই মুন্ডা সহ অন্যান্য আদিবাসীদের কাছ থেকে জঙ্গল-জমি কেড়ে নেওয়ার খেলা শুরু হয়ে যায়। ব্রিটিশরাজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার সুবাদে বিদেশী কোম্পানিগুলোর পক্ষে লুঠ করার যেন এক ছাড়পত্র পেয়ে যায়। বর্তমানেও দেশী ও বিদেশী উভয় কোম্পানীর দ্বারা সেই লুঠ চলমান। সেই সময় গোটা অঞ্চল যেন বিবেকহীন ঠিকাদারদের কাছে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক সংগ্রহের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। অন‍্যদিকে চলে ভুখা আদিবাসীদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে শিক্ষা দেওয়ার নামে মিশনারিগুলোর ধর্মান্তরিত করার কাজ। নিজেদের বনভূমিতে যে তারাই পরাধীন, হাজার হাজার বছরের ধর্ম সংস্কৃতি থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করার যে বিশাল ষড়যন্ত্র চলছে; এ কথা খুব ছোট বয়সেই উপলব্ধি করেছিলেন বিরসা।

১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর পূর্বতন বিহারের রাঁচির উলিহাতু গ্রামে বিরসা মুন্ডার জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম সুগানা মুন্ডা এবং মায়ের নাম করমি বাহাতু। বিরসা মুন্ডার প্রাথমিক পড়াশোনা সালগা গ্রামে হয়। বাল্যকাল থেকেই বিরসার পড়াশোনার প্রতি ছিল দারুন আগ্রহ। নতুন কিছু শেখার এবং বাইরের জগতকে চেনার এক অদম্য ইচ্ছা ছিল তাঁর মধ্যে। কুন্তি ব্লকের সামলং স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী অবধি পড়ার পর বিরসা মুরজু ব্লকের বুরুজু উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস করেন। এরপর বিরসা চাঁইবাসায় লুথেরান জার্মান মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানে সপ্তম শ্রেণী অবধি পড়েন। চাঁইবাসার স্কুলে পড়ার সময় বিরসা খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম হয় 'ডেভিড দাউদ'। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বালক বিরসা আদিবাসী সমাজকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্তির জন্য চিন্তা করতেন।

১৮৮৬ সাল থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত বিরসা এবং তাঁর পরিবার চাঁইবাসাতেই বসবাস করত। একসময় জার্মান এবং রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিক্ষোভ শুরু হলে সেই আন্দোলনের রেশ গিয়ে পড়ল আদিবাসীদের মধ্যেও। স্বাধীনতা সংগ্রামের আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে সুগানা মুন্ডা বিরসাকে স্কুল থেকে সরিয়ে নিলেন। ১৮৯০ সালে চাঁইবাসা থেকে বিরসাকে নিয়ে সরদারদের প্রবল চাপে খৃষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে গ্রামে ফিরে আসেন তাঁর মা। এরপর ১৮৯১ সালে বান্দাগাঁও গ্রামে বিরসার সাথে পরিচয় হয় বান্দাগাঁওয়ের জমিদার জগমোহন সিংয়ের মুন্সী আনন্দ পাওরের, যার প্রভাবে বিরসা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন। ক্রমেই নিজ জাতিকে জাগ্রত করার দায়িত্ব বিরসা দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে শুরু করেন। বিরসা আদিবাসীদের তাঁদের মূল ঐতিহ্যবাহী উপজাতীয় ধর্ম 'সার্না পন্থা' অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। লোকের মুখে মুখে বিরসা হয়ে উঠলেন 'ধরতি আবা' অর্থাৎ ভগবান, জগৎ পিতা। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ১৮৯৫ সালে তিনি ঘোষণা করলেন এক নতুন ধর্মের যার মূল ভিত্তি ছিল একেশ্বরবাদী মুন্ডা ধর্ম। দলে দলে মুন্ডা, ওঁরাও, খরাই নরনারীরা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে পরিচিত হল 'বিরসাইত' নামে।

কোল সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বা সর্দারদের বলা হতো মুন্ডা বা গ্রাম প্রধান। এরা আদতে কোল সম্প্রদায়ের অংশ। প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী কোলরা সকলে মিলে বনজঙ্গল কেটে ও পরিষ্কার করে চাষবাস উপযোগী করে তোলে। তাদের মালিক রাজাও নয়, জমিদার নয়। মালিকানা ছিলো যৌথ। এটি খুন্তকান্টি ব্যবস্থা নামে পরিচিত। বনের ফলমূল,কাঠ,বেত প্রভৃতির অধিকার ছিলো কোলদেরই।

বিরসা মুন্ডা 'মুন্ডা বিদ্রোহে'র নেতা হিসেবে খ্যাত হয়ে আছেন। যদিও প্রথমেই তিনি হাতে অস্ত্র তুলে নেননি। কৈশোরে তাঁর হাতে থাকত একতারা আর কোমরে গোঁজা থাকত বাঁশি, প্রকৃতিও সাড়া দিত তাঁর বাঁশির শব্দে। কিন্তু অধিকারের লড়াইয়ে সেই হাতেই একসময় উঠে এল তীর ধনুক। মিশনারি স্কুলে থাকাকালীন বিরসা সরদারি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলেন আদিবাসীদের দুরাবস্থার জন্য একা দিকু (দিকু কথার অর্থ - 'শত্রু) অর্থাৎ ব্রিটিশরা দায়ী নয়, দেশীয় দিকুরাও ব্রিটিশদের সঙ্গ দিচ্ছে; আর তাই হয়ত নিজ বাসভূমে পরবাসী হয়ে আছে আদিবাসীরা।

ব্রিটিশরা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চেয়েছিল। তারা একে একে দখল করতে থাকে অরণ্য জমি। আদিবাসীদের দখলে থাকা জমিগুলি তাঁদের থেকে অন্যায় ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ১৮৯৪ সালে ব্রিটিশ সরকার অরণ্য আইন প্রবর্তন করে ভারতের বিস্তীর্ণ জঙ্গল মহলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিল আদিবাসীদের। হাজার হাজার বছর ধরে যে জঙ্গলের ওপর ভরসা করে জীবনযাপন করতেন আদিবাসীরা, সেই অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হল তাঁদের থেকে। যখন ছোটোনাগপুরের সংরক্ষিত বন দখল করার উদ্যোগ নিল ব্রিটিশ সরকার, সেই সময় জেগে উঠল সমগ্র পাহাড় জঙ্গল ও বিরসাইত বাহিনী। ব্রিটিশের বন্দুকের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে তীর-ধনুক নিয়ে লড়াই শুরু হল।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৮৯৫ সালে জেলা পুলিশ বিরসাকে বন্দী করে দুই বছরের কারাদণ্ড দিল। ১৮৯৭ সালের ৩০ নভেম্বর বিরসা মুক্তি পাওয়ার পর আবার নতুন করে শুরু হল বিদ্রোহের প্রস্তুতি। 'উলগুলান' বা স্বাধীনতা আনার জন্য চলতে থাকে প্রস্তুতি। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে রাঁচির দক্ষিণাঞ্চলে 'মুন্ডা বিদ্রোহ' সংগঠিত হয়। এই বিদ্রোহকে মুন্ডারি ভাষায় বলা হয় 'উলগুলান' যার অর্থ 'প্রবল বিক্ষোভ'। এই বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল মুন্ডা রাজ ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা; অন্যভাবে বলা গেলে মুন্ডা সমাজে অরণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা। মুন্ডা বাহিনীর প্রধান কেন্দ্র ছিল বর্তমান রাঁচি-জামশেদপুর হাইওয়ে থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাইল রাকাব গ্রামের ডোম্বরি পাহাড়। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে তাঁরা বেছে নিয়েছিল গেরিলা পদ্ধতি।

১৮৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাঁচি ও খুন্তি শহরে বিরসা বাহিনীর ঝটিকা আক্রমণে বেশ কিছু পুলিশসহ নিহত হলেন অনেক মানুষ, অগ্নিদগ্ধ হল শতাধিক ভবন। এই আক্রমণের জবাবে ব্রিটিশ সরকার ১৫০ সেনা নিয়ে আক্রমণ করল ডোম্বরি পাহাড়। কমিশনার ফোর্বস ও ডেপুটি কমিশনার স্ট্রিটফিল্ড আদিবাসীদের 'আবুয়া ডিসান'(স্বতন্ত্র শাসন) ধ্বংস করতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করলেন চারশো আদিবাসীকে। ডোম্বরি পাহাড়ে হওয়া এই নির্বিচার গণহত্যায় মৃতদেহের স্তূপ তৈরি হয়ে গেল। মৃতদেহের এই স্তূপ বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ডোম্বরি পাহাড়ের নামই হয়ে গেল মুন্ডাদের কাছে - 'টপ্ড বুরু' (মৃতের স্তূপ)।

বিরসাকে ব্রিটিশ পুলিশ ধরতে পারল না।

তবে বিরসাকে ব্রিটিশ পুলিশ ধরতে পারল না। সরকার ৫০০ টাকা ঘোষণা করল বিরসাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। ১৯০০ সালে চক্রধরপুরের যমকোপাই বনে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত অবস্থায় বন্দী হলেন বিরসা। বিরসাকে ধরিয়ে দেওয়ার ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। রোগাতো নামক এক স্থানে সভা শেষ করে সেনেত্রার জঙ্গলে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছিলেন বিরসা। ডোনকা মুন্ডার স্ত্রী সালি তাঁর জন্য ভাত রাঁধছিল। ভাত রাঁধার ধোঁয়া জঙ্গলের মাথার উপর দিয়ে দূর থেকে দেখা যায়। ব্রিটিশ পুলিশ সেই ধোঁয়া লক্ষ্য করে এগিয়ে আসে এবং অবশেষে মনমারু ও জারকাইল গ্রামের মানুষ কিছু টাকা এবং পেট ভরে দুটো খাওয়ার লোভে বিরসাকে ধরিয়ে দেয়। বিরসাকে বন্দী করে তাঁর বিচার শুরু হল। বিরসার সঙ্গে ৫৭১ জনের বিচার চলল। এঁদের মধ্যে তিন জনের ফাঁসি হল এবং ৭৭ জনের দ্বীপান্তর সহ কারাদন্ড। বিদ্রোহীদের রাঁচি জেলখানায় শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

১৯০০ সালের ৯ জুন মাত্র ২৫ বছর বয়সে রাঁচি জেলে বিষপ্রয়োগের ফলে বিরসা মুন্ডার মৃত্যু হয়। যদিও জেলের রিপোর্টে বলা হয় রক্ত বমি এবং আমাশার কারণে বিরসার মৃত্যু ঘটেছে। মুন্ডাদের কবর দেওয়া হয় অথচ বিরসাকে তড়িঘড়ি করে দাহ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল দুটো, এক তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ ধামাচাপা দেওয়া ও দুই সকল আদিবাসীদের বোঝানো যে বিরসা ভগবান নয় একজন সাধারণ মানুষ।

English summary
tribal leader birsa munda's protest put british in trouble
চটজলদি খবরের আপডেট পান
Enable
x
Notification Settings X
Time Settings
Done
Clear Notification X
Do you want to clear all the notifications from your inbox?
Settings X