ধর্ষকরা মুক্ত, 'আমাকে নির্ভয়ে, শান্তিতে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন', আর্জি বিলকিস বানোর
ধর্ষকরা মুক্ত, 'আমাকে নির্ভয়ে, শান্তিতে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন', আর্জি বিলকিস বানো
বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা টলিয়ে দিয়েছে। ধর্ষকদের মুক্তি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন বিলকিস বানো। তাঁর ৩ বছরের কোলের মেয়েকে হত্যা করে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যাঁরা তাঁকে ধর্ষণ করেছিল তাঁদের যাই শাস্তি দেওয়া হোক সেটা নগন্য বলেই মনে করেন বিলকিস। কিছুতেই গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে ১১ জনকে মুক্তি দেয় গুজরাত সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেেনই বিেশষ ক্ষমা আইনের আওতায় তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গুজরাট সরকার। বম্বে হাইকোর্ট তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ১৫ বছর জেল খাটার পরেই তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়।
গুজরাতে গোধরা কাণ্ডের পরেই যে দাঙ্গা হয়েছিল সেসময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়। তখন তিনি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাঁর চোখের সামনেই তাঁর পরিবারের ৭ জন সদস্যকে খুন করে ওই দোষীরা। তার মধ্যে তাঁর ৩ বছরের শিশুকন্যাও ছিল। ঘটনার বেশ কিছুদিন পর এক সমাজকর্মীর তৎপরতায় মামলা দায়ের হয়। আহমেদাবাদ হাইকোর্ট থেকে বম্বেতে স্থানান্তরিত করা হয় মামলাটি। সেখানেই ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল হাইকোর্ট।
হঠাৎ করে তাঁর দোষীদের মুক্তি দেয়ার ঘটনায় রীতিমত স্তম্ভিত বিলকিস বানো। তিনি বলেছেন, 'ধর্ষকরা মুক্তি পেয়ে ফিরেছে সমাজে। এই ঘটনায় ভারতের বিচারব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস নড়ে গিয়েছে। গত ২০ বছরের ট্রমা আমাকে আবার বিপর্যস্ত করে দিয়ে গেল। আমি শুনলাম যে ১১ জন দোষী ব্যক্তি, যারা আমার পরিবার এবং আমার জীবন ধ্বংস করেছে এবং আমার ৩ বছরের মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, তারা মুক্তি পেয়ে গেল, আমি হতবাক ছিলাম। আমি এখনও স্তব্ধ। আজ আমি শুধু এইটুকুই বলতে পারি, কোনও নারীর বিচার এভাবে শেষ হয় কী করে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে বিশ্বাস করতাম। আমি রাষ্ট্রের ওপর আস্থা রেখেছিলাম, এবং আমি ধীরে ধীরে আমার ট্রমা নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম'
বিলকিস বানো বলেছেন ধর্ষকদের মুক্তি তাঁর শান্তি কেড়ে নিয়েছে। তিনি আর্জি জানিয়েছেন যেন তাঁকে বাঁচার অদিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়। ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে তাঁদের মত অনেক মহিলা যাঁরা এই ধরনের নারকীয় অত্যাচারের মুখে পড়েছে তাঁদের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা চলে যাবে। এমনই মন্তব্য করেছেন বিলকিস বানো। তিনি তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে যাতে নিরাপদে রাখা হয় তা নিশ্চিত করার আর্জি জানিয়েছেন বিলকিস বানো।