নীতীশের প্রচারে 'মোদী মোদী' স্লোগান! এককালের কট্টর নরেন্দ্র-বিরোধী জেডিইউ নেতার স্টান্স এখন কেমন
বিহার নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট পর্বের প্রচার থেকেই সচেতনভাবে মোদী শিবির জানিয়ে দেয় যে বিজেপি ছাড়া নীতীশ ক্য়াম্পের সরকার গড়ার আর কোনও গতি নেই! সাসারামের জনসভা থেকেই বিহার নিয়ে বিজেপি কতটা মুখিয়ে রয়েছে, তা নীতীশ কুমারের সামনেই প্রকাশ করেন মোদী। এদিকে, বিহারে মোদীর জনপ্রিয়তায় ভর করে ভোট চাইতে বাধ্য হচ্ছেন স্বয়ং নীতীশও। কোন ভোটপ্রচার-গণিতে এগোচ্ছে বিহারে এনডিএর গতিপ্রকৃতি।
মোদীর নামে ভোট চাইতে বাধ্য হলেন নীতীশ!
যে মোদী বিরোধিতার জেরে এনডিএ থেকে প্রথমে মুখ ফিরিয়ে নেন নীতীশ এখন তিনি সেই মোদীর নামে ভোট চাইছেন।মোদীর হাওয়া জোরদার বিহারে। অন্তত প্রধানমন্ত্রীর একের পর এক জনসভা দেখে এমনই বার্তা উঠছে। এদিকে, পাটনাতে গতকাল মোদীর উপস্থিতিতে ছিল নীতীশের ভোট প্রচারের পর্ব। আর সেখানে 'মোদী মোদী' স্লোগান উঠতেই হাওয়া বুঝে যান বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। শেষে নীতীশ কুমারকে দেখা যায় মোদীর জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে বিহারে ভোট চাইতে!
নীতীশের বক্তব্য
'ওঁর (মোদীর) বক্তব্য শুনুন ... আপনারা যদি এনডিএকে সুযোগ দেন, তাহলে উনি আপনাদের রাজ্যকে পাল্টে দেবেন। বিহার অনেক আগে যাবে।' সচেতনভাবে পাটনার প্রচার সভায় নীতীশ কুমার 'এনডিএ'র সরকারে গঠনের কথা বলেন। 'নীতীশ সরকার' না বলে, তিনি বারবার 'এনডিএ সরকার' বলতে বাধ্য হন। কারণ এই সুর বিহারে ইতিমধ্যেই বেঁধে দিয়েছে বিজেপি। যার জোরদার হাওয়া গোটা গোবলয়ে।
বিজেপি ছাড়া গতি নেই নীতীশের!
বিজেপি বার বার তার প্রতিটি প্রচার সভায় নীতীশ কুমারকে পাশে বসিয়ে দলীয় প্রচার করেছে। মোদী নিজে একাধিক ভাষণে জানিয়েছেন, কেন্দ্রে তাঁর সরকার ছিল বলে নীতীশ কুমার গত ১৮ মাসে কাজ করতে পেরেছেন বিহারের জন্য। তার আগে নীতীশ কংগ্রেসের ইউপিএ আমল ও লালুর আরজেটডির সঙ্গে হাত ধরে উন্নয়ন করতে পারেননি বলেই কার্যত সভায় ইঙ্গিত দিতে থাকে বিজেপি।
বিহারের জনসভায় বিজেপির প্রচার ট্রেন্ড
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিহারে যতগুলি সভা এনডিএ প্রার্থীদের জন্য় বিজেপি করছে, তার সবকটিতে নিজের কার্যক্ষমতা ও নীতীশ কুমারের কার্যকারিতার খতিয়ান দিচ্ছে পদ্মশিবির। বিরোধীদের আক্রমণের থেকেও বিজেপি জোটে জেডিইউকে ধরে রাখা নিয়ে বেশ সচেতন প্রচার চালাচ্ছে বলে মত বহু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের।
'মোদীকেই শুনতে আসছেন সকলে...' নীতীশ বার্তা
বিহারের দ্বিতীয় দফার ভোট প্রচারে নীতীশ কুমারকে বলতে শোনা গিয়েছে,'মানুষ মোদীর কথা শুনতে আসছেন।' ফলে নীতীশের জনপ্রিয়তা যে মোদীর কাছে খাটো হচ্ছে , সেই আঁচ বিহারী মুখ্যমন্ত্রী টর পেয়েছেন। ফলে জোট ধরে রেখে ক্ষমতায় থাকতে বিজেপির চাপের কাছে জেডিইউ মাথা নোয়াতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ অন্যদিকে, কার্যত পাসওয়ানদের 'চিরাগ' ফ্যাক্টর প্রজ্জ্বলিত করে রেখেছে বিজেপি! এলজপি ,এনজিএর হাত ছাড়লেও বিহারে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছে। ফলে জেডিইউ সবমিলিয়ে আপাতত চাপে।
বিহারে মোদী হাওয়া ও ২০১৯ ভোটের খতিয়ান
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিহারে ৪০ টির মধ্যে ৩৯ টি আসন এনডিএ প্রার্থীরা মূলত মোদী সুনামিতে ভর করে জিতেছে বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এদিকে, ২০০৯ সালে একটা সময় নীতীশ নিজেই মোদীকে বিহারের আঙিনায় ভোট প্রচার থেকে সরিয়ে রাখেন। তবে ২০২০তে তা করার সাহস দেখাতে পারছেন না নীতীশ।
এককালের মোদী বিরোধী নীতীশ আজ...
' বিহারে যখন সুশীল মোদী রয়েছেন, তখন আর কোনও মোদীর প্রয়োজন নেই। ' ২০১০ সালের এক জনসভায় একথা বলেছিলেন নীতীশ কুমার। ঠিক যে সময় এনডিএর একটি নৈশভোজ নীতীশ বাতিল করেছিলেন , কারণ সেখানে নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত ছিলেন। ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার কারণে মোদীর প্রতি বীরশ্রদ্ধ হতে থাকেন নীতীশ। তারপর এনডিএর থেকে মুখও ফিরিয়ে নেন তিনি। এরপর গঙ্গা দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে। ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা ভোটে এসে সেই মোদীর নামে ভোট চাইতে হচ্ছে নীতীশকে।