'জগ্গা জাসুস' ডানা মেললেও থমকে গেল বিদিশার স্বপ্নের উড়ান, এক প্রতিভাবান অভিনেত্রীর করুণ কাহিনি
স্বপ্নকে তাড়া করে অসম থেকে মুম্বইয়ে এসে বাসা বেঁধেছিলেন বিদিশা বেজবড়ুয়া। স্কুলে পড়াকালীনই টিভি-তে বিনোদন অনুষ্ঠানের অ্যাঙ্কর হিসাবে সেলিব্রিটিদের সাক্ষাৎকার নিতেন। নামও হয়েছিল অনেক।
ভালবাসা। আর সেই ভালবাসার পিছনে পাগলের মতো দৌড়ে যাওয়া। শৈশব থেকেই সমানে এমন অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে এসেছিলেন বিদিশা বেজবড়ুয়া। মন যা চায় তাকে ধাওয়া করো। এটাই ছিল বিদিশার স্বপ্ন। আর দশটা-পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের মতোই শৈশব থেকে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে গান-নাচ-অভিনয় শিক্ষা পেয়েছিলেন বিদিশা। ছিপছিপে গড়ন, চাঁদপানা সৌন্দর্য আর নদীর মতো চঞ্চলা স্বভাবের জন্য সকলের কাছেই প্রিয় ছিলেন তিনি।[আরও পড়ুন:'জগ্গা জাসুস'-এর অভিনেত্রীর রহস্যমূত্যু, আত্মহত্যা না কি খুন, গ্রেফতার স্বামী]
কৈশোরেই টিভিতে বিনোদন অনুষ্ঠানের অ্যাঙ্কর হিসাবে বহু তাবড় তাবড় সেলিব্রিটিদের সাক্ষাৎকার নেওয়ারও সুযোগ ঘটেছিল তাঁর। এই কাজের জন্য গুয়াহাটি সহ অসমের বাকি অংশেও ভাল নাম এবং খ্যাতি পেয়েছিলেন। কিন্তু, অ্যাঙ্করিং-এর মধ্যে জীবনকে আটকে রাখতে চাননি। আরও বড় ক্যানভাসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
বিদিশার অভিনয় করা অসমিয়া নাটক 'শান্তশিষ্ট হৃস্টপুষ্ট মহাদুষ্ট' বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। সম্প্রতি দিল্লির রবীন্দ্রভবনেও এই নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। রুমি নামে একটি মেয়ের চরিত্রে বিদিশার অভিনয় রাজধানীতেও প্রংশিত হয়। এটাই ছিল অভিনেত্রী হিসাবে বিদিশার শেষ অভিনয়।
অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্দর নাচতেও পারতেন বিদিশা। প্রথাগত নাচের তালিমও পেয়েছিলেন ছোটবেলা থেকে। অ্য়াঙ্কারিং-এর সঙ্গে সঙ্গে অসমিয়া ভাষায় বিভিন্ন নাটক এবং টেলিভিশন ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছিলেন। রীতিমতো হিসেব কষেই বলিউডে পা বাড়িয়েছিলেন বিদিশা। সেভাবে বড় কোনও চরিত্রে অভিনয়ের অফার না পেলেও কাজ করতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে কিছুটা হলেও শিঁকে ছেড়েছিল 'জগ্গ জাসুস'-এ অভিনয়ের সুবাদে। ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ। নাচের দৃশ্যে ক্যাটরিনার সঙ্গে কাজ করার পর বিদিশারা সকলে মিলে ছবিও তুলেছিলেন। নিরন্তর লড়াই-এর পর 'জগ্গা জাসুস'-এ ব্রেক পেয়ে যেন আশ্বস্ত হয়েছিলেন বিদিশা। ভেবেছিলেন এবার হয়তো সত্যি সত্যি ইচ্ছেডানাটা টেক-অফ করল।
জীবন যে তাঁর জন্য অন্যকিছু সাজিয়ে রেখেছিল তা হয়তো ভাবতে পারেননি বিদিশা। চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটি শেষ এক বছর কার্যত ধাক্কা খেয়ে চলছিল। আর এর জন্য দায়ী ছিল তাঁর বৈবাহিক জীবন। যেভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে একদিন গুয়াহাটি থেকে বলিউডে এসে হাজির হয়েছিল কটন কলেজের ছাত্রীটি। সেই স্বপ্নের হাত ধরেই একদিন সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন বয়সে অনেকটাই বড় নীশীথ ঝা-এর সঙ্গে।
হয়তো ভেবেছিলেন তাঁর স্বপ্নের উড়ানে সঙ্গী হবেন নীশীথ। কিন্তু, গত এক বছরে ঠিক উল্টোটাই ঘটেছিল। পণের জন্য সমানে চাপ, স্বামীর নির্যাতন, শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচারে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন বিদিশা। গুয়াহাটির সাংস্কৃতিক- পরিমণ্ডল, নাচ-গান, বলিউড সব যেন ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছিল তাঁর কাছে। বাবা-মা-র কাছে বৈবাহিক জীবন নিয়ে বিস্তর অভিযোগও করেছিলেন বিদিশা। চূড়ান্ত মানসিক ধাক্কাটা খেয়েছিলেন যখন মুম্বই ছেড়ে তাঁকে অন্যত্র চলে আসতে বাধ্য করেছিলেন স্বামী নীশীথ।
আর দশ-পাঁচটা মধ্যবিত্ত মানসিকতার গৃহবধূর মতোই বিদিশা ভেবেছিলেন হয়তো বৈবাহিক জীবনের এটাই নিয়ম। কিন্তু, তাঁর ত্য়াগ যে কোনওভাবে স্বামী নীশীথকে বদলাতে পারবে না তা গুরুগ্রামে বসবাসকালে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল বিদিশার কাছে। স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত প্রেম সম্পর্কের কথা জেনে ভেঙে পড়েছিলেন।
যে সংসার ঠিক রাখতে বলিউডের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়েছিলেন বিদিশা তাতে যে আখেরে কোনও লাভ হয়নি তা বুঝতে পারছিলেন। বিদিশার বন্ধুদের একটাই প্রশ্ন। যে মেয়ে প্রবল লড়াকু। সে এমনভাবে নিজেকে শেষ করবে কেন? গুরুগ্রাম পুলিশ বিদিশার কোনও সুইসাইড নোট পায়নি। আত্মহত্য়ার মতো সিদ্ধান্ত নিলে বিদিশা কিছু লিখে যাবে না? এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর আত্মীয়-পরিজন থেকে বন্ধুরা। যে ফ্ল্যাট থেকে বিদিশার দেহ পাওয়া গিয়েছে সেখানে ৪৮ ঘণ্টা আগেই শিফট হয়েছিলেন। বিদিশার অকালে শেষ হয়ে যাওয়ার পিছনের আসল কারণটা কী? সেই সত্য কি আদৌ সামনে আসবে? না এক ব্যর্থ স্বপ্নের নায়িকা হয়েই ফোটো অ্য়ালবামে সেঁটে থেকে যাবেন বিদিশা?