লোহিতের রাজপুত্র পেল দেশের সর্বোচ্চ সম্মান, ভারতরত্নে ভূষিত ভূপেন হাজারিকা
লোহিতের কোণায় কোণায় আজও ভেসে বেড়ায় তাঁর সুর, তাঁর গান। কখনও যাযাবরের মতো আকাশের বুকে লিন হয়ে যায় এক ঝাঁক বুনো হাঁস।
লোহিতের কোণায় কোণায় আজও ভেসে বেড়ায় তাঁর সুর, তাঁর গান। কখনও যাযাবরের মতো আকাশের বুকে লিন হয়ে যায় এক ঝাঁক বুনো হাঁস। ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকার আকাশ-বাতাস মানুষকে গানের মাধ্যমে বিশ্বের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছিলেন ভূপেন হাজারিকা। আর তাঁর এই অন্যন্য অবদানের জন্য ভারতরত্নের মরণোত্তর সম্মানে ভূষিত হলেন তিনি।
ছোট থেকেই অসমিয়া ছবিতে শিশু শিল্পী হিসাবে কাজ করতেন ভূপেন। শ্যুটিং-এর ফাঁকে ব্রহ্মপুত্রের বিশাল জলরাশি, লোহিত-এর তিরে বসবাসকারী মানুষগুলো বা চা-বাগানের কুরি তোলা মহিলারা তাঁর মনকে ভাবিয়ে তুলত। আর এদের কথা ভেবেই মাত্র ১০ বছরে একটি গানও লিখে ফেলেছিলেন ভূপেন হাজারিকা।
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা জুড়ে মানুষের নিদারুণ কষ্ট, চা-বাগানের মালিকদের অত্যাচার বা ইংরেজদের চাবুকের আস্ফালন-সবই যেন মনের খাতায় তুলে রাখতেন ভূপেন হাজারিকা। আর অবসরে সেই মনের খাতা খুলে নেমে পড়ডতেন একের পর গান লিখনে। নিজেই সুর দিয়ে তৈরি করতেন এক অন্যন্য বার্তাবাহি গান। যা বয়ে নিয়ে যেত উজান অসমের মানুষের কথা। দেশভাগের সময় মানুষের দুঃখ বেদনা এবং উদ্বাস্তু হওয়ার জ্বালাকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন ভূপেন হাজারিকা। আর এই সব চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাই পরে তাঁর গান হয়ে বেরিয়ে আসত।
ভূপেন হাজারিকার গানে স্থানীয় লোকালয়ে একটা অনুপ্রেরণা অবশ্যই থাকত। কিন্তু, সবকিছুকেই ছাপিয়ে যেত গানের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি দৃঢ় প্রত্যয়ী বার্তা। মানুষের কথা বলতে ভালবাসতেন ভূপেন হাজারিকা। আর তার এই গানের জন্য বাঙালি খুঁজে পেয়েছিল দেশভাগে অব্যক্ত হয়ে থাকা কথাকে। তাই পিট সিগারের গান অনুবাদ করে বা সুর নিয়ে ভূপেন হাজারিকা যখন গান বেঁধেছেন তা শুধু অসম নয় ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার মাটিতে। সেই কারণে অসমিয়া হয়েও বাঙালি কোনও দিনই ভূপেন হাজারিকা নিজের জাতের বাইরে ভাবেননি।
'আমি এক যাযাবর', 'ও গঙ্গাঁ বইছো কেন'-র মতো গান অসমের সীমানা ছাড়িয়েও বাংলার মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজের একটা স্বতন্ত্র গায়িকি তৈরি করেছিলেন ভূপেন হাজারিকা। আর সেই গায়িকিতেই বুঁদ হয়ে থাকত মানুষ। উজান অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সাদিয়ায় ১৯২৯৬ সালে জন্ম ভূপেন হাজারিকার। ২০০৪ সালে অটলবিহরীর কাজে মুগ্ধ হয়ে বিজেপি-তে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। এরপর সেভাবে বিজেপি না করলেও কোনও দিনই নাম তুলে নেননি।
[আরও পড়ুন: ভারতরত্ন মরণোত্তর সম্মানে ভূষিত নানাজি দেশমুখ সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানুন ]
বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু, পড়াশোনার জীবনের থেকেও তাঁকে বেশি টানে গান। সেই কারণে গানকেই অবলম্বন করে নিয়েছিলেন ভূপেন হাজারিকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সম্পর্কে টুইটারে লিখেছেন, 'ভূপেন হাজারিকার তৈরি করা গান যে কোনও জেনারেশনের কাছে জনপ্রিয়। তিনি দেশের ঐতিহ্যশালী সঙ্গীতকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন। '
[আরও পড়ুন:পদ্ম সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন যাঁরা, একনজরে ২০১৯-এ গর্বের পুরস্কার প্রাপকদের তালিকা ]