ক্যানসারের কোষকে বাড়তে দেবে না, এমন যন্ত্র তৈরি করেছেন বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞানী
ক্যানসারের কোষকে বাড়তে দেবে না, এমন যন্ত্র তৈরি করেছেন বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞানী
ক্যানসার কোষকে বাড়তে দেবে না। এমনকী প্রোটিনের আস্ফালন থামিয়ে দেবে চিরদিনের মতো। স্তন ক্যানসার, লিভার ও অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার থেকে মিলবে মুক্তি। এমনই এক যন্ত্রের আবিষ্কার করে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছেন ভারতের এক বিজ্ঞানী। মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সেন্টার ফর ডিভাইস অ্যান্ড রেডিওলজিক্যাল হেল্থ এই যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, হংকং–সহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ক্যানসারের চিকিৎসায় সাফল্য পেয়েছে এই যন্ত্র। তবে এই যন্ত্র এখনও প্রবেশ করেনি ভারতে। সেটা শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
ক্যানসার চিকিৎসায় এই যুগান্তকারী পথ দেখাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞানী রাজা বিজয় কুমার। বর্তমানে তিনি 'সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভালপমেন্ট’ (কার্ড)–এর চেয়ারম্যান এবং চিফ সায়েন্টিফিক অফিসারের পদে রয়েছেন। বায়োফিজিক্স, ন্যানোটেকনোলজি–সহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করে এই সংস্থা। রাজেশ জানিয়েছেন, তাঁর তৈরি যন্ত্রের নাম 'সাইটোট্রন’। বিজ্ঞানীর দাবি, এই যন্ত্র ক্যানসার আক্রান্ত কোষের বিভাজন থামিয়ে দেয়। কোষের বাড়বৃদ্ধি বন্ধ করে গোটা শরীরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতেই এই যন্ত্রটি ভারতের হাসপাতালগুলিও ব্যবহার করবে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী মারণ রোগ হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে ক্যানসার। ক্যানসার আক্রান্ত কোষ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এই ধরনের ক্যানসার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রোগীকে বাঁচানো ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। বিগত প্রায় তিন শতক ধরে একমাত্র কেমোথেরাপিই ছিল এই ক্যানসারের প্রধান ওষুধ। যদিও কেমোথেরাপি ক্যানসারকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে না। রাজা জানিয়েছেন, 'সাইটোট্রন’ কেমোথেরাপির থেকেও উন্নত উপায়ে ক্যানসার কোষ নির্মূল করবে।
টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং অব ক্যানসার সেল নিয়ে বিজ্ঞানী রাজা বিজয় কুমারের গবেষণা বহু বছরের। ১৯৮৭ সালে প্রথম এমন একটি যন্ত্র বানানোর পরিকল্পনা করেন তিনি যার দ্বারা ক্যানসার কোষ নির্মূল করা যায় চিরতরে। জানিয়েছেন, ৩০ বছরের বেশি সময় লেগেছে এই যন্ত্র বানাতে। ভোপালের 'সেন্টার অ্যান্ড অ্যাডভান্সড রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট’–এ শুরু হয় 'সাইটোট্রন’ বানানোর কাজ। ২০১২ সালে যন্ত্রের পেটেন্ট পেয়ে যান রাজা। ক্যানসার ও আর্থ্রাইটিস রোগীদের উপর কাজ করতে শুরু করে 'সাইটোট্রন’। ২০১৫ সালে মার্কিন মুলুকে এই যন্ত্রের পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য অনুমতি পান তিনি। জানিয়েছেন, এখনও অবধি বিশ্বের অনেক দেশেই সফল ভাবে কাজ করেছে 'সাইটোট্রন’। ৩০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে এই যন্ত্র বানাতে, বলেছেন বিজ্ঞানী রাজা। এটি দেখতে এমআরআই স্ক্যানার মেশিনের মতো। 'রোটেশনাল ফিল্ড কোয়ান্টাম নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স’ পদ্ধতিতে কাজ করে 'সাইটোট্রন’। এটি একধরনের রেডিও–ফ্রিকোয়েন্সি টুল যা টার্গেট কোষকে ভাল করে নিরীক্ষণ করে 'ফার্স্ট–রেডিও–বাস্ট’ (এফআরবি) পদ্ধতিতে। তারপর কোষের ক্ষত সারানোর কাজ শুরু হয়। তিনি জানিয়েছেন, এই যন্ত্র 'পি–৫৩’ প্রোটিনের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ করে দেয়। ফলে কোষ বিভাজনও একটা সময়ের পরে থেমে যায়। এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু চিকিৎসায় কার্যকরী হয়েছে এই পদ্ধতি। ইউরোপ, মেক্সিকো, আমেরিকা, মালেশিয়া ও গুলফে এই যন্ত্র ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন বহু মানুষ।