বিনামুল্যে ১৬ কোটি টাকার ওষুধ! জীবন ফিরল ছোট্ট দিয়ার
বিনামুল্যে ১৬ কোটি টাকার ওষুধ! জীবন ফিরল ছোট্ট দিয়ার
কথাতেই বলে রাখে হরি মারে কে। ভাগ্যের চাকা কার কখন কীভাবে খুলবে তা হয়ত কেউ জানে না। ঠিক তেমনই উদাহরণ বেঙ্গালুরুর দম্পতি নন্দগোপাল ও ভাবনা। তাঁদের কন্যা সন্তানের মাত্র ১১ বছর বয়স। কিন্তু তাকে নিয়েই মহা সমস্যায় পড়েছিলেন তার মা বাবা। মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে এককথায় হিমশিম খেতে হচ্ছিল নন্দগোপাল ও ভাবনাকে। কীভাবে অর্থ পাবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেননা তাঁরা। কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকলে সবকিছুই সম্ভব তা এখন বুঝতে পারছেন এই দম্পতি।
বিরল রোগে আক্রান্ত খুদে
বেঙ্গালুরুর নন্দগোপাল ও ভাবনার কন্যা দিয়ার বয়স মাত্র ১১ মাস। কিন্তু জন্মের পর থেকেই 'টাইপ 2 স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি' নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত। মাত্র ৭ মাস বয়সে প্রথম দিয়ার এই রোগের উপসর্গ সামনে আসে। তার মা ভাবনা একজন পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপিস্ট। তিনিই প্রথম লক্ষ্য করেছিলেন যে তাঁর শিশুর স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি উপসর্গ রয়েছে। এরপর দিয়াকে বেঙ্গালুরুর ব্যাপটিস্ট হাসপাতালের একজন এসএমএ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে আসেন ভাবনা। রক্তের নমুনা দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর চলতি বছরের ২ অক্টোবর তার বাবা-মা জানতে পারেন দিয়ার এসএমএ আছে। এরপর আরও ভালো পরীক্ষার জন্য দিয়ার সব নমুনা নেদারল্যান্ডস - নোভারটিসে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি কী?
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি হল এমন একটি বিরল জেনেটিক রোগ, যা শিশুদের বাড়ন্ত পেশী গুলিকে দুর্বল করে দেয়। ফলে সেগুলি একটা সময়ের পর তাদেরর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। সময় মত এই রোগের চিকিৎসা না হলে পর্যাপ্ত জিনের অভাবের কারণে সরাসরি দেহের ভিতরের বায়ু সঞ্চালন নিউরোন বা স্নায়ুতত্রকে আঘাত করে। যার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা, নড়াচড়া করতে না পারা, পেশীর কার্যকারিতা হারিয়ে যেতে থাকে। এবং প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের মৃত্যু হতে পারে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর।
নন্দগোপাল দম্পতির প্রয়াস
নিজের একরত্তি কন্যা সন্তান দিয়ার এই বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পর এক অভিনব প্রয়াস শুরু করেন নন্দগোপাল ও ভাবনা। এম এ পি-র মাধ্যমে যাতে তাঁরা বিনামুল্যে ওষুধ পেতে পারেন তার জন্য ক্রাউডফান্ডিং প্রচারাভিযান শুরু করেছিলেন দিয়ার বাবা মা। এককথায় তাঁদের মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরেও তাঁরা ভেবে পাচ্ছিলেন না কীভাবে ছোট্ট দিয়ার ওষুধ ও চিকিৎসার খরচ চালাবেন। আর তার মধ্যেই এল সুখবর। প্রচার শুরু করার মাত্র ৪-৫ দিনের মধ্যেই বিপুল সারা পেতে থাকেন এই দম্পতি। ওষুধের খরচের জন্য জোগার হয় প্রায় ২.৭ কোটি টাকা। আর গত ১৮ নভেম্বর তাঁরা জানতে পারেন এই বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত করা হয়েছে দিয়ার নাম।
নোভারটিস 'লটারি'তে ভাগ্য পরিবর্তন
নভেম্বরের ১৮ তারিখ একটি অপ্রত্যাশিত ফোন পান বেঙ্গালুরুর এই দম্পতি। সেখানে তাঁদের জানানো হয় তাঁদের মেয়ে দিয়া নোভারটিস 'লটারি' জিতেছে। নোভারটিস জোলজেনসমা আসলে এমন ওষুধ তৈরি করে যা স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি রোধ করে। ওষুধটি শুধুমাত্র দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া যেতে পারে এবং শিশু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি গ্রহণ করলে এটি আরও ভাল।সংস্থার পক্ষ থেকে ১৬ কোটি টাকার ওষুধ বিনামুল্যে পাবে দিয়া। যা স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি-র চিকিৎসায় তাকে সাহায্য করবে। আর এই ঘটনায় আনন্দে এককথায় বাক্রুদ্ধ দিয়ার বাবা মা।