৩০০ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো বেঙ্গালুরুর বুকে ধরে রেখেছে মজুমদার পরিবার
সময়টা তখন প্রাক স্বাধীনতা যুগ। বাংলাদেশ তখন ভারতের অংশ। দেশ জুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের মশাল ধীরে ধীরে ইতিউতি জ্বলতে শুরু করেছে।
সময়টা তখন প্রাক স্বাধীনতা যুগ। বাংলাদেশ তখন ভারতের অংশ। দেশ জুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের মশাল ধীরে ধীরে ইতিউতি জ্বলতে শুরু করেছে। এমনই এক সময়ে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের লাওটিয়া গ্রামে শুরু হয় লাহিড়ি-মজুমদার পরিবারের দুর্গাপুজো। ধুমধাম সহকারে কাশের বনের পথ ধরে তখন প্রতিমা চলে যেত মজুমদার পরিবারের ঠাকুর দালানে। আনুমানিক ৩০০ বছরের এই দুর্গাপুজো, স্বাধীনতা, দেশভাগের অধ্যায় পেরিয়ে আজ বেঙ্গালুরুতে।
পুজোর আরম্ভ
ময়মনসিংহের লাওটিয়া গ্রামের বাড়িতে এই পুজো শুরু করেন ভবানন্দ লাহিড়ি মজুমদার। আর সেই পুজোকে একাধিক পর্ব পার করে বেঙ্গালুরুর বাড়িতে ধরে রেখেছেন মজুমদার পরিবারের সদস্যরা। বেঙ্গালুরুর রথীন মজুমদারের বাড়িতে এখন আয়োজিত হয় এই দুর্গাপুজো।
মজুমদার পরিবারের পুজো
পুজো ঘিরে কথা বলতে গিয়ে মজুমদার বংশের অন্যতম সদস্য রথীন বাবু জানান, বাংলাদেশ থেকে আসার পর প্রথমে অসমে আয়োজিত করা হত এই পুজো। কারণ মজুমদার পরিবারের কিছু সদস্য সেই সময়ে সেখানে ছিলেন। পরবর্তীকালে ১৯৫০ সাল থেকে কলকাতার পর্ণশ্রীর বাড়িতে আয়োজিত হয় এই পুজো। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার,নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার ও শুভ্রেন্দ্রনাথ মজুমদার। সেই পুজো আয়োজন করতেন। এরপর পুজোর আয়োজন কলকাতায় ধরে রাখতে কিছুটা সমস্যায় পড়ে পরিবার। তখনই বেঙ্গালুরুতে পুজোর আয়োজন করেন রথীন মজুমদার। এমনই বহু ঘটনার কথা জানালেন রথীন মজুমদার ও তাঁর স্ত্রী ক্যামেলিয়া।
বাড়ির ইতিহাস
বাড়ির ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রথীন মজুমদার জানালেন, ' মোঘল আমলে জমিদারদের 'মজুমদার' উপাধি দেওয়ার চল ছিল। সেই সময় আমরাও সেই উপাধি পাই। তবে মূলত আমরা লাহিড়ি। তাই বাংলাদেশে আমাদের বাডি়র পুজোর লাহিড়ি-মজুমদার বাড়ির পুজো হিসাবেই বিখ্যাত ছিল।'
বেঙ্গালুরুতে পুজোর ঠিকানা
বেঙ্গালুরুর দেদাকামানাহাল্লির আনন্দ বাল্মিক ফ্ল্যাটে মজুমদার দম্পতি আজও আয়োজন করেন এই পুজোর। গত ৭ বছর ধরে তাঁরা বেঙ্গালুরুতে রয়েছেন। আর গত বছর থেকেই চালু হয়েছে এই 'বাড়ির পুজো'।
পুজোর বৈশিষ্ট
এই পুজোতে শুধুমাত্র মা দুর্গার মূর্তিকেই পুজো করা হয়। লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ বা কার্তিক কেউই থাকেন না প্রতিমায়। কেবলমাত্র মাতৃ আরাধনাতেই নিয়োজিত থাকে মজুমদার পরিবার। এই পুজোর আয়োজন কেবলমাত্র নবমীর দিন হয়ে থাকে। এককালে পুজো উপলক্ষ্যে 'বলি'র প্রচলন থাকলেও, এখন তা চালকুমড়োর বলি হিসাবে পুজোয় উঠে আসে। প্রথা মেনে এখানে 'কুমারী পুজোর'-ও প্রচলন রয়েছে। পুজোয় এক একটি দিন একএক রকমের ভোগেরও আয়োজন হয়। রথীন মজুমদারের স্ত্রী ক্যামেলিয়া মজুমদারের কথায়, মায়ের ভোগে নবমীর দিন আমিষ হিসাবে মাছও রাখা হয়, তবে তা আলাদা করে রাখা হয়।