আয়ুর্বেদ বনাম অ্যালোপ্যাথি! রামদেব ইস্যুতে ক্রমেই চওড়া হচ্ছে কেন্দ্র-আইএমএ সংঘাতের রাস্তা
আয়ুর্বেদ বনাম অ্যালোপ্যাথি! রামদেব ইস্যুতে ক্রমেই চওড়া হচ্ছে কেন্দ্র-আইএমএ সংঘাতের রাস্তা
চিকিৎসাশাস্ত্রের দুই ভিন্ন বিভাগের টানাপোড়েনে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাপদ্ধতিকে নিয়ে যোগগুরু বাবা রামদেবের বক্তব্যের জেরে ইতিমধ্যেই ঝড় উঠেছে নানা মহলে। অন্যদিকে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের তরফে আসরে নেমেছে দেশের বৃহত্তম চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। আইএমএ-র প্রায় ১,৭০০ স্থানীয় বিভাগের প্রায় ৩.৫ লক্ষ সদস্যের তরফে দেশের ভিন্ন ভিন্ন থানায় ইতিমধ্যেই রামদেব বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে খবর। স্বাভাবিকভাবেই আইএমএর প্রতিক্রিয়ার পর একরকম বাধ্য হয়েই রামদেবকে সর্বসমক্ষে ভর্ৎসনা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, মত রাজনীতিকদের। ইতিপূর্বে কেন্দ্রের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন গড়া হোক বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের শল্যচিকিৎসার অনুমতি, সব বিষয়েই সরব হয়েছে আইএমএ।
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাকে 'খুনে' তকমা রামদেবের
করোনা আবহে যেখানে একজোট হয়ে লড়াই করছেন দেশের সকল স্বাস্থ্যকর্মী, সেখানে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিষয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করে ফাঁপরে রামদেব। অ্যালোপ্যাথিকে 'জঘন্য' ও 'দেউলিয়া' বিজ্ঞান বলার পাশাপাশি যোগগুরুর মন্তব্য, "টিকার দুই ডোজ নিয়েও মৃত ১০,০০০ চিকিৎসক। অ্যালোপ্যাথি বিজ্ঞানের জেরে মৃত দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিক।" অন্যদিকে চিকিৎসকমহলে যে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের অপেক্ষায় রয়েছে, তা স্পষ্ট করেছেন আইএমএর সেক্রেটারি জেনারেল ডঃ জয়েশ লেলে।
"সরকারের উচিত অবস্থান স্পষ্ট করা!"
অন্যদিকে অ্যালোপ্যাথি বিজ্ঞানের পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতির উপরেও যে সরকারের নজর দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন অ্যালায়েন্স অফ ডক্টরস ফর এথিকাল হেলথকেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ অরুণ গ্যাডার। ডঃ গ্যাডারের মতে, "এই সময় আমাদের প্রধান লক্ষ্য ভ্যাকসিন। আর সেটা পেতে গেলে সরকারের উচিত সকল সম্ভাবনাকেই খতিয়ে দেখা।" যদিও বিশ্ব জনস্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিক্রম প্যাটেলের সাফ কথা, "সরকার যুক্তি নির্ভর বিজ্ঞানের তরফে, কোনো মেকি-বিজ্ঞানের পক্ষে নয়। সে বিষয়ে এখনই প্রশাসনিক অবস্থান স্পষ্ট করে উচিত।"
রামদেবের টিকাবিরোধী মন্তব্য কতটা বিপজ্জনক?
ইতিমধ্যেই আইএমএ বনাম রামদেব নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। স্বভাবতই নিজেদের নাম কোনোরকমের রাজনৈতিক রঙের সাথে যুক্ত করতে নারাজ আইএমএর অধীনস্থ চিকিৎসকমহল। আইএমএ-র প্রাক্তন প্রধান ডঃ রবি ওয়াংখেরকরের বক্তব্য, "আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নই। তবে রামদেবের টিকাবিরোধী মন্তব্য অতীব বিপজ্জনক।" পাশাপাশি মোদী সরকারের তত্ত্বাবধানে রুরাল মেডিসিনের মত 'অবৈজ্ঞানিক' বিষয়ে স্নাতক কোর্সের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে চিকিৎসকমহল।
সংঘাতের আবহে কেন্দ্র-আইএমএ
রামদেব-বিতর্কে নতুন মাত্রা পেয়েছে আইএমএ প্রধানের বক্তব্যে। সম্প্রতি ডঃ জে এ জয়লালের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার করার অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই নানাবিধভাবে প্রাণনাশের হুমকি উড়ে এসেছে তাঁর দিকে, জানিয়েছেন ডঃ জয়লাল। যদিও অবশেষে সরকারের অবস্থানে যে খুশি তিনি, তাও জানিয়েছেন সর্বামক্ষে। অন্যদিকে কোভিড আবহে মৃত ১,২০০ চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ২০০ জনের পরিবারকে কেন সরকারি সাহায্য দেওয়া হল, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্কের আবহকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে আইএমএ।