কীভাবে গঠিত হয় বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি, এর ভবিষ্যৎ কী হবে আগামিদিনে?
কয়েক দশকের অযোধ্যা বিবাদ মামলা শেষের পথে। এই মামলার অনেক পক্ষের মধ্যে অন্যতম হল মুসলিমদের তরফে সওয়ালকারী বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি। কমিটিটি গঠিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে।
কয়েক দশকের অযোধ্যা বিবাদ মামলা শেষের পথে। এই মামলার অনেক পক্ষের মধ্যে অন্যতম হল মুসলিমদের তরফে সওয়ালকারী বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি। কমিটিটি গঠিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। তবে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির স্থাপনের পরিকল্পনা শুরু হয় এরও কয়েক বছর আগের থেকেই। সালটা ১৯৮৩। কয়েক মাস আগেই সমস্তিপুরে রথযাত্রা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। জাফারিয়াব জিলানি নামক এক আইনজীবীকে ডেকে পাঠান লখনউয়ের নাম করা ইসলাম বিষয়ক বিদ্যান। নাম আলি মিঞা। তিনি লখনউয়ের ইসলামিক সেমিনার নাদওয়া কলেজে অধ্যাপনা করতেন। আলি মিঞা ২ হাজার টাকা দিয়ে জিলানিকে এই মামলা সংক্রান্ত নথি সাজাতে বলেন। সেই থেকেই মোটামুটি অ্যাকশন কমিটির কাজের সূচনা।
তবে সুপ্রিম কোর্টে চলা অযোধ্যা মামলাটি কোনও একটি সংস্থার গল্প নয়। রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিবাদ মামলাটি স্বাধীন ভারতের অন্যতম বিতর্কিত ও বহুলচর্চিত মামলাগুলির অন্যতম। অবশ্য এই জমিটি নিয়ে বিবাদ শুরু ১৮৫৭ সালে। বাবরি মসজিদের তৎকালীন মৌলবি মুহম্মদ আসগার একটি হলফনামা জমা দিয়ে অভিযোগ করেন যে, মসজিদের একাংশ দখল করেছে হনুমানগর্হিরা। এর দুই বছর পর ব্রিটিশ সরকার একটি দেওয়াল তুলে মুসলিম ও হিন্দুদের উপাসনা স্থানটিকে পৃথক করে দেয়। সেই দেওয়ালের ফলে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সেই স্থানে নির্বিঘ্নেই উপাসনা করেছে দুই সম্প্রদায়। গোল বাঁধে ১৯৪৯ সালের ২২ তারিখ রাতে। হঠাৎ করেই মসজিদে দেখা যায় রাম-সীতার মূর্তি। এই ঘটনার ৬ দিন পর বাবরি মসজিদকে বিতর্কিত জমি হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
১৯৪৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত বিবাদের মামলাটি ঝুলে থাকে ফৌজাবাদের দায়রা আদালতে। এরপর মামলাটি তোলা হয় এলাহাবাদ হাইকোর্টে। এর দুই বছর পর মামলাটি হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে এরপরও বহু বছর মামলায় কোনও অগ্রগতি হয়নি। এদিকে রাম জন্মভূমি আন্দোলন ঘিরে রাজনীতির পালে ধীরে ধীরে হাওয়া বইতে শুরু করে। এমনই এক সময় আলি মিঞা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
১৯৮৬ সালের ২ জানুয়ারি। ফৈজাবাদের আদালত বাবরি মসজিদের দরজা খোলার নির্দেশ দিল। এর সঙ্গে সঙ্গেই এই বিষয়ে পরবরতী রূপরেখা তৈরি করতে বিশেষ বৈঠক ডাকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম ল বোর্ড। এরপর ৬ জানুয়ারি ২০০ জনের উপস্থিতিতে গঠিত হয় বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির। এতে শামিল ছিলেন বর্তমানে রামপুরের সাংসদ তথা সমাজবাদী পার্টি নেতা আজম খান সহ বেশ কয়েকজন সমাজবাদী নেতা। ছিলেন কংগ্রেসের বিধায়কও।
সেই বৈঠকেই আজম খান ও জিলানিকে কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হয় মুজাফ্ফর হুসেনকে। এরপর ধীরে ধীরে এই কমিটির তত্বাবধানেই বিজেপির রাম জন্মভূমির দাবি বিরোধিতায় নামে মুসলিমরা। তবে পরিস্থিতি বদলে যায় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেদিন বাবরি মসজিদ ভেঙে যাওয়ার পর অ্যাকশন কমিটির লক্ষ্যে পরিবর্তন আসে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন মুসলিম পক্ষের হয়ে প্রথমে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ও পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করে এই কমিটি।
এদিকে খুব সম্ভবত বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত মামলার আইনি লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হতে চলেছে আগামী মাসেই। আজই মামলার শুনানির শেষ দিন। এরপর কমিটির ভবিষ্যৎ কোন দিকে তা জানা নেই কারুর। এই বিষয়ে জিলানি নিজে বলেন, "খুবই স্বাভাবিক যে পরিস্থিতি আর আগের মত থাকবে না।" অনেকেই মনে করছেন, মামলার রায়দানের পর হয়ত এই কমিটির স্থান তখন হবে ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসের কোনও এক পাতায়।
সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার পারদ তুঙ্গে! হিন্দু মহাসভার পেশ করা 'ম্যাপ' ছিঁড়ে দিলেন আইনজীবী
অযোধ্যা মামলায় মধ্যস্থতা নিয়ে তথ্য পেশ প্যানেলের, এবার নজর শীর্ষ আদালতের দিকে