ইন্দিরা গান্ধীকে ‘মা দুর্গা’ মনে করতেন বাজপেয়ী! প্রতিপক্ষকে সম্মান প্রদর্শনেও ‘অনন্য’
অটলবিহারী বাজপেয়ীর আগে এবং পরে ক’জন নেতা বা নেত্রী এরকম প্রাণখোলা প্রশংসা করতে পেরেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীর বিরুদ্ধে! এমন নাম খুঁজে পাওয়া ভার। বাজপেয়ী এই জন্যই অনন্য।
ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেকে অজাতশত্রু রূপে প্রতিপন্ন করেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। বিরোধীদেরও কীভাবে মর্যাদা দিতে হয়, তা শিখিয়েছিলেন তিনি। অটলবিহারী যে মর্যাদায় প্রতিপক্ষ ইন্দিরা গান্ধীকে ভূষিত করেছিলেন, কোনওদিন বিরোধী কোনও নেতার মুখে তা শোনা যায়নি। আজকের রাজনীতিকে বাজপেয়ীর এই পথ অনুসরণ করা বড় জরুরি।
নিছক সৌজন্যের রাজনীতি নয়, অটবিহারী সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে ভালোবাসতেন। সেইজন্যই তো সংসদে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষ ইন্দিরা গান্ধীকে'মা দুর্গা'নামে অভিহিত করেছিলেন। ছিলেন প্রবল কংগ্রেসবিরোধী। তবু সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। ১৯৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তি-যুদ্ধের পর সংসদে দাঁড়িয়ে অটলবিহারীবাজপেয়ী 'দুর্গা' রূপে বর্ণনা করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকাকে।
[আরও পড়ুন: শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালেন অমিতাভ থেকে লতা , অটলবিহারীর প্রয়াণে শোকাহত বলিউড ]
অটলবিহারী বাজপেয়ীর আগে এবং পরে ক'জন নেতা বা নেত্রী এরকম প্রাণখোলা প্রশংসা করতে পেরেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীর বিরুদ্ধে! এমন নাম খুঁজে পাওয়া ভার। বাজপেয়ী এই জন্যই অনন্য। এদিন বাজপেয়ীকে একইভাবে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বাজপেয়ীকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, সেদিন বাজপেয়ীকে দেখে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল। সেই কারণেই বাজপেয়ীর বাড়িতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন সুব্রত।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, আমার প্রিয় নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। আমি ইন্দিরা গান্ধীর অন্ধ ভক্ত। কিন্তু বাজপেয়ী ছিলেন অনন্য। তাঁর অমায়িক মনোভাব, সরলতা, আন্তরিকতা শুধু আমাকে নয়, বিরোধী সব নেতাকেও আকর্ষণ করত। তিনি নিজেক অজাতশত্রু হিসেবে প্রতিভার করেছিলেন। বিজেপি বিরোধী হলেও অধিকাংশ নেতা-নেত্রী বাজপেয়ী বিরোধী ছিলেন না। সকলের কাছ থেকেই তিনি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ইন্দিরার পর অটলই বাইরের নেতা হিসাবে এত ভালোবাসা পেয়েছেন বাংলায় ]
শুধু ইন্দিরা গান্ধীকে 'মা দুর্গা' নামে অভিহিত করাই নয়, কলকাতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে মা গায়ত্রীদেবীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। কত বড় মনের মানুষ হলে তবে এই কাজ করতে পারেন একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও, তা দেখিয়েছেন অটবিহারী বাজপেয়ী। অটলবিহারী বাজপেয়ীর ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবোধ, বাগ্মীতা তো ছিলই, সেইসঙ্গে ছিল তাঁর সরলতা, উদারমনস্কতা, অমায়িকতা, আন্তরিকতা। এক অনন্য মেলবন্ধন ছিল বাজপেয়ীর মধ্যে, যা তাঁকে অতুলনীয় করে তুলেছিল।
[আরও পড়ুন: ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দুটি বিশেষ রেকর্ড গড়েছেন অটল বিহারী বাজপেয়ী]