এনআরসি-তে বাদ প্রায় চুয়াল্লিশ লক্ষ! ক্ষুব্ধ নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতি, পথে নেমে এবার আন্দোলন
জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ বা এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ অসমের নাগরিক রক্ষা সমন্বয় সমিতি। নতুন খসড়া তালিকাটি ভালো করে খতিয়ে দেখছে তারা।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ বা এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ অসমের নাগরিক রক্ষা সমন্বয় সমিতি। নতুন খসড়া তালিকাটি ভালো করে খতিয়ে দেখছে তারা। নাগরিক রক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানান, বিশেষ একটি জাতি গোষ্ঠীর জন্য অসহিষ্ণুতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে, সেটা হতে পারে না। আর এই অসহিষ্ণুতার শিকার হবে অন্য জাতিগোষ্ঠী এ কেমন কথা।
তিনি জানান, 'এর আগেও আমরা বলে এসেছি এনআরসি-র জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সেটা এনআরসি-র এই তালিকায় আরও প্রমাণিত। কারণ এনআরসি-র তালিকা থেকে বাদ যাওয়া এমন সব মানুষ আছেন যাদের বৈধ কাগজ-পত্র রয়েছে।' এনআরসি তালিকা থেকে যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে তাঁদের জন্য ১ মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। এই এক মাসের মধ্যে এঁরা এনআরসি-র কাছে আবেদন করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি রাখতে পারবেন।
এই ১ মাসের সময়সীমায় আদৌ কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তপোধীর ভট্টাচার্য। পুরো তালিকাটা তাঁরা ইতিমধ্যেই সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন তপোধীর ভট্টাচার্য। তালিকায় কী ধরনের প্যাটার্নকে স্থান দেওয়া হয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর।
এনআরসি নিয়ে নানা ধরনের রাজনীতি হচ্ছে বলেও মনে করছেন তিনি। তাঁর মতে এনআরসি-তে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমরা। মাঝে মাঝেই বলা হচ্ছে অসমের আরও অন্য যে সব হিন্দু জনগোষ্ঠী-র লোকেদের নাম বাদ গিয়েছে তাঁদের সঙ্গে বাঙালি হিন্দুদের এক হয়ে যেতে। তাহলে হয়তো এনআরসি-তে সব হিন্দুর নাম ঢুকে যাবে। তাহলে মুসলিম কী দোষ করলেন? নাগরিক সমন্বয় সমিতির অভিযোগ ধর্মের নাম করে এইভাবে একটা জাতির অস্বিস্তকেও সঙ্কটে ফেলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু, এর বিরুদ্ধে তারা লড়াই করবে বলেই জানিয়েছে নাগরিক সমন্বয় সমিতি।
এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই নাগরিক সমন্বয় সমিতি সভা করতে চলেছে বলেও জানিয়েছেন তপোধীর ভট্টাচার্য। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে গণপ্রতিবাদ মিছিলেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
নাগরিক সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীতিশ ভট্টাচার্যও এনআরসি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও গণ বিক্ষোভকে হাতিয়ার করেই এনআরসি-র খসড়া তালিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলাওয়াড়ি এনআরসি-র তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বোঝার চেষ্টা চলছে কী ভাবে বাদ দেওয়ার কাজটা হয়েছে। নীতিশ ভট্টাচার্যের অভিযোগ এনআরসি আবেদন করার সময় বারবার বিভ্রান্তির মুখে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। বারংবার নোটিফিকেশন চেঞ্জ করা হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে গরীব ও অশিক্ষিত মানুষ।
এনআরসি-র তালিকা থেকে এমন বহু মানুষের নাম বাদ চলে গিয়েছে বলে সন্দেহ করছে নাগরিক সমন্বয় সমিতি। রবিবার-ই এনআরসি-র তালিকা নিয়ে একটা মিটিং হয়। মঙ্গলবার, বুধবারেও পরপর মিটিং ডাকা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নীতিশ ভট্টাচার্য। গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দিকে দিকে মানুষকে নিয়েই আন্দোলনে নামা হবে বলেই জানিয়েছেন। বারাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্যি ও সংস্কৃতি সম্মেলন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নীতিশ ভট্টাচার্য। তাই বারাক অঞ্চলে প্রতিবাদে একটা বড় ভূমিকা নিচ্ছে এই সংগঠন। যে ভাবে প্রায় ৪৪ লক্ষ মানুষকে রাষ্ট্রহীন করে দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
[আরও পড়ুন:অসমের নাগরিকপঞ্জী বিতর্কে মুখ খুললেন রাহুল গান্ধী, তুলোধোনা বিজেপিকে ]
এনআরসি-র তালিকার আপডেট তালিকায় বাঙালিদের নাম দেওয়া নিয়ে আন্দোলন দানা বেঁধেছিল অসমে। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আন্দোলন শক্তিশালী হয়েছে। যার জেরে নাগরিক রক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। এমনকী তাঁর ও তাঁর পরিবারের নাম এনআরসি-র তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তপোধীরকে ডি-ভোটার বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ, অসমের শিক্ষা ও সাহিত্য মহলে তপোধীর ভট্টাচার্য এক পরিচিত নাম। তিনি অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরও ছিলেন। লেখক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ হিসাবে তিনি পরিচিত। নাগরিক রক্ষা সমন্বয় সমিতির মঞ্চের আরও বহু সদস্যকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। থানায় নিয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হচ্ছে। কিন্তু, দমতে রাজি নন তপোধীর, নীতিশরা। গণ আন্দোলনে নিজভূমে পরবাসী হওয়ার যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
[আরও পড়ুন:বিজেপি বাংলা ও বাঙালি বিরোধী! বিধানসভায় যৌথ-প্রস্তাবের আর্জি তৃণমূল-কংগ্রেস-বামেদের ]