নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতার আঁচ অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উপর, ছোড়া হল পাথর
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতার আঁচ গিয়ে পড়ল অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়ালের বাড়িতে। বিক্ষোভকারীরা গিব্রুগড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ও ইট ছুড়েছে বুধবার। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের রক্ষী জানিয়েছেন যে এই হামলার জেরে বাড়ির জানলার বেশ কিছু কাঁচ ভেঙেছে। ঘটনাস্থলে যান দিব্রুগড়ের এসপি গৌতম বড়ুয়া। শুধু সর্বানন্দের বাড়ি নয়। এই হামলার আঁচ গিয়ে পড়েছে দিব্রুগড়ের বিজেপি বিধায়ক প্রশান্ত ফুকান ও বিজেপির দিব্রুগড় জেলা সভাপতি সুভাষ দত্তের বাড়িতেও।
১৪৪ ধারা জারি
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকেই উত্তাল ছিল অসম। গুয়াহাটিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদীরা। যার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয় অসমে। দোকানবাজার সব বন্ধ রয়েছে। যান চলাচলও নেই। বুধবারে বিক্ষোভের কারণে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে আটকে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। তেজপুর সফর সেরে গুয়াহাটি বিমানবন্দরে নামেন তিনি। কিন্তু এরপর বাইরের পরিস্থিতি অশান্ত থাকায় সেখান থেকে আর বেরোতে পাড়েননি তিনি।
কী কারণে বিরোধিতা?
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বাংলাদেশের অমুসলিম বাসিন্দাদের ভারতে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। তাতেই আপত্তি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির। বিশেষ করে অসমের। তাঁরা অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের কারণে অসমের জনসংখ্যা ৩ কোটিতে গিয়ে পৌঁছেছে। সেই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। যার জেরে কর্মসংস্থানে সংকট তৈরি হচ্ছে। অসমের আদি বাসিন্দারা অস্তিত্ব হারাচ্ছেন। এই বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিলে সংকট আরও বাড়বে।
অসমে মোতায়েন আধা সেনা
এদিকে উত্তর-পূর্বের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি শান্ত করতে আধা সেনা পাঠানো হচ্ছে উত্তর-পূর্বের রাজ্য গুলিতে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই দশ কোম্পানি সিআরপিএফ জওয়ানকে জম্মু-কাশ্মীর থেকে সরিয়ে অসমে মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনাদের সুবিধার্থে দিমাপুর থেকে একটি বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকারি ভাবে।
আরও আধা সেনা মোতায়েনের চিন্তাভাবনা
অন্যদিকে, শুধুমাত্র অসমে ২০ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েনের কথা জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে। বর্তমানে মনিপুরে ৭ কোম্পানি সিআরপিএফ জওয়ান মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে বাতিল করা হয়েছে। বাকি আরও ৩০ কোম্পানি আধাসেনাকে অন্য জায়গা থেকে সরিয়ে দ্রুত উত্তর-পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে বিএসএফকেও।
উভয়কক্ষেই পাশ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল
বুধবার দীর্ঘ আট ঘণ্টার আলোচনার পর রাজ্যসভায় পাশ হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯। পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫টি, বিপক্ষে ১০৫টি। এর আগে সোমবার লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে পাশ করে এই বিল। এদিকে বিলে পাশে নিজেদের খুশি জাহির করেন পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু শরণার্থীরা। বুধবার এই বিল পাশ হতেই রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দেন বাংলা সহ সারা দেশে নাগরিকত্ব বিল ও এনআরসি চালু হবে।