বেহাল কর্মসংস্থান! মুম্বইতে কনস্টেবলের চাকরি পেতে কী না কী করছেন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা
কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে প্রয়োজনীয় উচ্চতার ঘাটতি মেটাতে পায়ের নিচে আঠা দিয়ে রবারের প্যাড লাগালো মালেগাওয়ের তরুন অম্বাদাস যাদব। চাকরি পেতে তাঁর এই মরিয়াভাব দেশের বেহাল কর্মসংস্থানের ছবিটা তুলে ধরছে।
মালেগাও থেকে মুম্বইতে কনস্টেবল পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন বছর কুড়ীর অম্বাদাস যাদব। ডাক্তারি পরীক্ষা চলছিল, পাশ করলেই চাকরি। শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে উচ্চতা হতে হবে ১৬৫ সেন্টিমিটার। এতেই মুশকিলে পড়েছিলেন অম্বাদাস। টেনেটুনেও কয়েক সেন্টিমিটার কম পড়ছিল।
[আরও পড়ুন: শ্বাস নিতে সাবধান! বিশ্বের সবচেয়ে দুষিত শহরগুলির তালিকায় ভারতের এই শহরগুলি]
এত কাছে এসেও চাকরিটা ফস্কে যাবে? তাই আজব হলেও সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছিলেন তিনি। চাকরি পেতে মরিয়ে হয়ে উচ্চতা বাড়ানোর অদ্ভুত পথ নেন। পায়ের তলায় চামড়ার সঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিয়েছিলেন রবারের সোল। মিলেছিল প্রয়োজনীয় উচ্চতা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে গেছে তাঁর কৌশল। তাঁকে গ্রেফতার করেছে পোয়াই থানার পুলিশ।
ঘটনাটি জানাজানি হতে অম্বাদাসের কীর্তি নিয়ে একদিকে যেমন হাসাহাসি হয়েছে, তেমনই চর্চায় আসছে আরও একটি বিষয়। অনেকেই বলছেন অম্বাদাসের মরিয়া ভাবই বলে দিচ্ছে ভারতে কর্মসংস্থানের 'আচ্ছে দিন' আসেনি।
এবছর মুম্বই পুলিশের কনস্টেবলের ফাঁকা পদ রয়েছে ১ হাজার ১৩৭টি। মাত্র এইক'টি পদের জন্য আবেদন করেছেন দু'লক্ষেরও বেশি প্রার্থী। তার মধ্য়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবিরাও রয়েছেন। অনেকের মনে পড়ে গেছে মাসকয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর ইউনিভার্সিটির কেরানী পদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রিধারীদেরও আবেদন করার কথা।
অম্বাদাসের একটি ঘটনা হয়ত দেশের কর্মসংস্থানের সম্পূর্ণ ছবি নয়, কিন্তু চাকরি যে এদেশের একটা অন্যতম বড় সমস্যা তার আভাসটা পাওয়াই যায়। কয়েকদিন আগে রেলের ৮৮ হাজার পদের জন্যও আবেদনপত্র জমা পড়েছিল ২ কোটি ৩৭ লক্ষ! কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকও বিষয়টি একপ্রকার মেনে নিয়েছিল। তাদের দাবি দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। গত বছর মে মাসে তখনকার কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় বলেছিলেন, 'এখন যে আর্থিক বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে তা কর্মসংস্থানহীন। শুধু ভারত নয়, অনেক ইউরোপিয় ও এশিয় দেশও এই সমস্যার মুখোমুখি। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু তা চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে না।'
তবে, এখন সরকারের দাবি কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্যে ব্যপক ঘাটতি আছে। কাজেই এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কিছু বলা উচিত নয়। দেশের নিম্নমুখি কর্মসংস্থানের ছবিটা ঢাকতে মরিয়া সরকার। সারা দেশব্য়পি একটি সমীক্ষা চালাচ্ছে তারা। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলি যারা বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের বাইরে রয়েছে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করে পরিসংখ্য়ানের স্বাস্থ্য ফেরানোর চেষ্টা করছে তারা। এমনকি ধরা হচ্ছে ১০ জনেরও কম কর্মী নিয়ে চলা এন্টারপ্রাইজগুলিকেও। কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এক বছর, অর্থাত ২০১৯-এর আগে যাতে দেখানো যায় মোদীর আমলে কত ক্রমসংস্থান 'বেড়েছে'।
কারণ বিজেপি মনে করছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের তথ্য ঢোকাতে পারলে দেশের সামগ্রিক কর্মসংস্থানের ছবিটা বেশ উজ্জবল দেখাবে। অনেকটা যেরকম পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকার দেখিয়েছিল মেলায় চা বিক্রেতাদেরও কর্মসংস্থানের হিসেবে ধরে। এতে চাকরিহীন আর্থিক বৃদ্ধি মার্কা অভিযোগগুলোর মোকাবিলা করা যাবে।
গত সপ্তাহেই প্রথমবার এমপ্লয়ীজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন এবং ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম তাদের বেতন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে গত ফেব্রুয়ারি মাস অবধি গত ছয় মাসে কমপক্ষে ২২ লক্ষ মানুষের চাকরি হয়েছে। আইআইএম ব্যাঙ্গালোরের প্রফেসর পুলক ঘোষ এবং এসবিআইয়ের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সৌম্য কান্তি ঘোষও ভারতে কর্মহীন আর্থিক বৃদ্ধির তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন। এক রিপোর্টে তাঁরা বেতন সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করেছেন, প্রতিবছর গড়ে ১ কোটি ৫০ লক্ষ চাকরি তৈরি হচ্ছে।
কিন্তু তাঁদের এই দাবি মানতে নারাজ সমালোচকরা। তারা বলছেন এই বেতন সংক্রান্ত তথ্য নয়া চাকরির সূচক নয়। এই চাকরিগুলি অধিকাশই আগে থেকেই ছিল, বিমুদ্রাকরণের পর এগুলিকে সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। তারা বলছেন এগুলিকে নয়া চাকরি হিসেবে দেখানোটা অনেকটা নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশনের মতো।