বিগত ৫০০ বছর ধরে ভারতের এই রাজ্যের একটি গ্রামে চলছে 'ক্যাশলেস ব্যবস্থা'
ভারতীয় অর্থনীতিতে ক্যাশলেস ইকোনমি বা ডিজিটাল ইকোনমি এই শব্দগুলি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অসমের গুয়াহাটি থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে গেলে এই শব্দগুলি অত্যন্ত পুরনো বলে মনে হতে পারে।
গুয়াহাটি, ২৩ জানুয়ারি : সারা দেশে ক্যাশলেস ইকোনমি বা ডিজিটাল ইকোনমি বা নগদহীন অর্থব্যবস্থা-র মতো শব্দ মাত্র মাস দু'য়েক হল আমজনতার মুখে মুখে ঘুরছে। ভারতীয় অর্থনীতিতে এই শব্দগুলি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অসমের গুয়াহাটি থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে গেলে এই শব্দগুলি অত্যন্ত পুরনো বলে মনে হতে পারে।
কম নগদ লেনদেনেও এবার বাধ্যতামূলক হতে চলেছে PAN কার্ড!
ভারত 'ক্যাশলেস' হবে, মানেন না খোদ দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কের প্রধান
এই গ্রামে বাস তিয়া প্রজাতির। তপশিলি উপজাতির অন্তর্গত এই গোষ্ঠীর মানুষেরা প্রতিবছর অভিনব মেলার আয়োজন করে থাকেন যেখানে সমস্ত জিনিসপত্র কেনাবেচা হয় একেবারে নগদহীন উপায়ে, আদিম বিনিময় প্রথার উপরে নির্ভর করে।
এই ধরনের বিনিময় প্রথা বা বিনিময় বাণিজ্য বিগত পাঁচশো বছর ধরে অসমের এই গ্রামে চলে আসছে। তিয়া প্রজাতির মানুষরাই এটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
এই তপশিলি উপজাতিভুক্ত মানুষদের বাস মধ্য অসম ও পাশের রাজ্য মেঘালয়ে। জানা গিয়েছে, প্রতিবছর জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে তিনদিনের মেলা বসে অসমের মোরিগাঁও জেলায়।
স্থানীয়দের কাছে এই মেলার নাম 'জুনবিল মেলা'। একটি অর্ধচন্দ্রাকার জলাধারের পাশে এই মেলা বসে অসমের গ্রামে।
সদ্য সমাপ্ত এই মেলায় যোগ দিয়ে গিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালও। জানিয়েছেন, তিয়া প্রজাতির মানুষদের এই ধরনের ব্যবস্থা সম্পর্কে সকলের অনেককিছু শেখার রয়েছে। আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে যেভাবে নগদহীন অর্থব্যবস্থাকে এই জনজাতি জিইয়ে রেখেছে তা এককথায় অসাধারণ।
একইসঙ্গে তিয়াদের এই মেলার জন্য সরকার উদ্যোগী হয়ে জমির ব্যবস্থা করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। এর উপরে ভিত্তি করে অসমে পর্যটন শিল্পেরও উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
জানা গিয়েছে, মেলার কয়েকদিন আগে তিয়া, করবী, খাসী, জয়ন্তিয়া উপজাতির মানুষ নানা জায়গা থেকে অনেক ধরনের পণ্য নিয়ে এক জায়গায় জড়ো হন। এর মধ্যে থাকে আদা, বাঁশের অঙ্কুর, হলুদ, কুমড়ো, ঔষধী, শুঁটকি মাছ ও অনেক ধরনের পিঠে।
মেলায় শুধু কেনাবেচাই নয়, ভিন্ন প্রজাতির মানুষেরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে নিজেদের ঐতিহ্যশালী নাচ ও গান পরিবেশন করেন। একইসঙ্গে সকলে মিলে মাছ ধরার উতসবও পালন করেন। সবমিলিয়ে অসমের এই গ্রাম সারা ভারতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।