নেতা নীতীশের সামনে ভবিষ্যতে কোন কোন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষারত! বিহার সমীকরণ একনজরে
একার পথ চলা। রাজনীতি, তার মধ্যের রাজনীতি বারবার যেমন তাঁর সফরের পা আঁকড়ে ধরেছে। তেমনই ব্যক্তিগতস্তরে স্ত্রী বিয়োগের পর থেকে আরও সাহসী, ঝুঁকিপূর্ণ রাজনীতির দিকে এগিয়ে গিয়েও শেষে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন নীতীশ কুমার। শেষমেশ কোথাও গোবলয়ে বিহারের গণ্ডিতেই আটকে রয়ে গিয়েছেন 'মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার' নীতীশ কুমার। তবে বিহার রাজনীতির 'মেকানিক্স' এ তাঁর পথ হাঁটা দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

বিহার ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের চাকরি থেকে মুখ্যমন্ত্রী
বিবার কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র নীতীশ কুমার এককালে বিহারের ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের চাকরিরত ছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে ১৯৭৩ সালের পর থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ তাঁর। পরবর্তীকালে তাঁর স্ত্রীয়ে অসুস্থতা ও স্ত্রী বিয়োগ। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বিহার রাজনীতিতে নীতীশের পদক্ষেপ কোন অঙ্কে চলেছে দেখা যাক।

জরুরি অবস্থার সময়ে নীতীশ
জরুরি অবস্থার সময় ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত জেপি নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়া, জর্জ ফান্রান্ডেজদের সঙ্গে আন্দোলনের গা ভাসান নীতীশ। স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সন্তান নীতীশ এরপরই রাজনীতির রঙে গা ভাসান।

প্রথম নির্বাচনে দাঁড়ানো
কোনও পার্টি নয়, ১৯৮৫ সালে নির্দল প্রার্থী হয়ে বিহারের বিধানসভা ভোটে প্রথমবার লড়েন নীতীশ কুমার। ১৯৮৯ সালে তিনি বারাহ লোকসভা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপরই ৩৮ বছরের নীতীশ রেলমন্ত্রী হন । এরপর গাইসাল রেল দুর্ঘটনা, আর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। পরবর্তীকালে কৃষিমন্ত্রী হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে শিরোনাম কাড়তে থাকেন নীতীশ।

জাতীয় রাজনীতির ময়দান পেয়েও স্তিমিত নীতীশ!
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে দিল্লির রাজনীতিতে পদার্পণ করেও সেভাবে নিজেকে জাতীয় নেতা হিসাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। বারবার গোবলয় রাজনীতির টানে তিনি তাঁর রাজনৈতি ছায়া দিল্লিতে খর্ব হতে থাকে! এরপর লালু প্রসাদের নেতৃত্বারে জনতা দলে নীতীশ একটি উজ্জ্বল মুখ হতে থাকেন। যা ভালো ভাবে নেননি লালু! পরবর্তীকালে জর্জ ফার্নান্ডেজের সঙ্গে মিলে নীতীশ গড়েন ১৯৯৪ সালের সমতা পার্টি। সেবছর ৩২৪ টি লোকসভা আসনে তাঁদের দল জেতে ৭ টি আসন।

প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েও...
নীতীশ কুমার ২০০০ সালে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন বিহারের। সেবারে বিজেপির সঙ্গে জেডিইউএর সংঘবদ্ধতা গড়ে ওঠে। ততদিনে সমতা পার্টি আর নয়, জেডিইউয়ের নেতা হয়ে গিয়েছেন নীতীশ। তবে মুখ্যমন্ত্রিত্ব বেশিদিন টেকেনি! ফের দিল্লির রাজনীতিতে রেলমন্ত্রী হিসাবে ফিরে যান নীতীশ। সুযোগ ছিল জাতীয় রাজনীতি কাঁপানো কিন্তু বিহারের ভোট অঙ্ক তাঁকে টানতে থাকে।

ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি ও বিহার
এরপর ২০০৫ সালে ফের বিজেপি জেডিইউ জোট বিহার জিত নেয়! সেই সময় থেকে নীতীশ ভোটব্য়াঙ্কের অঙ্কে জোর দেন। ৩ শতাংশ কুর্মি ভোট, মহিলা ভোটব্যাঙ্ক, ওবিসি ভোট ব্যাঙ্ক কাছে টানতে উন্নয়নধর্মী একাধিক স্কিম , প্রকল্প চালু করে নীতীশ সরকার। যা বিহারের রাজনীতির ছকে এক্কেবারে ব্লকবাস্টার পদক্ষেপ হয়ে যায়! এরপর সেভাবে ফিরে তাকাতে হয়নি নীতীশকে । কিন্তু ফিরে তাকাতে হচ্ছে ২০২০ বিধানসভা নির্বাচনের পর।

আঞ্চলিক রাজনীতি ও নীতীশ
দেশের বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক দলগুলি যখন নিজেকে বিস্তার করতে উদ্যত তখন গোবলয়ের ছোট্ট গন্ডির মধ্যে নীতীশ নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। আর সেই গন্ডি এতটাই ছোট হয়ে গিয়েছে যে, নিজের টার্ফ বিহারে বিজেপির তুলনায় ৩১ আসনে পিছিয়ে রয়েছে নীতীশের পার্টি জেডিইউ। মায়াবতী থেকে মমতা যেখানে আঞ্চলিক দলকে জাতীয় পর্যায়ের ভোটে লড়িয়ে তার পরিসর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন,সেখানে নীতীশের জেডিইউ অনেকটাই 'ভীতু'!
হায়দরাবাদ থেকে বেরিয়ে এআইএমএম পর্যন্ত বাংলা, বিহারে প্রার্থী দিয়েছে , তবে নীতীশ গোবলয়ের বিহার টপকে বেশিদূর জেডিইউকে নিয়ে যেতে পারেননি। যার ফল ২০২০ সালের লোকসভা নির্বাচন দিয়েছে তাঁকে। আর পিছিয়ে থেকে এগিয়ে যাওয়ার এক কঠিন লড়াই এবার নীতীশের সামনে।

যদি নীতীশের শেষ নির্বাচন ২০২০ ই হয়, তাহলে..
নীতীশ কুমার এক নির্বাচনী সভায় ঘোষণা করেন যে ২০২০ সালের নির্বাচনই তাঁর শেষ নির্বাচন। আর এবার সম্ভবত ভোট যুদ্ধে বিজেপির থেকে পিছিয়ে থেকে কাঁটার মুকুট নিয়ে বিহারের মসনদে বসছেন নীতীশ। প্রসঙ্গত, আরজেডির বিরোধিতার পাশাপাশি, নীতীশের সামনে এলডেপির চিরাগ চ্যালেঞ্জ বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, ২ জন উপমুখ্যমন্ত্রী দিয়ে বিজেপিও জোর শক্ত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে নীতীশের সামনে এলজেপি ও বিজেপি বড় চ্যালেঞ্জ। তারপর আরজেডির আস্ফালন খর্ব করার চাপ তো রয়েই যাচ্ছে!

বিহারের মতো শক্ত জমি ২০২১ ভোটে তামিলভূমে পাচ্ছে না বিজেপি!'চাণক্য' শাহের সফরের আগে পারদ তুঙ্গে