চিনে ফুসছে নদী, বন্যার আশঙ্কায় উচ্চ সতর্কতা জারি অরুণাচল-অসমে
উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে অরুণাচল প্রদেশ ও আসামে। চিনে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানকার সাংপো নদী ফুলে ফেপে উঠেছে, তাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের কেরলে ভয়াবহ তাণ্ডবের পর এবার বন্যার ভ্রুকুটি উত্তরপূর্ব ভারতে। বেজিং থেকে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়েছে গত কয়েকদিনে নদির বিহীন বৃষ্টি হওয়ায় গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জল ছাড়তে হয়েছে সাংপো নদীতে। এই নদীটিই ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসধারা। তাই উত্তরপূর্বের বিস্তীর্ণ অংশে বন্য়া হওয়ার সম্ভাবনায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
চিনের সাংপো নদীই ভারতে অরুণাচল প্রদেশের আপার সিয়াং জেলা দিয়ে প্রবেশ করার পর সিয়াং নদী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর লোহিত ও দিবং নদীর সঙ্গে মিশে এই জলধারা থেকে তৈরি হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। বুধবার বেজিং থেকে নয়াদিল্লীতে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ সাংপো নদীতে ৯০২০ কিউবিক মিটার জল ছাড়া হয়েছে।
এরপরই অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সিয়াং জেলার ডেপুটি কমিশনার তোমিয়ো তাতাক একটি সার্কুলার জারি করে সিয়াং নদীর দুই পারে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। তবে এর সঙ্গে নদীতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা এবং অন্য়ান্য কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতের জল কমিশন জানিয়েছে, এর মাত্র ১৫ দিন আগে, গত ১৪ আগস্ট তারিখেও ৮০৭০ কিউবিক মিটার দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল চিন। ফলে সব মিলিয়ে ব্রহ্মপুত্রে হটাৎ করে প্রচুর দল পড়ে চাপিয়ে যেতে পারে তার দুইকূল।
একই রকম উদ্বেগের ছবি ধরা পড়েছে অসমেও। বৃহস্পতিবার ডিব্রুগড়ে অফিসারদের জেলা সদর না ছাড়ার বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'হঠাত ব্রহ্মপুত্রে জলের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, কারণ চিনের দিক থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ছাড়া হচ্ছে।'
ডিব্রুগড়ের ডেপুটি কমিশনার লায়া মাদ্দুরি জানিয়েছেন, 'ব্রহ্মপুত্রের জলের উচ্চতা ক্রমে বাড়ছে, তবে তা এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।' কিন্তু রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মতে রাজ্যের অনেক জায়গাতেই ব্রহ্মপুত্রের জলের উচ্চতা বিপদসীমা ছাপিয়ে গিয়েছে। এই জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে, জোরহাটের নীমাতিঘাট, দোলাঘাটেক ধানসিড়ি, নুমালিগড় ও সোনিতপুরের জিয়া ভরালি।
তবে জেলর উচ্চতা বাড়ার পাশাপাশি এক অন্য বিপদ দেখা দিয়েছে অরুণাচলের সিয়াং নদীতে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন গত দু'সপ্তাহ ধরেই এই নদীতে বিপজ্জনক চোরাস্রোত, ঘুর্ণি দেখা যাচ্ছে। তাঁদের মতে এর কারণ হয় চিনের দিকে বড় ধস নেমেছে, অথবা কোনও বড় নির্মাণকাজের জন্য জলের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যহত হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার তাতাক জানিয়েছেন, 'সিয়াং নদীতে এত বড় বড় ঢেউ আগে কখনও দেখা যায়নি।'
গত বছর পরিষ্কার জলের নদী সিয়াং-এর জলের রঙ হঠাত কালচে হয়ে যাওয়া নিয়ে হইচই পড়েছিল। জলের স্রোতে প্রচুর পরিমাণ কাদা-মাটি দেখা দিয়েছিল। তাতে ভারত ধারণা করেছিল চিনের দিকে কোনও বড় বাধ বা সুড়ঙ্গের নির্মাণ চলছে। কিন্তু পরে দুই ভারতীয় গবেষক, স্য়াটেলাইট চিত্রের সূত্র ধরে দেখান তিব্বতে পর পর কয়েকটি ভূমিকম্পের ফলে বড় মাপের ধস নেমেই নদীর পরিষ্কার জলে ওই বিপুল পরিমাণ কাদামাটি মিশে গিয়েছিল।