সিএএ–এনআরসির প্রতিবাদে সরব তামিলনাড়ু, জমায়েত পাঁচ হাজার প্রতিবাদকারী
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জী নিবন্ধীকরণ (এনআরসি)–এর বিরোধিতায় শুক্রবার চেন্নাইয়ে শিশু–মহিলা সমেত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ জমায়েত হয়েছিল ওল্ড ওয়াশারম্যানপেটের পেন্সিল কারখানায়।
রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন
আন্দোলনকারীরা পুরো রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ শুরু করে দেয়। মিন্ট ব্রিজ পর্যন্ত গোটা রাস্তা অবরোধ হওয়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের হঠানোর জন্য ১০০০ জন কড়া পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনকারীদের এরপর পুলিশ আটক করে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠি-চার্জ করে। কাসালি নামের প্রতিবাদকারী বলেন, ‘দুপুর ২টো থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে পুলিশ আমাদের ওপর তিনবার লাঠি-চার্জ করে। কিছুজন আহত আন্দোলনকারীদের স্ট্যানলি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে একজনকে পরে রাজীব গান্ধী সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।' এই ঘটনা এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এই আন্দোলনের পাশাপাশি আলান্দুর ও আন্না সালাই, মাদুরাই, কোয়েম্বাটোর সহ তামিলনাড়ুর অন্য এলাকাতেও সিএএ ও এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন দেখা যায়। আরও প্রতিবাদকারীদের জমায়েত প্রতিরোধের জন্য পুলিশ কিছুক্ষণের জন্য মিন্ট ব্রিজ বন্ধ করে দেয় পুলিশ, কিন্তু ওয়াশারম্যানপেটে জমায়েত হওয়াকে আটকাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ–আন্দোলনকারী সংঘর্ষ
শীর্ষ পুলিশ কর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ জাতীয় প্রতিবাদ হওয়ার আশঙ্কা করেই বৃহস্পতিবার আমরা ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তামিলনাড়ু সিটি পুলিশ আইনের ৪৪ ধারা অনুসারে প্রকাশ করেছি। এই সতর্কতা সত্ত্বেও, প্রতিবাদকারীরা জমায়েত হয়েছিল এবং তাই আমরা তাদের অপসারণ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উচ্ছেদ করছে দেখে তাদের মধ্যে কয়েকজন দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়।' প্রতিবাদকারীদের এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে আন্দোলন চলাকালীন পুলিশ কর্মীরা এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে রেখে রাস্তায় প্রবেশ করে এবং এক ব্যক্তিকে টানতে টানতে পুলিশ ভ্যানে তোলে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশ-আন্দোলনকারীর মধ্যে বচসার সৃষ্টি হয় এবং লাঠি-চার্জ শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুলিশ কর্মীরা বয়স্ক ব্যক্তিদের পেটে লাথি ও মারধর করছে এবং টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও পুলিশের দাবি, প্রতিবাদকারীদের মধ্যে একজন যুগ্ম কমিশনার অফ পুলিশ (পশ্চিম) বিজয়কুমারির ওপর হামলা করে, সেই কারণেই পুলিশ বাধ্য হয় পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করতে। লাঠি-চার্জের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘ওই বয়স্ক ব্যক্তি গত দু'সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাঁকে বৃহস্পতিবার ছেড়ে দেওয়া হয় এবং শুক্রবার রাতে ওয়াশারম্যানপেটে তাঁর নিজের বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। প্রতিবাদকারীরা লাঠি-চার্জের গুজব রটিয়েছে।'
পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের আলোচনা
শুক্রবার রাত এগারোটা পর্যন্ত হাজারেরও বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে ১৭০ জন আন্দোলনকারীদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরব হন। এছাড়াও ওল্ড ওয়াশারম্যানপেটের বিক্ষোভের পরে, প্রতিবাদ চলাকালীন আটকদের মুক্তির দাবিতে কয়েকশ লোক আলান্দুর মেট্রোর কাছে জড়ো হয়েছিল। চেন্নাই সিটি পুলিশ কমিশনার এ কে বিশ্বনাথ ওল্ড ওয়াশাম্যানপেট পরিদর্শন করতে যান এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই ধীরে ধীরে এই এলাকা থেকে ভিড় কমতে শুরু করে। যদিও আলান্দুর ও ত্রিপলিকেন এলাকা থেকে প্রতিবাদকারীরা উঠতে চায় না এবং ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১১টা ৪৫ নাগাদই আটক আন্দোলনকারীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ কমিশনার প্রতিবাদকারীদের এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরও মধ্যরাতে কমপক্ষে ১০০০ প্রতিবাদকারী ওল্ড ওয়াশারম্যানপেতে রয়ে গিয়েছিলেন এবং তারা রাতারাতি তাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছিলেন।