সিএএ ও এনআরসি নিয়ে সমস্ত সংশয় নিরসন করে সকল প্রশ্নের জবাব দিল কেন্দ্র, দেখে নিন একনজরে
দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ। মূলত নতুন এই আইনের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় লোকেদের মাঝে এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
দেশজুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ। মূলত নতুন এই আইন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় লোকের মনে এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সেই আতঙ্ক পরিণত হচ্ছে হিংসায়, ছড়িয়ে পড়ছে নানা দিকে। এদিকে এ বছরের আগস্টে অসমে নাগরিকপঞ্জী তালিকা নিয়ে ধুন্ধুমার বেধে গিয়েছিল। প্রায় ১৯ লক্ষের নাম সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। সিএএ এবং এনআরসি সম্পর্কিত সংশয়ের অবসান ঘটাতে ও তা সমাধানের জন্য সরকার তাদের সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
এনআরসি ও সিএএ-র সম্পর্ক
এনআরসি কি সিএএ-র সঙ্গে যুক্ত?
না। সিএএ একটি সম্পূর্ণ আলাদা আইন এবং এনআরসি একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া। সংসদের উভয়পক্ষে পাশ হওয়ার পরে দেশজুড়ে সিএএ আইনে পরিণত হয়েছে। তবে দেশজুড়ে এনআরসি সংক্রান্ত বিলের খসড়া তৈরি এখনও বাকি। অসমে যেই এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল সেটি সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে হয়েছিল এবং তা অসম চুক্তি মেনে করা হয়েছিল।
মুসলিমদের উপর এর প্রভাব
ভারতীয় মুসলিমদের কি সিএএ+এনআরসি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে?
না। কোনও ধর্মের ভারতীয় নাগরিককেই সিএএ বা এনআরসি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
কোনও নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্যে এটি না
এনআরসি কী কোনও এক নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য হবে?
না। এনআরসির সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই। এনআরসি দেশের সকল নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এটা শুধুমাত্র একটি নাগরিকপঞ্জি। এখানে ভারতীয় নাগরিকদের নাম নথিভুক্ত থাকবে।
ধর্মের ভিত্তিতে এনআরসিতে বাদ পড়বে না কেউ
ধর্মের ভিত্তিতে কি এনআরসি থেকে কেউ বাদ পড়বে?
না, এনআরসির সঙ্গে কোনও ধর্মের যোগ নেই। যখনই দেশে এনআরসি লাগু করা হবে, তা ধর্মের ভিত্তিতে করা হবে না বা করা যাবেও না। কোনও ব্যক্তিকেই নাগরিক পঞ্জি থেকে তাঁর ধর্মের কারণে বাদ দেওয়া যাবে না।
এনআরসিতে কী তথ্যপ্রমাণ লাগবে?
এনআরসি হলে কি ভারতীয় হওয়ার তথ্যপ্রমাণ নতুন করে দিতে হবে?
এটা পরিষ্কার করে জানতে হবে যে, এখনও পর্যন্ত দেশজুড়ে এনআরসির কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি বা ঘোষণা করা হয়নি। এই প্রক্রিয়া চালু হলেই যে মানুষের কাছে তাঁদের ভআরতীয় হওয়ার প্রমাণ চাওয়া হবে তাও না। এনআরসি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি নাগরিকপঞ্জিতে নিজের নাম নথিভুক্ত করবেন। ভোটার কার্ড করাতে যেরকম নথি জমা দিতে হয়, এই ক্ষেত্রেও কয়েকটি নথি জমা দিয়ে আপনি নিজের মান নথিভুক্ত করবেন নাগরিকপঞ্জিতে।
কী ভাবে প্রমাণ হবে নাগরিকত্ব?
নাগরিকত্ব কী ভাবে প্রমাণ হবে? এটা কি সরকারের হাতে থাকবে?
যেকোনও মানুষের নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা হবে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন মেনে। এর ভিত্তিতে পাঁচ রকম ভাবে একজন ভারতীয় নাগরিক :
জন্মসূত্রে
ভারতীয়
বংশানুক্রমে
ভারতীয়
রেজিস্ট্রেশন
দ্বারা
নাগরিকত্ব
স্বাভাবিকরণের
মাধ্যমে
রাষ্ট্রের
নাগরিক
অধিকার
পাত্তয়া
অন্তর্ভুক্তি
দ্বারা
নাগরিকত্ব
মা-বাবার জন্ম নথি প্রয়োজন?
ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে কি মা-বাবার জন্ম নথি প্রয়োজন?
আপনাকে আপনার নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য নিজের জন্মের নথি জমা দিতে হবে। কোনও কারণে সেটা আপনি যদি না পারেন, সেই ক্ষেত্রে আপনার মা-বাবার নথি জমা দিতে হবে আপনাকে। নচেত মা-বাবার জন্ম নথি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কোন নথি গ্রহণযোগ্য হবে তা বিলের খসড়া তৈরি হলেই প্রাথমিক ভাবে জানা যাবে। তবে সাধআরণ ভাবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বীমার নথি, জন্ম নথি, স্কুল সার্টিফিকেট, জমির দলিল বা নথিগুলিকে সরকারি ভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মান্যতা দেওয়া হতে পারে। এই তালিকাতে আরও নথি যোগ করার কথা ভাবা হতে পারে যাতে কোনও প্রকৃত ভারতীয়কেই সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়।
১৯৭১-এর আগে বংশের নথি বাধ্যতামূলক নয়
নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে কী কাউকে ১৯৭১-এর আগে বংশানুক্রমের প্রমাণ দিতে হবে?
না, নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ১৯৭১-এর আগের পূর্বপুরুষ বা মা-বাবার কোনও নথি জমা দিতে হবে না কাউকে।এই বিষয়টি শুধুমাত্র অসমের এনআরসির জন্যে প্রযোজ্য ছিল। কারণ অসম চুক্তি অনুযায়ী সেটাই সেখানকার কাটঅফ বছর ছিল। অসমের এনআরসি ও ভারতের অন্যত্র হতে চলা এনআরসি সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এটি ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে সম্পন্ন করা হবে।
অসমের ১৯ লক্ষ লোক কেন বাদ এনআরসি থেকে?
যদি নাগরিকত্ব প্রমাণ করা এত সহজ হয়, তা হলে অসমের ১৯ লক্ষ লোক কেন নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছিল?
অসমে অনুপ্রবেশ একটি বহু পুরোনো সমস্যা। এর বিরুদ্ধে ১৯৮০-র দশকে একটি আন্দোলন হয় সেই রাজ্যে। ৬ বছর দীর্ঘ সেই আন্দোলনের শেষে ১৯৮৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সরকার অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্য এনআরসি প্রক্রিয়ার কথা জানায়। সেই এনআরসি নিয়ম অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে আসা মানুষদের অনুপ্রবেশকারী হিসাবে গণ্য করা হবে।
পুরোনো নথি যোগাড় করতে বলা হবে না
এনআরসি প্রক্রিয়ার সময় কি আমাদের পুরোনো নথি যোগাড় করতে বলা হবে, যা বর্তমানে পাওয়া খুবই কঠিন হতে পারে?
এরকম কোনও বিষয় নেই। সাধারণ যএই নথির মাধ্যমে একজনের নাগরিকত্ব প্রমাণ হয়, সেগুলি চাওয়া হবে। জেশ জুড়ে এনআরসির বিজ্ঞপ্তি জারি হলে এই নিয়ে সকল নিয়ম কানুন বলা থাকবে নির্দেশিকায়। সরকার কোনও ভাবেই সাধারণ মানুষের হয়রানি চায় না।
অশিক্ষিত হলেই নাগরিকত্ব বাতিল না
যদি একজন নাগরিক অশিক্ষিত হয় এবং তার কাছে প্রয়োজনীয় নথি না থাকে, তবে কী হবে?
সেই ক্ষেত্রে কতৃপক্ষ তাকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী পেশ করার অনুমতি দেবে। এছাড়া অন্যান্য ভেরিফিকেশন, যেমন সামাজিক স্তরে তার বৈধতা নিয়ে তদন্তের স্বাপেক্ষে তার নাগরিকত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে। কোনও ভাবেই ভারতীয় নাগরিকদের অসুবিধা করতে চায় না ভারত সরকার।
এনআরসি প্রক্রিয়াতে কাউকে সমস্যায় ফেলতে চায় না সরকার
ভারতীয়দের অনেকেই দরিদ্র এবং তাদের নিজেশ্ব বাড়ি-ঘর নেই, যারা অশিক্ষিত, যাদের কাছে কোনওই নথি নেই। এনআরসি প্রক্রিয়াতে তাদের কী হবে?
এটা পুরোপুরি সত্যি হতে পারে না। এরকম ব্যক্তিরা নিশ্চিত ভাবে কোনও একটি নথির ভিত্তিতে ভোট দেয় বা সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের দ্বারা উপকৃত হন। তাদের নাগরিকত্ব সেই নথির ভিত্তিতেই স্থাপিত হবে।
রূপান্তরকামী বা নাস্তিক, কেউ বাদ নয়
এনআরসি কি নথি নেই এমন কোনও রূপান্তরকামী, নাস্তিক,আদিবাসী, দলিত, মহিলা ও ভূমিহীন মানুষকে বাদ দেবে?
না। এনআরসি বাস্তবায়িত হলে উপরে উল্লিখিত সম্প্রদায়ের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না।