নৈরাজ্যবাদ বিকল্প রাজনীতি নয়, বলছেন অরুণ জেটলি
গত তিন সপ্তাহ ধরে অনেক কিছু শিখলাম। ভারতবর্ষ নিয়ে তিনজন নেতার ভিন্ন ভিন্ন মত জানলাম।
এআইসিসি-তে রাহুল গান্ধীর ঝাঁঝালো ভাষণের উদ্দেশ্য ছিল দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করা। যদিও সেই ভাষণ দিশাহীন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা না করাটা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ার শামিল। তাঁর ভাষণ আগ্রাসী সন্দেহ নেই, কিন্তু সুনির্দিষ্ট নয়।
বিজেপি-র কার্যকরী সমিতিতে নরেন্দ্র মোদী যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটাই সেরা। রাজনীতিক অবস্থান দূরে সরিয়ে রেখে বলা যায়, ভারতের একটি ভবিষ্যৎ ছবি তিনি তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী পদের উপযোগী ভাষণ তিনি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন আধুনিক এবং শক্তিশালী ভারতের ছবি। কৃষি থেকে শুরু করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ধারণা তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, ভারতের সব রাজ্যে আইআইটি, আইআইএম এবং এইমসের মতো প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত। দেশের সব গৃহস্থ বাড়িতে ন্যূনতম সুবিধাগুলি থাকতে হবে। হাইওয়ে, শিল্প করিডর এবং বুলেট ট্রেনকে ১০০টি অত্যাধুনিক শহরের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সোনালি চতুর্ভুজকে তিনি হীরক চতুর্ভুজে পরিণত করতে চেয়েছেন। এর ফলে ভারতের ছবিটাই বদলে যাবে। বলেছেন, সম্পদের ওপর গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের অগ্রাধিকার থাকবে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের ক্ষেত্রে এই ভাষণ নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রে তো বটেই, বিজেপি-র ক্ষেত্রেও একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।
আর তৃতীয় ঘরানার রাজনীতির কথা বলতে গেলে বলতে হয় আমআদমি পার্টির কথা। চিরাচরিত রাজনীতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটা প্রতিক্রিয়া হিসাবে দলটির জন্ম। ওরা বিকল্প রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, বিকল্প রাজনীতির অর্থ হল নৈরাজ্য। আর নৈরাজ্যের কথা তো দলের নেতারা নিজেরাই বলেছেন। এরা আগে বলেছিল, সিবিআই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ পুলিশবাহিনী। এদের কাছ থেকে স্বচ্ছতা আশা করা যায় না। সিবিআই-কে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত নয়। এখন এরাই বলছে, দিল্লি পুলিশ থাকবে দিল্লির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে। এই দলটি আইনেপ শাসন মানে না, রাজনীতিক অ্যাডভেঞ্চারে বিশ্বাস করে, চরম উদ্ধত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ন্যূনতম ভাবিত নয়। ওরা পুলিশকে বলছে, উর্দি ছাড়ুন এবং বিক্ষোভে অংশ নিন।
মনে পড়ছে, দু'দশক আগে এটা মৌলবাদী গোষ্ঠী সাধারণতন্ত্র দিবস বয়কটের ডাক দিয়েছিল। আর এখন যে দলটি জাতীয় দল হওয়ার আকাঙক্ষা পোষণ করে, তারা সাধারণতন্ত্র দিবস বানচাল করার ডাক দিচ্ছে। এটা সাংবিধানিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। এই দলে জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থকরা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে ছত্তিশগড়ের মাওবাদীদের সমর্থকরা।
গত বছর আমি রাজ্যসভায় একটা কথা শুনেছিলাম 'নৈরাজ্যবাদীদের ফেডারেশন'। নৈরাজ্যবাদীরা, যারা কোনও বিধি মানে না এবং চূড়ান্ত আত্মকেন্দ্রিক, তারা কীভাবে ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চালাবে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। তবে এখন উত্তর পেয়ে গিয়েছি। দিল্লির রাস্তায় 'নৈরাজ্যবাদীদের ফেডারেশন' চলছে। নৈরাজ্যবাদ কখনও বিকল্প রাজনীতি হতে পারে না।