এই কারনে বিজেপি নেতাদের রামের সঙ্গে তুলনা করলেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী
দলিতদের বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে খাদ্য গ্রহনের জন্য নিজেকে ও অন্যান্য বিজেপি নেতাদের 'ভগবান রাম'-এর সঙ্গে তুলনা করলেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী রাজেন্দ্র প্রতাপ সিং।
রামায়ণ অনুয়ায়ী অনেক নামীদামী যোগী, ঋষিদের উপেক্ষা করে আদিবাসী মহিলা শবরির আশ্রমে এসে জল-খাবার গ্রহন করেছিলেন রামচন্দ্র। এভাবে তাঁকে 'উদ্ধার' করেছিলেন রাম। এযুগে রাম নেই, কিন্তু দলিতদের মুক্ত করতে বিজেপি নেতারা আছেন। তারা দলিতদের বাড়ি গিয়ে, তাদের সঙ্গে আহার করে তাদের 'উদ্ধার' করছেন! এরকমই মত উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী রাজেন্দ্র প্রতাপ সিং-এর।
[আরও পড়ুন: বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সিপিএম, দেশ বাঁচাতে সাংসদের ভরসা মমতাই]
নানাভাবে দলিতদের মন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু, যতই চেষ্টা থাক একাংশের নেতাদের কল্যানেই সেইসব প্রচেষ্টা মাঠে মারা যাচ্ছে। শীর্ষ নেতৃত্ব যতই চেষ্টা করছেন নিজেদের জাত পাতের ঊর্ধে তুলে ধরার, ততই ফস্কা গেরো দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে তাদের জাত-বিদ্বেষ। এই যেমন আম্বেদকরের জন্মদিন থেকে ফায়দা তুলতে বিজেপি নেতৃত্ব তাদের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের নির্দেশ দিয়েছিল দলিত গ্রামে রাত কাটানোর, দলিতদের সঙ্গে নৈশভোজ সারার।
কিন্তু সেই কর্মসূচী ঘিরেও বিতর্ক বেধে গেল রাজেন্দ্র প্রতাপ সিং-এর বক্তব্যে। নিজেকে ও যেসব বিজেপি নেতা দলিতদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন তাদেরকে রামের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। তাঁর সহকর্মী উত্তরপ্রদেশের আরেক মন্ত্রী সুরেশ রানা আবার দলিতদের বাড়িতে খেয়েছেন ঠিকই, তবে তারা যা খান তা কি আর উচ্চবর্ণের মুখে রোচে? ফলে তার জন্য দামী রেস্তোরাঁর খাবার এসেছে সেই দলিত ঘরে, যে খাদ্যের দাম দেখে মাথা ঘুরে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট দলিত গ্রামের বাসিন্দাদের। সুরেশ এই বাড়িতে জলস্পর্শও করেননি, খেয়েছেন কিনে আনা মিনারেল ওয়াটার।
বিজেপি নেতাদের এই আচরণের নিন্দা উঠেছে দলের মধ্য থেকেই। দলের এক দলিত সাংসদ উদিত রাজের মতে এই ঘটনাগুলি দলিতদের অপমান ছাড়া কিছু না। তিনি বলেন, 'আজকের প্রজন্মের দলিতরা মনে করে এভাবে তাদের নিচু করে দেখানো হচ্ছে। বিজেপির মুখপাত্র নয়, একজন দলিত হিসেবে বলছি। একজন সবর্ণ দলিতদের ঘরে গিয়ে তাদেরকে নিচু করে দেখাবেন আর নিজেদের উচ্চস্থানে রাখবেন, আমি এগুলো সমর্থন করি না।'
গত কয়েকদিন ধরেই 'দলিত আইকন' আম্বেদকরের জন্মদিনটিকে ঘিরে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার নানা কর্মসূচী চালাচ্ছে বিজেপি। দলিতদের বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে একসঙ্গে মাটিতে বসে শালপাতার থালায় ভাত খেতে দেখা গিয়েছে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেকে। এরকমই এক নৈশভোজের পর মন্ত্রী রাজেন্দ্র প্রতাপ সিং বলে বসেন, রাম আর শবরির কথা আছে রামায়ণে। আজ আমি এখানে এসেছি। জ্ঞানের (দলিত পরিবারের কর্তা) মা আমায় খাবার দেওয়ার সময় বললো সা এই খাবার পরিবেশন করতে পেরে ধন্য। একজন ক্ষত্রিয় হিসেবে আমার কর্তব্য ধর্মকে, সমাজকে রক্ষা করা।
সুরেশ রানার নৈশভোজের ছবি তো সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। অনেকেরই মত, তা কোনও দামী রেস্তোরাঁর 'বুফে'-র চেয়ে কম কিছু নয়। যে দলিত বাড়িতে তিনি ওই 'মহাভোজ' সেরেছেন, তার কর্তা রজনীশ কুমার জানিয়েছেন, 'আমি তো জানতামই না ওঁরা আসবেন। ওঁরা হঠাত করেই আসেন, সঙ্গে আসে ওই খাবার। সবই বাইরে থেকে।' রানার অবশ্য বক্তব্য সঙ্গে অনেক লোক থাকায় তিনি বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
নিজের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, 'কিছু লোক এটা নিয়ে অযথা ঝামেলা বাধাতে চাইছে। আসলে প্রধানমন্ত্রী আর যোগীজী যা কাজ করছেন তাতে তারা চাপে পড়ে গিয়েছে। এটা দলিতদের গ্রাম। ওরা যা রান্না করেছিল আমি তাই খেয়েছি। পরদিন সকালে ওদের সঙ্গে একসঙ্গে জলখাবারও খেয়েছি।' অবশ্য রানার আর দোষ কি? এর আগে ২০১৭ সালে তেলেঙ্গানায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-এর নামেও দলিতদের বাড়ি গিয়ে বাইরের রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনিয়ে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
[আরও পড়ুন:সিপিএমের চমক মহেশতলায়, বিরোধীদের তাক লাগিয়ে নতুন প্রার্থীতে লড়াইয়ের ময়দানে ]