আছড়ে পড়বে আম্ফান, করোনা সংক্রমণের জেরে দুই দেশের উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে
এ বছর একের পর এক দুর্যোগ মানবজাতির ওপর আছড়ে পড়ছে। করোনা ভাইরাসের পর এবার বঙ্গোপসাগর থেকে উৎপন্ন হওয়া আম্ফান মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে আসছে। জানা গিয়েছে, বুধবারই এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে, যার প্রভাব পড়বে লক্ষ লক্ষ মানুষের ওপর। সম্ভাব্য এই বিধ্বংসী ঝড় ও মারাত্মক ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে। তবে করোনা সংক্রমণের জেরে দুই দেশের উদ্ধারকাজই চলছে ধীরগতিতে।
প্রশাসন উদ্ধার কাজ শুরু করেছে
সুপার সাইক্লোন আসার আগেই প্রশাসন উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে। রেকর্ড অনুযায়ী, উত্তর-পূর্ব ভারত মহাসাগর থেকে উৎপন্ন হওয়া ঝড়ের পর এটা দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে মানুষকে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশেই কোভিডের প্রভাব মারাত্মক। অপরদিকে দেশজুড়ে লকডাউন জারি হওয়ার কারণে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তাতেই রয়েছে, কারণ তাঁদের কাজ নেই বলে বড় শহর থেকে পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরছেন পরিযায়ীরা। এঁদেরকে নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছে প্রশাসন।
চারটে হারিকেনের সমতুল্য হাওয়ার তীব্রতা
সমুদ্রের বাইরে মহাকাশ থেকে দৃশ্যমান বিশাল আবহাওয়া ব্যবস্থায় দেখা গিয়েছে ২৪০ কিলোমিটার/ঘন্টা (১৫০ মাইল) হাওয়া বয়ে চলেছে, যা চারটি হারিকেনের সমতুল্য। ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানিয়েছেন যে এই ঘূর্ণিঝড় কিছুটা হলেও পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূল ছুঁয়ে অতিক্রম করবে কিন্তু তার প্রভাব পড়বে জোরালো এবং ক্ষয়ক্ষতিও বিপুল পরিমাণে হবে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঝড়ের তীব্রতায় সমুদ্রের ঢেউ ১০ফিট থেকে ১৬ফিট (৩-৫ মিটার) পর্যন্ত উঁচু হয়ে, যা দো-তলা বাড়ির সমান, আছড়ে পড়তে পারে। যার ফলে উপকূল সংলগ্ন যোগাযোগের টাওয়ার ও রাস্তা-রেল ট্র্যাকগুলিকে উপড়ে ফেলতে পারে।
ওড়িশা ও বাংলাদেশে আগেও আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়
ঝড়ের তীব্রতা কয়েক কিলোমিটার অভ্যন্তরে জলের প্রাচীরকে চাপ দিতে পারে এবং সবচেয়ে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রায়শই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী হয় এটি। বাংলাদেশের নিম্ন উপকূলবর্তী এলাকা ৩০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস এবং ভারতের পূর্বদিক নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে, যার ফল সাম্প্রতিক দশকে দেখা গিয়েছে, যেখানে শত শত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ১৯৯৯ সালে পূর্ব ভারতের ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল সুপার সাইক্লোন, যার জেরে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ০শ হাজার মানুষের। আটবছর আগে বাংলাদেশে টাইফুন, টর্নেডোর জন্য বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং ১৩৯,০০ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৭ সাল ঘূর্ণিঝড় সিডারের ফলে মৃত্যু হয়েছিল ৩৫০০ জনের এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এই আম্ফান তার চেয়েও ভয়ানক হবে বলে বাংলাদেশের প্রশাসন ভয় পাচ্ছেন।
ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে করোনার ঝুঁকি নিয়েই আশ্রয়স্থানে অসহায় মানুষ
বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ২.২ মিলিয়ন মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ ৩ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ক্যাথোলিক ত্রাণ পরিষেবা (সিআরএস) সাহায্যকারী দল জানিয়েছে মানুষের সামনে এখন এক অসম্ভব পছন্দ এসেছে, যেখানে ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবেন নাকি আশ্রয়স্থানে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে থাকবেন। দুই দেশের প্রশাসনই জানিয়েছে যে তারা ভিড় হ্রাস করার জন্য অতিরিক্ত আশ্রয়স্থানের বন্দোবস্ত করেছে, এছাড়াও মাস্ক বাধ্যতামূলক এবম সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের জুনিয়র বিপর্যয় পরিচালনা মন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘যদি কোনও সংক্রমণ হয় তবে আমরা আশ্রয়স্থানেই আলাদা করে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছি।'
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা
ঝড়ের গতি কোনদিকে হবে তার পূর্বাভাসের বাইরে হলেও মায়ানমার থেকে আসা প্রায় এক লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাস করেন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে। তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া বাংলাদেশ সরকারের এখন সর্বপ্রথম কাজ, কারণ অধিকাংশই বাস করেন বিস্তীর্ণ শিবিরে এবং বাড়ির ছাদগুলোও তাঁদের পাকা নয়। এখানে প্রথম করোনা ভাইরাস কেস সনাক্ত হয় মঙ্গলবার। ৬ জন রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে যে খাবার, তেরপল ও জল পরিশোধন ট্যাবলেটের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য যেন মজুত রাখা হয় এবং শরণার্থীদের পাকা কোনও বাড়ি বা স্কুলের মধ্যে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়।
আম্ফানের ফলে বাড়বে করোনা সংক্রমণ
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘ভারী বৃষ্টি, বন্যা, এবং তার ফলে বাড়ি-ঘর ও কৃষিক্ষেত্রের ক্ষতি, যা বাড়িয়ে দেবে করোনা সংক্রমণকে, বিশেষ করে কক্স বাজার এলাকায় শরণার্থী শিবিরগুলিতে এই ভয় রয়েছে। এই ঝড়ের ফলে এই মহামারীতে ইতিমধ্যে হারিয়ে যাওয়া জীবন ও জীবিকার সংখ্যাও বাড়িয়ে তুলবে।'
আম্ফানের বিভীষিকা ফুটে উঠল নাসা-র ছবিতে! কোন পথে এগোচ্ছে সুপার সাইক্লোন?