কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ না করলে এই বিলের প্রয়োজন হত না', পাল্টা আক্রমণ অমিত শাহের
লোকসভায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে আজ পেশ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। তবে বিল পেশের আগেই সংসদে বিরোধীরা এত হট্টগোল করেন যে শুধুমাত্র বিল পেশের জন্যই আলাদা ভাবে ভোটাভুটি হয় সংসদে।
লোকসভায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে আজ পেশ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। তবে বিল পেশের আগেই সংসদে বিরোধীরা এত হট্টগোল করেন যে শুধুমাত্র বিল পেশের জন্যই আলাদা ভাবে ভোটাভুটি হয় সংসদে। আজ লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিল পেশ করলে বিরোধী সাংসদরা সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন যে এই বিল পেশ করা অসাংবিধানিক। এর জেরে বিল পেশের ক্ষেত্রএ সংসদে ডিভিশন হয়। তাতে বিল পেশের পক্ষে ২৯৩টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে ভওট পড়ে ৮২টি। আর এরই মাঝে কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
'কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করেছে বলে আজ বিলের প্রয়োজন'
আজ সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রসঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন ও অভিযোগের জবাব দিতে উঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, 'আজ যখন বিরোধীরা এত প্রশ্ন তুলছে তখন আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে দেশ বিভাজনের সময় যদি কংগ্রেস ধর্মের আধারে তা না করত তবে আজ এই বিলের প্রয়োজন পরত না। আজ তা হলে ওদের এটা শুনতে হবে। আজ ওরা এই বিলের বিরোধিতা করছে। তবে তারা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ না করলে এই বিলের প্রয়োজন পরত না।'
'বিলটি সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিরোধী'
এর আগে কংগ্রেসের তরফে বিলের বিরোধিতায় অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, 'আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বাস করি, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া ঠিক নয়।' বিলটি সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারাকে আক্রমণ করা হচ্ছে এই বিলের মধ্য দিয়ে।'
বিলের বিরোধিতা সৌগত রায়ের
বিলটির বিরোধিতা করেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়ও। সৌগত রায় কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে এসে বলেন, 'কয়েক মাস আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন যে আমরা দেশে এক বিধান আনব। তবে এই ক্ষেত্রে কী করে উত্তর-পূর্বের ষষ্ঠ তফসিল এলাকাগুলিকে বাদ দিয়ে এই আইন প্রনোয়ণ করা হবে? এই বিল অসাংবিধানিক ও বিভেদ সৃষ্টিকারী।'
বিরোধীদের অভইযোগ উড়িয়ে দেন অমিত শাহ
তবে এই অভিযোগ ও প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে অমিত শাহ বিরোধীদের উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন। অমিত শাহ বলেন, 'যদি সমান অধিকারের কথা বলেন তবে দেশে সংখ্যালঘুদের কেন সংরক্ষণ ও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। তা হলে সেই ক্ষেত্রে তো সাম্যতার প্রসঙ্গ তোলে না বিরোধীরা? তখন কী সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার উলঙ্ঘন হয়? আমি উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি যে যুক্তিসঙ্গত শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমেই সব দেশে অন্য দেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেয়। আমেরিকাতেও গ্রিন কার্ড তাদেরকেই দেওয়া হয় যারা সেখানে গিয়ে দেশএর উন্নতির জন্য কাজ করবেন।'
নেহরু-লিয়াকত চুক্তি
প্রতিবেশী দেশে সংখ্যালঘুদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, 'আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ পড়ে শুনিয়ে বলেন এই দেশগুলিতে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। বিভাজনের সময় শরণার্থীরা দেশ ছেড়ে । ১৯৫০ সালে নেহরু-লিয়াকত চুক্তি সই হয়। তখন নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তবে এত বছরে আমাদের প্রতিবেশী দেশে হিন্দু, শিখ সহ সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমাগত অত্যাচার চলেছে। তা হলে কী আমরা তাদের উপর অত্যাচার হতে দেব? এই আইনে শ্রীলঙ্কার তামিল হিন্দু ও মায়ানমারের হিন্দু রোহিঙ্গাদের বাদ রাখা হয়েছে। কিন্তু এই বিলে কোনও মুসলিমদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি।'
কংগ্রেসও যুক্তিসঙ্গত শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদান করে
অমিত শাহ বলেন, '১৯৭১-র পরেও বাংলাদেশে সেখানের সংখ্যালঘুদের খুঁজে খুঁজে মারা হয় ও সেখানে অত্যাচার চলে। কংগ্রেস নিজেও দণ্ডকারণ্যে থাকা বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়েছিল। রাজীব গান্ধীর সময় উগান্ডা থেকে আসা শরণার্থীদেরও কংগ্রেস নাগরিকত্ব দিয়েছিল। তবে তখন ব্রিটেন থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়নি কংগ্রেস।'
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ হতেই একযোগে বিরোধিতা কংগ্রেস, তৃণমূলের; উত্তাল সংসদ