শুধু স্টেরয়েড নয়, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হতে পারে জিঙ্ক পরিপূরকের জন্য, দাবি চিকিৎসকদের
শুধু স্টেরয়েড নয়, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হতে পারে জিঙ্ক পরিপূরকের জন্য, দাবি চিকিৎসকদের
দেশজুড়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউর্কোমাইকোসিসের সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে ভারতে। এরই মাঝে চিকিৎসকরা দাবি জানিয়েছেন যে সংক্রমণের বৃদ্ধিতে জিঙ্ক পরিপূরকের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে তা গবেষণা করা প্রয়োজন। কারণ চিকিৎসকদের দাবি জিঙ্ক সমৃদ্ধ পরিবেশে এই ছত্রাকের উন্নতি ঘটে।
রমরমিয়ে চলছে জিঙ্ক পরিপূরক
সরকারি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ১১,৭১৭টি মিউর্কোমাইকোসিসের কেস সনাক্ত হয়েছে। ২৪ মে পর্যন্ত এই সংখ্যাটি ৯ হাজারের ওপরে ছিল। আসলে কোভিড-১৯ মহামারি মাথা চাড়া দেওয়ার পরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষ মাল্টিভিটামিন এবং পরিপূরক খেতে শুরু করে দেন। যার ফলে সংক্রমণের শুরু থেকেই এইসব ওষুধের বিক্রি রমরমিয়ে বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে ভিটামিন সি ওষুধ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বিক্রি হয়। এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে গত বছর ১৮৫ কোটি পরিপূরকের ওষুধ বিক্রি হয়েছে। ভারত জুড়ে সাড়ে আট লক্ষের বেশি কেমিস্টদের শীর্ষ সংগঠন অল ইন্ডিয়া অর্গানাইজেশন অফ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট (এআইওসিডি)-এর পক্ষ থেকে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়।
গত বছর জিঙ্কের বিক্রি
এআইওসিডি-অ্যাওয়াকস জানিয়েছে যে গত বছর দেশজুড়ে কেমিস্টরা প্রায় ১৭১ কোটি ভিটামিন সি-এর ওষুধ ও ১৩ কোটি ভিটামিন সি-এর সঙ্গে মিশ্রিত অন্য মাল্টিভিটামিনের ট্যাবলেট বিক্রি করেছে। ভিটামিন সি-এর পাশাপাশি জিঙ্ক পরিপূরকও ব্যবহার করেছেন সাধারণ মানুষ সংক্রমণের প্রকোপের পর থেকে। ২০২০ সালে জিঙ্কোভিট ওষুধের বিক্রি ৯৩ শতাংশ বেড়েছে অর্থাৎ ৫৪ কোটি ট্যাবলেট বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯ সালে, এই একই ট্যাবলেট ২৮ কোটি বিক্রি হয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে এই ট্যাবলেটের বিক্রি ফের বাড়তে শুরু করে। মার্চ মাসে ভিটামিন পরিপূরকের বিক্রি ২২ শতাংশ লাফিয়ে বেড়ে যায়।
জিঙ্ক প্রেসক্রাইবড ওষুধ নয়
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে এই পরিপূরকগুলি প্রেসক্রাইবড ওষুধ নয়। এগুলিকে খাদ্য পরিপূরকের বিভাগে রাখা হয় এবং এগুলি ওষুধ নয়, তাই এই ওষুধগুলি কেনা খুবই সহজ। প্রসঙ্গত, মানুষ আতঙ্কের গ্রাসে পড়ে এই ওষুধগুলি কিনছেন এবং এতেই বিক্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ সময়ে এই ওষুধগুলিকে প্রেসক্রাইবড করা না হলেও, অপ্রমাণিত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য এ ধরনের পরিপূরকের কথা বলা থাকে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও জিঙ্ক যোগ
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ জানিয়েছেন যে এই পরিপূরকগুলি শুধুমাত্র তাঁদের জন্য প্রয়োজন যাঁরা অপুষ্টিতে ভুগছেন বা যাঁদের সুপারিশ করা হয়েছে। দেশের একাধিক চিকিৎসক মিউর্কোমাইকোসিসের সঙ্গে জিঙ্ককে যোগ করেছেন, এই সংক্রমণ কোভিডে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের মধ্যেই বিশেষভাবে দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা মনে করছেন, জিঙ্ক ট্যাবলেট, যা মাল্টিভিটামিন ওষুধেও পাওয়া যায়, এই ছত্রাক হামলার অন্যতম কারণ হতে পারে। যদিও ভারতে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি, তবুও চিকিৎসকরা দাবি করেছেন যে উচ্চ মাত্রায় চিনি, আয়রন ও জিঙ্ক এই ছত্রাক সংক্রমণের পক্ষে দারুণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বৃদ্ধির কারণ
কর্নাটকের চিকিৎসক ডাঃ বিক্রম সাকলেশপুর কুমার টুইটারে জানিয়েছেন যে অতিরিক্ত মাত্রায় জিঙ্ক শরীরে প্রবেশের ফলে মিউর্কোমাইকোসিস মহামারি বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য ঝুঁকিও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি তাঁর এই পয়েন্টকে প্রমাণ করতে পুরনো একটি সমীক্ষাও শেয়ার করেছেন। কোচিনের আইএমএর প্রাক্তন সভাপতি ও গ্যাসট্রোলজিস্টের শীর্ষ চিকিৎসক ডাঃ রাজীব জয়াদেবন একগুচ্ছ টুইটে জানিয়েছেন যে অ্যান্টিবায়োটিক্স, জিঙ্ক এবং বাষ্প নেওয়া এই তিন সম্ভাব্য কারণ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের এবং তাদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তিনি এও জানান যে জিঙ্ক পরিপূরকের ব্যবহার ঝুঁকির কারণ তা নিয়ে তদন্ত করা হোক। তিনি বলেন, 'ছত্রাকের সংক্রমণ জিঙ্ক সমৃদ্ধ পরিবেশে হয় এবং স্তন্যপায়ী কোষগুলি সংক্রমণ এড়াতে জিঙ্ককে ছত্রাক থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে।'
জিঙ্ক পরিপূরক বাদ
মার্কিন সরকারের এজেন্সি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ (এনআইএইচ) তাদের কোভিড-১৯ চিকিৎসার নির্দেশিকায় সাধারণ ডায়েট থেকে কোনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া জিঙ্ক পরিপূরককে বাদ দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে কোভিড-১৯ চিকিৎসার নির্দেশিকার প্যানেল করোনার চিকিৎসায় জিঙ্কের ব্যবহার নিয়ে পক্ষে বা বিপক্ষে পরামর্শ দেওয়ার অপ্রতুল তথ্য রয়েছে।
ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে ছোট করে দেখান বন্ধ করুন, টুইটারকে কড়া বার্তা কেন্দ্রের