করোনা আবহে ৯টি রাজ্যে বার্ড ফ্লুয়ের প্রকোপ, এই রোগের বিষয়ে সব কিছু জেনে নিন এক নজরে
করোনা আবহে ৯টি রাজ্যে বার্ড ফ্লুয়ের প্রকোপ
দেশে বিদ্যমান করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি বিলিতি কোভিডের দাপটে ওষ্ঠাগত দেশবাসীর প্রাণ। তার ওপর শিরে সংক্রান্তির মতো দেশের ৯টি রাজ্যে দেখা দিয়েছে বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। কেরল, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও হিমাচলে একশোরও বেশি পাখিকে কালিং করার কাজ চলছে, অন্যদিকে হরিয়ানার পাঁচকুলায় এক পোলট্রি খামারে পাখিদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পিআইবির এক জারি করা বিবৃতিত জানা যাচ্ছে যে হরিয়ানার পাঁচকুলার বারওয়ালাতে গত ২৫ দিনে মোট ৪,৩০,২৬৭ টি পাখি মারা গিয়েছে। মহারাষ্ট্রে সম্প্রতি সরকারিভাবে বার্ড ফ্লু নিশ্চিত করা হয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে মৃত কাক মুম্বইতে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। মহারাষ্ট্রের পারভানি জেলাতেও বার্ড ফ্লুয়ের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ৯ হাজার পাখিকে কালিং করা হচ্ছে পারভানিতে, লাটুর ও অমরাবতীতেও পাখি মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
বার্ড ফ্লু কী
বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা, যেটি বেশিরভাগ পাখিদের মধ্যেই দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ-এ ভাইরাসের কারণে এই ফ্লু হয়, যা বন্য ও পোলট্রি উভয় পাখিদের মধ্যেই সাধারণত প্রভাব ফেলে। যদিও এই ফ্লুয়ের কিছু কিছু প্রজাতি পাখিদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে, যা বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্যে দেখা যাচ্ছে। এই ভাইরাসের ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রেন রয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশ হাল্কা উপসর্গের এবং হাঁস-মুরগির ডিম উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এইচ৫এন১ ও এইচ৮এন১ স্ট্রেন ভাইরাসের সম্প্রতি প্রকোপে পাখিদের মৃত্যু হয়েছে।
এই ভাইরাস প্রথম ১৯৯৬ সালে চিনে দেখা যায়। এরপর গোটা বিশ্ব জুড়ে এই ভাইরাসের প্রকোপ ভিন্ন ভিন্ন সময় লক্ষ্য করা গিয়েছে। ভারতে ২০০৬ সালে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা যায় মহারাষ্ট্রের নন্দুরবারে।
এই ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়
হাঁস এবং গিজ জাতীয় বন্য জলজ পাখির মলত্যাগ, যা এ-ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বহন করে, এটা সংক্রমণের প্রাথমিক উৎস। এই ইনফ্লুয়েঞ্জা বহন করে নিয়ে আসে পরিযায়ী পাখিরা, যারা দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করে আসে এবং এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে পোলট্রি ও স্থলজ পাখির মধ্যে। শূকর, ঘোড়া, বেড়াল এবং কুকুরের মতো কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এটি কি মানবদেহে সংক্রমণ হতে পারে
হ্যাঁ এই এইচ৫এন১ ভাইরাস সংক্রমিত পাখির থেকে লাফ দিয়ে মানুষের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে। ১৯৯৭ সালে এইচ৫এন১ সংক্রমণ হংকংয়ে মানব দেহে দেখা গিয়েছিল, যেখানে পোলট্রি খামারের এক কর্মী সংক্রমিত পাখির থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে মানবদেহে বার্ড ফ্লুয়ের কোনও ঘটনা ভারতে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে সংক্রমিত পাখির সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিরা এই রোগ ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
এই রোগ কতটা গুরুতর
বার্ড ফ্লুতে মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশ। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতে বার্ড ফউয়ের ২২৫টি উৎসকেন্দ্র খুঁজে পাওয়া যায়। সেই সময় ৮৩.৪৯ লক্ষ পাখিকে কালিং করা হয় এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য এবং পোলট্রি কৃষকদের ক্ষতির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২৬.৩৭ কোটি ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়।
বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ, কেরল, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ ও কর্নাটকে বার্ড ফ্লুয়ের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পোলট্রি জাত খাদ্য মাংস ও ডিম সম্পূর্ণভাবে রান্না করে তবেই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।