কুষ্ঠ মুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন দৃষ্টিহীন জয়ন্ত, অংশ নিচ্ছেন কলকাতা ম্যারাথনেও
কুষ্ঠ রোগ এখনও আমাদের সমাজকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো দেশ এখনও এই রোগের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
কুষ্ঠ রোগ এখনও আমাদের সমাজকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো দেশ এখনও এই রোগের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। সারা পৃথিবীর মধ্যে মোট কুষ্ঠরোগীদের ৬০ শতাংশই ভারতের বাসিন্দা। এবং প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার জন মানুষ নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। যা অবশ্যই এক ভয়াবহ বিপদ।
এই রোগ নিয়ে নানাবিধ কুসংস্কার, মিথ, অজ্ঞানতা রয়েছে। যার ফলে এদেশে এখনও সকল কুষ্ঠ রোগীর সঠিক চিকিৎসা হয় না। এবং নানা কারণে তাদের সমাজে পিছিয়ে থাকতে হয় এবং ভয়ে ভয়ে বাঁচতে হয়।
এই সমস্ত কুষ্ঠরোগীদের সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে বেঁধে রাখতে এগিয়ে এসেছে এআইএফও নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই সংস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই কুষ্ঠ রোগীদের নিয়ে কাজ করে চলেছে। মূল লক্ষ্য অবশ্যই কুষ্ঠ দূরীকরণ। তবে এর পাশাপাশি যে সমস্ত কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগীরা সমাজে অবহেলিত তাদের পুনর্বাসন ও জীবনমান উন্নয়নও তাদের অন্যতম কর্মসূচির মধ্যে পড়ে।
এই স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার ডিরেক্টর হলেন জয়ন্ত। তিনি নিজে দৃষ্টিহীন। তবে তা সত্ত্বেও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি এগিয়ে চলেছেন। এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। শুধু কুষ্ঠরোগীদেরই নয়, জয়ন্তর এই সংস্থা বিভিন্ন বিষয় নিয়েই কাজ করে। এবং সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলেছে।
জয়ন্তই ওয়ান ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, কুষ্ঠ রোগীদের নিয়ে কাজ করা তাদের অন্যতম বড় দায়িত্ব হলেও এর পাশাপাশি তাঁরা মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়েও কাজ করেন। তাদের একটি দপ্তর রয়েছে বেঙ্গালুরুতে, অপর একটি দপ্তর রয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্য অসমের গুয়াহাটিতে। ঐক্যবদ্ধ ভেদাভেদহীন সমাজ গড়তেই তাঁদের স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা কাজ করে বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত।
ইআইএফও-র ডিরেক্টর জোস জানিয়েছেন, তাদের সংস্থা ইন্ডিয়া কেয়ারস এর সঙ্গে মিলে এবছরের কলকাতা ম্যারাথনে অংশ নিতে চলেছে। এর আগেও অংশ নিয়েছে। তাঁর মূল উদ্দেশ্য হল এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, বিভিন্ন কর্পোরেট সেক্টরের আধিকারিক, সরকারি প্রতিনিধি এবং সর্বোপরি সরকারের কাছে পৌঁছে যাওয়া ও সকলে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারত থেকে কুষ্ঠ দূরীকরণে কাজ করা। এবং কলকাতা ম্যারাথনের মতো এত বড় প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়ার সুযোগ তাই তারা হাতছাড়া করছেন না। এর মাধ্যমে তহবলি তৈরি করাই শুধু নয়, সামাজিক সচেতনতা তৈরি করাও জয়ন্তদের আরও একটি উদ্দেশ্য।
কলকাতা ম্যারাথন প্রতিবছরই হয় এবং এই ম্যারাথনের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন পেশা, ক্ষেত্রের মানুষকে একটি ছাতার তলায় আনা হয়। ইন্ডিয়া কেয়ারস সেই কাজটাই প্রতিবছর করে।
এবছর পঞ্চম বর্ষ পড়বে কলকাতা ম্যারাথন। অনুষ্ঠিত হবে ১৬ ডিসেম্বর। এই ম্যারাথনকে সামনে রেখেই আরও নতুন নতুন মানুষ এবং সংস্থার সঙ্গে আলাপ হবে। এবং তাদের হাত ধরেই ভারতকে কুষ্ঠ মুক্ত করা সম্ভব হবে। এই আশা এবং সঙ্কল্প নিয়েই এগিয়ে চলেছেন জয়ন্ত। আশা করা যায় তাঁদের এই প্রচেষ্টা সফল হবে। ভারতে একসময় কুষ্ঠ মুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে।