পাঞ্জাবে ঐতিহাসিক জয়, কর্নাটকে কেজরিওয়ালে দলে যোগ দিতে ইচ্ছুকরা ভিড় জমাচ্ছে
পাঞ্জাবে ঐতিহাসিক জয়, কর্নাটকে কেজরিওয়ালে দলে যোগ দিতে ইচ্ছুকরা ভিড় জমাচ্ছে
পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টির ঐতিহাসিক জয় প্রমাণ করে দিয়েছে যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ এখন আর কোনওভাবেই আঞ্চলিক দল নয়। দিল্লির পর আপের দখলে এখন পাঞ্জাবও। বিধানসভা নির্বাচনে আপের এই জয়ের পর কর্নাটকে দলের আহ্বায়ক পৃথ্বী রেড্ডির মোবাইল ফোন বাজা থামছেই না। তিনি একঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৩০টি করে ফোন পাচ্ছেন এবং অত্যন্ত খুশি হওয়া সত্ত্বেও রেড্ডি সব ফোনের উত্তর দিতে পারছেন না কারণ প্রচুর যুবক–তরুণ আপে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে কেজরিওয়ালের দলের দ্বারস্থ হয়েছেন। রেড্ডি অবশ্য জানিয়েছেন অনেকেই আপকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ফোন করেছেন, তবে বেশিরভাগ ফোনই আসছে আপে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং অনেকে আবার নির্বাচনে লড়তে চাইছেন।
আম আদমি পার্টিতে নাম লেখাতে ইচ্ছুক অনেকে
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রেড্ডি বলেন, 'পাঞ্জাব নির্বাচনের ফলাফল কর্নাটকে কংগ্রেসের মূলকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। অনেক কংগ্রেস নেতাই আমা ফোন করে আসন্ন বিবিএমপি ও বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির টিকিটে লড়তে চাইছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সজ্জন দ্বিতীয় সারির নেতা। অবাক করার বিষয় হল, হায়দরাবাদ-কর্নাটক (পুনরায় নামকরণ হয়ে হয়েছে কল্যাণ কর্নাটক প্রদেশ) প্রদেশের কিছু বিজেপি নেতাও বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট চেয়ে শুক্রবার আমার সঙ্গে দেখা করেন।' রেড্ডি জানেন বিজয়ীদের বহু বন্ধু তৈরি হয়ে যায় এবং তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ট অবগত ও সতর্ক। তিনি জানিয়েছেন রাজনীতিতে কেউ অস্পৃশ্য নন। রেড্ডি বলেন, 'আমাদের জন্য, কংগ্রেস বা বিজেপি বা জেডিএস নেতা ও কর্মীরা অস্পৃশ্য নন। সেখানে অনেক সৎ পুরুষ ও মহিলা রয়েছেন, যাঁরা যোগ দিতে পারেন। আমরা অবশ্যই তাঁদের স্বীকার করব, যদি তাঁরা সত্যিই গুরুত্ব দিয়ে দলে যোগ দেওয়ার কথা ভাবেন। আমরা সাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিপরায়ন মানুষদের দলে যোগ করাবো না।'
কর্নাটকে আপ ২০১৩ সাল থেকে সক্রিয়
২০১৩ সাল থেকে কর্নাটকে আম আদমি পার্টি সক্রিয় এবং রেড্ডি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এবং আপ-এর জাতীয় মুখপাত্রও। আপের প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল দক্ষিণের রাজ্যে নিয়মিত যাতায়াত করেন। পাঞ্জাবে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর, আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মান প্রাকৃতিক চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। বিবিএমপি নির্বাচনে আপ কর্নাটকে নিজেদের খাতা খোলার জন্য গুরুতর চেষ্টা করতে পারে। রেড্ডি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'কর্নাটকে বিজেপি সরকার এখন আতঙ্কে রয়েছে যে বেঙ্গালুরবাসী তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন। সসে কারণে তারা বিবিএমপি নির্বাচন করার জন্য এখনও প্রস্তুত নয়। তারা সুপ্রিম কোর্টের অজুহাত দেখিয়ে গা বাঁচাচ্ছে। তাদের সহজেই সরিয়ে ফেলা যায়। আসলে সুপ্রিম কোর্টও চায় নির্বাচন হোক।'
আপ বিবিএমপিতে জয় নিয়ে আশাবাদী
বেঙ্গালুরু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আপ প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। রেড্ডির আশা, 'বিশ্বের এই অন্যতম শহর পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। আমরা একটি নাগরিক-চালিত এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক প্রশাসনের একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করব। বিজেপি এবং কংগ্রেস দুর্নীতিবাজ আমলাদের সহায়তায় বিবিএমপিকে একটি বিশাল মাফিয়ায় পরিণত করেছে। আমরা যদি ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, উভয় দলকেই হারিয়ে দেব।' প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে আপ কর্নাটকে লড়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২৮টি আসনেই পরাজিত হয় আপ। সম্প্রতি সিভিক বডির নির্বাচনে আপ গোটা রাজ্যে একটি ওয়ার্ডে জয়লাভ করে নিজেদের খাতা এ রাজ্যে খুলতে সফল হয়।
কর্নাটকে দুর্নীতির সরকারের পতন ঘটাতে চায় আপ
'আমাদের অপমানজনক পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল অতীতে কারণ আমরা আমাদের নীতির সঙ্গে বোঝাপড়া করতে রাজি ছিলাম না। মানুষ এখন বুঝতে পারছেন যে আমরা পরিষেবা দিতে পারি। পাঞ্জাবের মতো গোটা রাজ্যে জয় অনেক বড় ব্যাপার। আণরা এখন আর শহর-কেন্দ্রিক দল নই। পাঞ্জাব একটি কৃষিপ্রধান রাজ্য। সকলে আমাদের ভোট দিয়েছে। গরীব থেকে বড়লোক, অশিক্ষিত থেকে উচ্চ শিক্ষিত, গ্রাম থেকে শহরবাসী, শিখ থেকে হিন্দু সকলে। যদি এটা পাঞ্জাবে হতে পারে, তবে একই জিনিস কর্নাটকে হওয়াও সম্ভব। পাঞ্জাব সরকার সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ন। আমরা তা বদলেছি। কর্নাটক সরকারও সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। আমরা এর শেষ করব। হয়ত তা আগামীকাল নয়। তবে অবশ্যই অদূর ভবিষ্যতে।' রেড্ডি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন। আপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে যারা শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল লাভের জন্য চালায় তাদের টিকিট দেওয়া হবে না। রিয়েল এস্টেট ও ঠিকাদারদেরও টিকিট না দেওয়ার জন্য স্থির রয়েছে আপ। রেড্ডি বলেন, 'কর্নাটকের মানুষ এই চার বিভাগের মানুষদের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করেন। আমরা এ ধরনের মানুষদের মনোরঞ্জন করব না।'
কর্নাটকের আপ কন্নড়বাসীদের জন্য
হিন্দি নাম দিয়ে আপ কি পারবে কন্নড়বাসীদের সঙ্গে তালমিল করতে? রেড্ডি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আপ কর্নাটক পুরোপুরি কন্নড় ও কন্নড় সমর্থক দল।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা কন্নড় দল। অনেক কন্নড় সমর্থক সংগঠন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হল কর্ণাটকের কন্নড় এবং কন্নড়বাসীদের প্রাধান্য। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ভারত একটি একতার দেশ এবং দিল্লি সরকারের উচিত সকলের উপর অভিন্নতা আরোপ করা বন্ধ করা। এটা আমাদের জাতির ভিত্তির বিরুদ্ধে এবং বিপর্যয়কর পরিণতি হতে পারে। আপ ভারতের বৈচিত্র্য বজায় রাখবে। কর্ণাটকের মানুষই কর্ণাটক শাসন করবেন। অরবিন্দ কেজরিওয়াল শাসন করবেন না।'