পুনিত রাজকুমারের অকাল মৃত্যুর পর হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে আতঙ্কিত রোগীর, নাজেহাল চিকিৎসকরা
পুনিত রাজকুমারের অকাল মৃত্যুর পর হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে আতঙ্কিত রোগীর
কন্নড় সুপারস্টার পুনিত রাজকুমার মাত্র ৪৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। তাঁর এই মৃত্যু দেশজুড়ে শোকের আবহাওয়া তৈরির পাশাপাশি নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতন হতে শিখিয়ে দিয়েছে। এর আগেও সেপ্টেম্বরে জনপ্রিয় টেলি তারকা সিদ্ধার্থ শুক্লাও মাত্র ৪০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই দুই তরুণ তারকার মৃত্যু দেশজুড়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এমনকী এখন নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবছেন বয়স্করাও। হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগে এখন চোখে পড়ার মতো ভিড়, সকলেই নিজেদের হৃদযন্ত্র ঠিক রয়েছে কিনা তা জানতে ইচ্ছুক।
আতঙ্ক ছড়িয়েছে সকলের মধ্যে
সোমবার সরকারি ছুটি থাকা সত্ত্বেও একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেখতে পান যে জরুরি বিভাগে রোগীরা বুকে ব্যাথা, বুক জ্বালা জ্বালা ভাব, হাতে ব্যাখা ইত্যাদির অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছে। ছুটির দিনেও স্বাভাবিক রোগীর চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী ভিড় জমিয়েছে। জয়দেব হাসপাতালের ডিরেক্টর ডাঃ সিএন মঞ্জুনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, 'বেঙ্গালুরুর জয়দেব হাসপাতালে একাই গত ১ নভেম্বর দুপুর ১টা পর্যন্ত ওপিডিতে রোগী ছিল ১৫০০ এবং মাইসোরে আরও হাজার রোগীর ভিড় ছিল। সাধারণত আমরা হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ৭৫টি কেস দেখি, কিন্তু রবিবার তা সাড়ে পাঁচশোতে গিয়ে থামে।'
বর্হিবিভাগ–ওপিডি ভর্তি রোগীতে
একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা স্বীকার করেছেন যে শুধু তরুণরাই নয়, বয়স্করাও তাঁদের স্বাস্থ্যের দ্রুত চেকআপ চাইছেন। অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির শীর্ষ চিকিৎসক ডাঃ প্রদীপ কুমার ডি বলেন, 'জরুরি বিভাগের পাশাপাশি হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ভিড় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বুকে ব্যাথার অভিযোগ নিয়ে মানুষ হাসপাতালে আসছেন এবং তাঁদের ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, টিএমটি টেস্ট ও কার্ডিয়াক এনজাইম সহ পরীক্ষাগুলি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। কিছুজন আবার করোনারি সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।' চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে এটা শুধুমাত্র ক্ষণিকের ঝটকা, অনেক রোগীরই মানসিক সমস্যা রয়েছে এই হৃদরোগ নিয়ে। ডাঃ মঞ্জুনাথ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, 'অনেকে এমন রয়েছেন যাঁদের হৃদরোগ সংক্রান্ত কোনও সমস্যাই নেই, কিন্তু তাও তাঁরা অভিযোগ নিয়ে আসছেন। এটা শুধুমাত্র হয়েছে পুনিত রাজকুমারের মৃত্যুর খবর অনবরত টিভিতে দেখার ফলে এবং হোয়াটঅ্যাপে কিছু ভাইরাল মেসেজের জন্য, যেখানে বলা হয়েছে বুকে বষাথা উঠলে তা এড়িয়ে না যাওয়ার জন্য।'
অধিকাংশ রোগীর বয়স ৪০
অ্যাপোলো হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ অভিজিত কুলকার্নি জানিয়েছেন যে অধিকাংশ রোগী আসছেন তাদের বয়স ৪০-এর কোঠায়। তিনি বলেন, 'এটা এই প্রথম নয়, চিরঞ্জীবি সারজা ও সিদ্ধার্থ শুক্লার মৃত্যুর পরও এই ভিড় হাসপাতালগুলিতে দেখা গিয়েছিল। যেদিন পুনিতের মৃত্যু হয় সেই রাতে আমাদের জরুরি বিভাগে কার্ডিয়াক সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে মানুষ ভিড় জমাতে থাকে।' ডাঃ রাজপাল সিং, ডিরেক্টর এবং ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ফর্টিস হাসপাতাল, তিনি বলেছেন, 'সরকারি ছুটি ঘোষণা করা সত্ত্বেও, আমি ব্যস্ত ছিলাম, ওপিডি ভর্তি ছিল, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি তরুণ রোগী তাদের হৃদরোগের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।'
আতঙ্কিত নয়, বরং হৃদযন্ত্রের যত্ন নিন
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে এ ধরনের আতঙ্কিত হওয়ার প্রতিক্রিয়াতে কেউ কোনও সহায়তা করতে পারবেন না। বরং, রোগীরা বছরভর চেকআপের মধ্যে যদি থাকে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে তবে কাজে দেবে। তরুণ হোক বা বয়স্ক, স্বাস্থ্যকর ডায়েটে থাকুন, শরীরের ওজন সঠিক রাখুন, ধূমপান বন্ধ করুন ও শরীরচর্চা নিয়মিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।