হাজার সংঘাত সত্বেও নবীন পট্টনায়ক মোদীর সঙ্গে ফণীর পরে হাত মেলালেন; দিদি কেন পারলেন না?
ঘোর নির্বাচনী মরশুমে সুপার সাইক্লোন 'ফণী' যে রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দেবে, সেকথা বোধহয় খুব অস্বাভাবিক ছিল না। ফণী-র পথে এযাত্রায় পড়েছিল পূর্ব ভারতের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ।
ঘোর নির্বাচনী মরশুমে সুপার সাইক্লোন 'ফণী' যে রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দেবে, সেকথা বোধহয় খুব অস্বাভাবিক ছিল না। ফণী-র পথে এযাত্রায় পড়েছিল পূর্ব ভারতের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ। এই দুই রাজ্যেই ক্ষমতা দখলের জন্যে প্রাণপাত লড়ছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর ফণী-র ফলে বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রের হাতে একটি বড় সুযোগ এসে যায় এই দুই প্রভাবিত রাজ্যের মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছে যাওয়ার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশেষ উদ্যোগ নেন ভুবনেশ্বর ও কলকাতার পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু ওড়িশার বিজু জনতা দল (বিজেডি) মোদীর সঙ্গে সহযোগিতা দেখালেও বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সে পথে হাঁটেনি; স্বাভাবিকভাবেই নবীন পট্টনায়কের প্রশংসা করেছেন মোদী; ক্ষুব্ধ হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে।
নবীন মোদীর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করলেন, মমতা করলেন না
সুপার সাইক্লোনে ওড়িশায় চল্লিশের উপরে প্রাণহানি ঘটলে মোদী সেখানে যান এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রী নবীনের সঙ্গে আকাশপথে ক্ষয়ক্ষতি দেখেন। পরে বিজেডি নেতাকে প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে এই দুর্দিনে তিনি ভালো কাজ করেছেন। প্রভাবিত উপকূলবর্তী রাজ্যটিকে আরও অর্থ সাহায্য করার কথাও বলেন। আর উল্টোদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিয়ে বলেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের ফোনই ধরেননি; জনসভা ইত্যাদির বাহানা দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফণী-র রিভিউ মিটিং।
ফের মমতাকে 'স্পিডব্রেকার' বলে কটাক্ষ করলেন মোদী
যদিও তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে কেন্দ্র রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। কেন্দ্র সেই অভিযোগ খারিজ করে পরে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী ফের মমতাকে "স্পিডব্রেকার" হিসেবে কটাক্ষ করেন। বলেন যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্যে উদ্বিগ্ন হলেও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও সহযোগিতাই করা হয়নি। এই প্রসঙ্গে মোদী মমতাকে নিশানা করে এও বলেন যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃণমূল নেত্রীর জমানায় সামান্য ব্রতপালনেও ভয় পাচ্ছেন।
নবীন মোদীর বিরাট গুণগ্রাহী নন, কিন্তু দায়িত্ব তাই বলে এড়িয়ে যাননি
নবীন পট্টনায়ক যে মোদীর বিশেষ গুণগ্রাহী তা নয়। পশ্চিমবঙ্গে যেমন মমতার একচ্ছত্র আধিপত্যের কাছে বিজেপি এখনও দুর্বল, তেমনি ওড়িশাতেও বিজেডি এখনও সর্বশক্তিমান দল যারা গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের মোট ২১টির ২০ই আসনই জেতে। বিজেপি যদিও স্থানীয় নির্বাচনে কিছু দাঁত ফুটিয়েছে এই দু'টি রাজ্যেই, কিন্তু বড় কোনও সাফল্য এখনও সেখানে তাদের অধরা।
মোদীর প্রতি তাঁদের অবস্থানে খুব হেরফের না হলেও নবীন কখনওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজনৈতিক আকচাআকচিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েননি। একটি রাজ্যের প্রশাসনিক মাথা হয়ে সেটা বেমানানও বটে। রাজনৈতিক সংঘাত যতই যাই থাক, সংবিধানের নীতি-আদর্শ মেনে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কাজ করাই রাজ্যের এবং কেন্দ্রের সর্বময় কর্তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে আর নবীন ও মোদী সেটাই করে দেখিয়েছেন। এতে কোনও রকম নির্বাচন-উত্তর সমীকরণের ইঙ্গিত দেখাও বেঠিক কারণ অতীতে বিজেপির হাত ধরে যথেষ্ট বিব্রত হওয়া নবীন ফের তাদের হাত ধরবেন, এমন ভাবাটা ভিত্তিহীন। বিজেপির কাছে হয়তো নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পড়ে ২১ আসন বিশিষ্ট ওড়িশায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে সেভাবে আগ্রহ না দেখানো নবীন গেরুয়া শিবিরে সামিল হয়ে পড়বেন, তা আশা করা যাচ্ছে না আপাতত।
বিপদের সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সহযোগিতা করে নবীন তাঁর গুরুদায়িত্বটি পালন করেছেন এবং তার জন্যে তিনি প্রশংসার্হ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সেই পথেই যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু তিনি তা করেননি।