করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের বড় শহর, শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও দ্রুত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা
শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও দ্রুত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা
দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ শহরাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর এবার গ্রামীণ ভারতেও তার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত ও হরিয়ানার বেশ কিছু গ্রামের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছে এবং সেখানে অন্য চিত্রই দেখা গিয়েছে।
মহারাষ্ট্র
এই মহামারি মহারাষ্ট্রের গ্রামের শিকড়ের ভিতকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অমরাবতী জেলার গ্রামের এলাকায় এখন শহরাঞ্চলের চেয়ে বেশি করোনা ভাইরাসের কেস দেখা দিয়েছে। জেলা কালেক্টর শৈলেশ নাওয়াল অনুযায়ী, অমরাবতীর শহরে মঙ্গলবার ২৪৯টি নতুন কেস রিপোর্ট হলেও অমরাবতী জেলার গ্রামগুলি থেকে ৯৪৭টি নতুন কেস সনাক্ত হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে অমরাবতীতে শহরে কোভিড সংক্রান্ত মৃত্যু হয়েছে ৫০৪ জনের এবং গ্রামগুলিতে ৫২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অমরাবতীর নতুন হটস্পট হিসাবে উঠে এসেছে বারুদ, অচলপুর, মোর্সি, অঞ্জনগাঁও সুর্জি এবং তিওয়াসার নাম। জেলা প্রশাসকের পরিক্লপনা রয়েছে এইসব এলাকায় কোভিড পরিষেবা কেন্দ্র খোলার। একইভাবে নাগপুর জেলার গ্রামগুলিতে করোনার তীব্রতা অত্যন্ত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ৫ মে, নাগপুর শহরে সক্রিয় করোনা কেসের সংখ্যা ছিল ৩৬,৬৪৮ এবং নাগপুরের গ্রামীণ এলাকায় সক্রিয় রোগের সংখ্যা দেখা গিয়েছে ২৯,৫৬৮টি। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, নাগপুর জেলার অন্তর্গত ১৪টি তেহসিলে ১১২টি কোভিড টেস্টের কেন্দ্র রয়েছে। গ্রামীণ হাসপাতাল ও বেসরকারি ল্যাব নিয়ে। নাগপুরে পজিটিভ করোনা রোগীর হার ১৮.০৬ শতাংশ বর্তমানে। তবে প্রশাসনের কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার ফলে পজিটিভ হার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
হরিয়ানা
হরিয়ানার রোহতক শহর থেকে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত তিতোলি গ্রাম, এখানে গত ১০দিনে ৪০ জন মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ফলে আতঙ্ক গ্রাস করেছে। পঞ্চায়েত সুরেশ কুমার এই খবর প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পর থেকে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগ গ্রামে তড়িঘড়ি করে ছুটে আসেন। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের টেস্ট করা হচ্ছে। যদিও গ্রামবাসীরা দাবি করেছেন যে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা পঞ্চায়েতের দাবি করা সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। রোহতকের উপ-মহকুমা শাসক রাকেশ সাইনি বলেন, 'গ্রামে মৃত্যুর পর গ্রামবাসীরা আতঙ্কে রয়েছেন। কোভিড টেস্ট করার জন্য আমরা বলেছি। তবেই স্পষ্ট হবে যে মৃতদের পরিবারের ক'জন করোনায় আক্রান্ত।'
উত্তরপ্রদেশ
বৃহৎ ইন্ডাস্ট্রিয়াল শহর কানপুর, এখানে কোভিড-১৯ কেসের বিপুল তীব্রতা দেখা গিয়েছে। ৫ মে এই শহরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাতে। যদিও গ্রামীণ এলাকা থেকে কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। কানপুর গ্রামীণ এলাকার তথ্য দিতে অস্বীকার করেছে সরকারি আধিকারিকেরা।
কোভিডের ছায়ায় শরীরেই বাড়ছে 'কালো ছত্রাক'! ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা শোনাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
গুজরাত
গুজরাত সরকার ৩৬টি শহরে ইতিমধ্যে নৈশ কার্ফু আরি করেছে। একদিকে প্রশাসন চেষ্টা করছে শহরে সংক্রমণের চেইন ভাঙার অন্যদিকে গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতি ক্রমশঃ বিগড়োচ্ছে। গুজরাতের গ্রামীণ এলাকাতে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল কর্মীর গুরুতর অভাব রয়েছে। গত ২০ দিনে ৯০ জনের কোভিড-১৯-এ মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছোঘাটে, যেটি ভাবনগর জেলায় অবস্থিত। এই গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গিরজাশঙ্করের মৃত্যু হয় করোনায়, যাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় গ্রামেরই শ্মশানে। এই গ্রামে কোভিড-১৯ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সুবিধাও যথেষ্ট নয় এই মহামারির সঙ্গে লড়াই করতে।