বাস্তব জীবনের ‘বধাই হো’, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর তিন সন্তানের মা হলেন ৫৫ বছরের মহিলা
বাস্তব জীবনের ‘বধাই হো’, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর তিন সন্তানের মা হলেন ৫৫ বছরের মহিলা
এই ঘটনা শুনলে আপনার 'বধাই হো’ সিনেমার কথা অবশ্যই মনে পরে যাবে। এই সিনেমায় বৃদ্ধা বয়সে নীনা গুপ্তা গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন, যা নিয়ে হুলস্থুল পড়ে যায় সমাজে। এখানেও এক ৫০ ঊর্ধ্ব মহিলা তিনটে যমজ শিশুর জন্ম দিলেন। কেরলের সিসি ও জর্জ অ্যান্টনি সত্যিই খুব আনন্দিত। তিন দশকের দীর্ঘ অপেক্ষার পর কেরল দম্পতি তিন যমজ সন্তানের গর্বিত অভিভাবক হলেন। গত ২২ জুলাই মুভাত্তুপুজার সাবিনে হাসপাতালে তিন যমজ সন্তানের জন্ম হয়। ৫৫ বছরের সিসি জানিয়েছেন যে তাঁদের প্রার্থনায় অবশেষে সাড়া মিলেছে।
৩৫ বছর পর মা হলেন ৫৫ বছরের মহিলা
সিসি বলেন, 'গত ৩৫ বছর ধরে, আমরা একটি সন্তানের জন্য প্রার্থনা করে এসেছি। ইশ্বর আমাদের সেই প্রার্থনার ফল হিসাবে তিনটে সন্তান দিয়েছেন। যেখানে এটা মনে করা হয় মা হওয়ার অর্থই সম্পূর্ণ নারী হওয়া সেই সমাজের অংশ হওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে নিঃসন্তান মহিলাদের ক্ষেত্রে।' প্রসঙ্গত, মা না হওয়ার যন্ত্রণা ও বেদনা সেই মহিলাই বুঝতে পারবেন যিনি এর মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। এটি একটি কঠিন এবং সবচেয়ে আবেগপ্রবণ অভিজ্ঞতা যা একজন নারী অতিক্রম করতে পারেন। ইরিনজালাকুদার বাসিন্দা সিসি ও জর্জ বলেন, 'আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুখকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম।'
একাধিক জায়গায় চিকিৎসা
সিসির স্বামী ৫৯ বছরের জর্জ অ্যান্টনি জানিয়েছেন যে এর চেয়ে আনন্দের বিষয় তাঁর কাছে কিছুই নেই। তিনি বলেন, 'গত ৩৪ বছর ধরে চিকিৎসা চলছিল, শুধু কেরলে নয়, বিদেশেও। জীবন যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু অবশেষে আমরা যা যা করেছি তার মূল্য পেয়েছি।' সিসি এবং জর্জের বিয়ে হয় ১৯৮৭ সালে। জর্জ যেহেতু গত ১৮ বছর ধরে গুল্ফে কাজ করতেন তাই সেখানেই তাঁরা বসবাস শুরু করেন। পরে জর্জ ও সিসি কেরলে ফিরে আসেন এবং নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন। বিয়ের ২ বছর পরই এই দম্পতি সন্তান হওয়ার জন্য বিভিনঞন চিকিৎসার খোঁজ শুরু করে দেন। বারংবার প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় জর্জ ও সিসি আর কোনও চিকিৎসা করাবেন বলে স্থির করেন।
সাবিনে হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু
গত জুন মাসে সিসির অনবরত রক্তপাত হতে থাকে। সিসি যখন কোচির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান, চিকিৎসকরা তাঁকে তাঁর জরায়ু বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে ওই চিকিৎসকদের মধ্যে একজন সিসিকে সাবিনে হাসপাতালে যেতে বলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সিসির সাবিনেতে চিকিৎসা শুরু হয়। এই সাবিনে হাসপাতাল বন্ধ্যাত্ব নিরাময়ের জন্য পরিচিত। সিসি জানিয়েছেন যে তিনি এর আগে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও হেলথ কেয়ারে গিয়েছিলেন কিন্তু সাবিনের অভিজ্ঞতা অন্যরকমের ছিল। তিনি বলেন, 'চিকিৎসার চারমাস পর আমরা সুখবরটি পেলাম। আমরা যখন জানতে পারি তিনটে যমজ সন্তান, তখন আমার স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ জানান যে আমি কোনওভাবে সফর করতে পারব না। আমরা সেইজন্য হাসপাতালের কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করি।'
২টি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়
গত মাসেই সিসি ২টি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। প্রসবের তিন সপ্তাহ পর মা ও শিশুদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে মা ও সন্তান উভয় সুস্থ রয়েছে। তিন সন্তানের গর্বিত মা সিসি বলেন, 'বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের পরামর্শেই আমরা এখানে চিকিৎসা করাতে আসি। আমাদের জীবনে এটা মাইল ফলক রচনা হল। ৫৫ বছর বয়সে মা হওয়া ইশ্বরের উপহার ছাড়া আর কি হতে পারে। যাঁরা মা হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন আমি বলব আশা ছাড়বেন না এবং চিকিৎসা বন্ধ করবেন না।'
মা হওয়ার জন্য বয়স শুধু সংখ্যা
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ত্রিপুনিতুরার বাসিন্দা সুজাতা সসেন্দরান ৫১ বছর বয়সে একই হাসপাতালে তিনটে শিশুর জন্ম দেন। সাবিনা হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টারের বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ও চেয়ারম্যান সাবিনে শিবাদসান বলেন, 'এটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। অত্যাধুনিক মেডিক্যাল প্রযুক্তিতে এখন বয়স শুধু একটা সংখ্যা। এটা আমাদের এখানে প্রথমবার আমরা ৫৫ বছরের মহিলাকে মা হওয়ার আনন্দ দিতে পেরেছি। আমরা জানি ৬২ বছরের মহিলাও মা হয়েছেন। যদি কোনও একের অধিক রোগ না থাকে তবে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা সম্ভব।'