৫৭ টাকা চুরির অভিযোগে ২৯ বছর কারাবাস!

সেটা ছিল খুনের মামলা। নিরীহ ছবি বিশ্বাসকে কলঙ্ক মাথায় নিয়ে কারাগারে পচতে হয়েছিল।
রুপোলি পর্দা ছেড়ে আসুন বাস্তবে। ৫৭ টাকা ৬০ পয়সা চুরির অভিযোগে কানপুরে ডাক দফতরের এক ছাপোষা কর্মচারীকে জেলে পচতে হল ২৯ বছর! প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেলেন বটে, কিন্তু ততদিনে তাঁর জীবনের ২৯ বছর চলে গিয়েছে খরচের খাতায়।
২৯ বছরে ৩৫০ শুনানি শেষে নির্দোষ
১৩ জুলাই, ১৯৮৪। ৬৯৭ টাকা মানি অর্ডার নিয়ে উমাকান্ত মিশ্র বেরিয়েছিলেন। ৩৯৭ টাকা নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছেও দেন। বাকি ৩০০ টাকা পৌঁছে দেওয়া যায়নি ঠিকানা বিভ্রাটের কারণে। নিয়ম মেনে তিনি সেই ৩০০ টাকা জমা দেন অফিসে। পরদিন হইচই। ডাক বিভাগের এক বড় কর্তা তাঁকে ডেকে বলেন, ৫৭ টাকা ৬০ পয়সার কোনও হিসাব নেই। উমাকান্তবাবু এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলায় আরও রেগে যান ওই কর্তা। চুরির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সেই থেকে ঠিকানা ছিল কানপুরের জেল। ২৯ বছর ধরে ৩৫০টি শুনানি হলেও উমাকান্তবাবুকে দোষী প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত, গত ২৫ নভেম্বর তাঁকে বেকসুর খালাস করে দেয় আদালত।
কারাগারের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে উমাকান্তবাবুর প্রতিক্রিয়া, "জেলের ভিতর মরে গেলেই ভালো হত। এখন আমার ৬৩ বছর বয়স। চাকরি সেই ২৯ বছর আগে গিয়েছে। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা কিছু পাব কি না, জানি না। বিনা দোষে এতগুলো দিন বন্দী থাকতে হল। আগে কতবার চিৎকার করে বলেছি, আমি চোর নই। কেউ কথা শোনেনি। যদি চুরি করার মতলব থাকত, ৩০০ টাকাই সরাতাম। শুধু ৫৭ টাকা ৬০ পয়সা সরাতে যাব কেন?"
উমাকান্ত মিশ্রর স্ত্রী গীতাদেবীর কথায়, "ওঁর এই অবস্থার জন্য আমারা শেষ হয়ে গিয়েছি। ছেলেমেয়েদের ভালো করে লেখাপড়া শেখাতে পারিনি। পাড়ার লোকের চাঁদায় মেয়ের বিয়ে দিতে হয়েছে। তবে, একটাই সান্ত্বনা, চুরির কলঙ্ক থেকে আমরা মুক্তি পেলাম।"