লোকসভায় কংগ্রেসের রাশ অধীরের হাতে; তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা বিশ বাওঁ জলে গেল?
ব্যাপারটিকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বললেও কম বলা হয়। মঙ্গলবার, ১৮ জুন, সপ্তদশ লোকসভায় কংগ্রেস দল তাদের দলনেতা হিসেবে ঘোষণা করল বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর নাম।
ব্যাপারটিকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বললেও কম বলা হয়। মঙ্গলবার, ১৮ জুন, সপ্তদশ লোকসভায় কংগ্রেস দল তাদের দলনেতা হিসেবে ঘোষণা করল বহরমপুরের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর নাম। আগেরবারের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবারের নির্বাচনে হেরে যাওয়াতে এবং অধ্যক্ষ রাহুল গান্ধী ওই পদ গ্রহণ করতে রাজি না হওয়াতে অধীরের উপরেই দায়িত্ব বর্তায়। কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা হেরে যাওয়াতে বা রাজ্যস্তরে নেতৃত্ব দিতে ব্যস্ত থাকাতে ৬৩ বছরের অধীরের উপরেই ভরসা রাখতে বাধ্য হয় শীর্ষ নেতৃত্ব। অধীর ১৯৯৯ সাল থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর থেকে টানা জিতে আসছেন আর এবারে তাঁর জয়ের ব্যবধান কমলেও শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই; এমনকি কংগ্রেসের অতীব দুর্দশার দিনেও।
অধীরের এই নয়া পদে আসার পিছনে কি শুধু তাঁর সিনিয়রিটিই দেখা হয়েছে?
অধীরকে রাজ্যের কংগ্রেস প্রধানের পদ থেকে সরিয়েছিল হাইকম্যান্ড
বোধহয় না। গত বছর সেপ্টেম্বরে যখন নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী শক্তিরা এবছরের লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে জোট তৈরির নানা ফন্দিফিকির করছেন, তখন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গে একটি বড় বদল আনেন। অধীর তখন রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে সোমেন মিত্রের হাতে দায়ভার তুলে দেওয়া হয়। "আমি এই সিদ্ধান্তে বিচলিত হইনি; শুধু আমাকে একটু জানিয়ে দিলেন পারতেন শীর্ষ নেতৃত্ব," মন্তব্য করেন বর্ষীয়ান এই নেতা। অধীরকে সরিয়ে দেওয়ার প্রধান কারণ ছিল তাঁর মমতা-বিরোধিতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে অধীর আগাগোড়াই সরব আর তাই তাঁর উপস্থিতিতে যে জোট করা সম্ভব হবে না, সেটা বুঝেই তাঁর জায়গায় আনা হয় সোমেন মিত্রকে। যদিও সোমেনও মমতার বিরোধী কিন্তু অধীরের মতো কট্টর মমতা-বিরোধী অবস্থান খুব কম নেতারই রয়েছে।
এবারে কি তাঁর বিজেপিতে যাওয়া আটকাতে অধীরকে কেন্দ্রে দায়িত্ব দিল কংগ্রেস?
তাঁর প্রতি দলীয় নেতৃত্বের এই পদক্ষেপে অধীর যে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন না, তা বোঝা যায় তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, এমন কানাঘুষোতেও। অধীরকে রাজ্য কংগ্রেসের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে তাঁর কাছাকাছি এক সূত্রের মতে জানা গিয়েছিল যে অধীর সবরকম রাস্তাই খোলা রাখছেন। আর যেহেতু বিজেপি বঙ্গে এক বড় মমতা-বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে, তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে তাঁকে বিজেপিতে যোগ দিতে হলেও তিনি পিছপা হবেন না, এমনটাই শোনা গিয়েছিল নানা সূত্রের মুখে।
অধীর যদি সত্যি সত্যিই বিজেপিতে চলে যান, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের শেষ প্রদীপটুকুও নিভে যাবে তো বটেই (কংগ্রেসের আসন সংখ্যা এখন রাজ্যে দুই), পাশাপাশি সংসদেও কংগ্রেস কমজোরি হয়ে পড়বে অভিজ্ঞতার খাতিরে কারণ দলের পুরনোরা হয় অবসরপ্রাপ্ত নয়তো নির্বাচনে হেরেছেন। এই বাজারে পুরোনো চালের মতো পাঁচবারের সাংসদ অধীরের গুরুত্ব যে বাড়বে বই কমবে না, সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
অধীর কেন্দ্রে তৃণমূলের সঙ্গে কিরকম সম্পর্ক তৈরী করেন, সেটাই দেখার
তবে অধীরের এই নয়া পদের ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কে শৈত্য দেখা যেতে পারে কেন্দ্রে। বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও অবস্থান নিতে হলে যে সমন্বয়সাধন প্রয়োজন, তাতে বাধ সাধতে পারে অধীরের উপস্থিতি। সপ্তদশ লোকসভায় তৃণমূলের উপস্থিতি আগেরবারের চেয়ে দুর্বলতর হবে আর সেখানে বিরোধী ঐক্যের প্রয়োজন পড়লেও অধীর তৃণমূলকে কতটা গুরুত্ব দেবেন তা দেখার বিষয়। আর কেন্দ্রে অধীর-তৃণমূল ব্যবধান না কমলে আখেরে লাভ হবে বিজেপিরই। মোদী ইতিমধ্যেই অধীরের পিঠ চাপড়ে তাঁকে "যোদ্ধা" বলে প্রশংসা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসাক্ষেত্রে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল সম্প্রতি, তা কাটাতে সাহায্য করার জন্যে মোদীকে চিঠি লেখেন অধীর। অর্থাৎ, তিনি যে কেন্দ্রের শাসকদলের সঙ্গে মমতার মতো সংঘাতের পথে যাবেন না, তা পরিষ্কার। আর এখানেই মমতার প্রতি বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন 'বহরমপুরের রবিনহুড'।