পর্যাপ্ত করোনা টিকা থাকলেও ডোজ নেওয়ার লোক অমিল, ভ্যাকসিন নিয়ে নয়া দ্বিধা ভারতে
পর্যাপ্ত করোনা টিকা থাকলেও ডোজ নেওয়ার লোক অমিল, ভ্যাকসিন নিয়ে নয়া দ্বিধা ভারতে
করোনা মহামারির সময় ভ্যাকসিন কবে আসবে তা নিয়ে দেশবাসীর রাতের ঘুম উড়েছিল, আর এখন ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও ঘাটতি নেওয়ার লোকের। দেশে ভ্যাকসিন শট পর্যাপ্ত রয়েছে কিন্তু তা নেওয়ার লোকের অভাব দেখা দিয়েছে।
দ্বিধায় স্বাস্থ্যকর্মীরা
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে শুরু হয়েছে করোনা ভ্যাকসিন ড্রাইভ। যা বিশ্বের মধ্যে বৃহৎ। কিন্তু ভ্যাকসিনগুলি তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পূর্ণ না করায় তার সুরক্ষা ও কার্যকারিতা কতটা হবে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে দেশবালীর মধ্যে আর সেইজন্যই কিছু স্বাস্থ্য কর্মী ও সামনের সারির কর্মীরা ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করছেন। বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় কোভিড-১৯ প্রকোপ ভারতে সোমবার মাত্র ৫৬ শতাংশ মানুষ এই ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য এগিয়ে এসেছেন। টিকাকরণের হার যদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি না করা হয়, তবে ভারত জুলাইয়ের মধ্যে দেশের ৩০ কোটি নাগরিক বা জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশকে টিকাকরণের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে ধাক্কা দেবে এবং অর্থনীতি যা আবার ফিরে আসছিল সেই আশাকেও ধ্বংস করে দেবে।
সংশয় বাড়ছে ভারতীয়দের মধ্যে
পাটনা এইমসের চিকিৎসক বিনোদ কুমার বলেন, 'এখানকার ৪০ শতাংশ চিকিৎসক এখনও অনিশ্চিত এবং অপেক্ষা করতে চান।' তিনি এও বলেন, 'ভারতে যখন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘাটতি রয়েছে তখন আমাদের ওপর ভ্যাকসিন ট্রায়াল করা কোনও ভালো দিক বলে মনে করছি না।' জাপান ও ব্রাজিলেও ভ্যাকসিন গ্রহণে দ্বিধা দেখা গিয়েছে এবং তথ্য নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন চিনের ভ্যাকসিন প্রার্থীরাও তবে ভারতের এই সমস্যা সবচেয়ে বড় বলেই মনে হচ্ছে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিনের অভাব রয়েছে তা গ্রহণ করার লোকের চেয়ে, এই দুই দেশে এই সমস্যাই প্রধান এবং কিছু দেশ দিল্লির থেকে এ বিষয়ে সহায়তা চেয়েছে। ভারত জানিয়েছে, তারা রপ্তানির জন্য প্রতি মাসে ৫০ কোটি শট তৈরি করবে এবং ব্রিটেন, বেলজিয়াম ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলি সেই শট কিনতে চায়।
চিকিৎসকরা নিতে চাইছেন না করোনার টিকা
ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন কার্যক্রম দু'টি ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। প্রথমটি সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ায় প্রস্তুত হওয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএলসি ভ্যাকসিন এবং দ্বিতীয়টি হল কোভ্যাকসিন, যা হায়দরাবাদের বেসরকারি সংস্থা ভারত বায়োটেকের। সরকারের গবেষণা সংস্থা ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন বিকাশে সহায়তা করার জন্য ভারত তাতে অনুমোদন দেয়। কিন্তু এই ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ তথ্য সামনে না আসার ফলে বিজ্ঞানীদের একাংশের থেকে সমালোচিত হয় সরকার। দিল্লির এআইআইএমএসের চিকিৎসক আদর্শ প্রতাপ সিং বলেন, 'আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠান কোভ্যাকসিনের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য নয় কারণ আমরা এর কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছুই জানি না। মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর জন্য সরকারকে অবশ্যই তথ্য, ট্রায়ালের প্রমাণ এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ আলোচনার জন্য উৎসাহ করা উচিত।' সংস্থা এবং সরকার উভয়ই করোনা শটকে রক্ষা করছে।
টিকা নিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের আবেদন
ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান কৃষ্ণা ইল্লা আগে বলেছিলেন, 'সংস্থার কাছে ২০০ শতাংশ সৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রমাণ রয়েছে এবং ১৬টি সুরক্ষিত ও কার্যকরী ভ্যাকসিন উৎপাদনের ট্র্যাক আছে।' ৪ জানুয়ারী ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনের সমালোচনা খারিজ করে তিনি বলেছিলেন, 'ভারতীয় বিজ্ঞানীরা অন্যান্য ভারতীয় বিজ্ঞানীদের উপর চাপ দিতে চান।' সরকারের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যকর্মীদের আর্জি জানানো হয়েছে যে সংশয় কাটিয়ে তাঁরা যেন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন এই শট নেওয়ার জন্য করোনো যোদ্ধাদেরকে অনুরোধ করে টুইট করেছেন, এবং এই ভ্যাকসিনটি বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে এমন গুজব খারিজ করে দিয়েছেন। নীতি আয়োগের সদস্য ভিকে পাল জানিয়েছেন যে কোনও প্রতিকূল ঘটনা ছাড়াই তিনি কোভ্যাকসিনের শট নিয়েছেন। ভিকে পাল বলেন, 'স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ভ্যাকসিন দ্বিধার অবসান হওয়া উচিত, আমি সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করছি, দয়া করে এটি গ্রহণ করুন, কারণ ভবিষ্যতে এই মহামারী কি রূপ নেবে তা কেউ জানে না।' তিনি এও বলেন, 'এই দু'টি ভ্যাকসিন সুরক্ষিত। এটি ট্র্যাক করার জন্য আমাদের একটি সিস্টেম রয়েছে এবং যদি কোনও অস্বাভাবিক সঙ্কেত থাকে তবে এটি যেভাবে হওয়া উচিত তার প্রতিক্রিয়া জানানো হবে'।
সোমবার পর্যন্ত টিকাকরণ হয়েছে ২০ লক্ষের
সোমবার পর্যন্ত দেশে ২০ লক্ষ জন শট গ্রহণ করেছেন। মধ্য ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য মধ্যপ্রদেশে ২১ শে জানুয়ারী প্রায় ৭৫% নিবন্ধিত লোক টিকা নিতে এসেছিলেন, এর ২দিন পর বিহারে অনেক কমজন মাত্র ৫১.৬ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করে। ১৯ জানুয়ারি রাজস্থানে ৫৫ শতাংশ ভ্যাকসিন গ্রহণ করে এবং ৫৪ শতাংশ তামিলনাড়ুতে।
মিশন একুশে বিজেপির লক্ষ্য কলকাতা জোনের ৫১ আসনে, কোর কমিটিতে বিরাট চমক